একশত বছর পর
মাসুদুল হক
🕐 ১:৫৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৫, ২০১৯
একশত বছর পর দেখা হচ্ছে, অথচ দেখিনি তোমাকে।
মনে হচ্ছে তোমাকে আমন্ত্রণের উৎসববাজির মঞ্চ থেকে
আরোহণের বেদিতে স্থাপনের সময়টুকু স্থির করে রাখি মহাকালে...
সে সময়কার উজ্জয়িনী লাল-সবুজ পতাকার গর্বোদ্ভাসিত ঘূর্ণন
পাকিস্তানি সেনাচক্রের ধ্বংসোন্মুখ লেলিহান স্বাদ
ভেঙে-ভুঙে চুরমার করে দিচ্ছে আর তোমার দৃঢ়
পায়ের চলন, শারীরিক গতি ব্যক্তিত্বে সঞ্চারিত মুখম-লের
ভাষা। বাঙালির ঐতিহ্যবিধৃত অস্তিত্ব থেকে জাগিয়ে দিচ্ছে
হাজার বছরের হৃদয়পুরাণের আশা
তোমাকে দেখিনি কিন্তু আজ হচ্ছে দেখা
একশত বছর পর আমার ভেতর জেগে ওঠা চেতনার মঞ্চে
তুমি এক প্রেরণাদাতা মূর্তিমান প্রতিভা
তুমি এলে আমার মধ্যে বেজে উঠছে সহস্র তারের সুরবিভা।
তোমার চিৎকার ওঠে বজ্রকণ্ঠে, তখন সেই বাংলায়, তোমার ধ্বনিতে মানুষ জাগে
জাগে রাজপথ, জাগে শ্রমিক-জনতা, কৃষকপল্লী
জাগে নদীজল, এমন কী খাল, নৌকা, লগি আর বৈঠা
তোমার কথায় স্বপ্ন দেখে মানুষ, পাখি, মেঘমাদল বাঙালি
আদিবাসী, লোকসংস্কৃতির বিস্তীর্ণ প্রান্তর, গ্রামবাংলার
নড়িখড়ি ঘর, জয়নুলের ‘ব্রহ্মপুত্র’ জসিমউদ্দীনের
‘রূপাই’, শামসুর রাহমানের ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’ আর শত শত মুখ।
তখন বেঘোর বাঙালি বোঝেনি তুমি দিব্য শুধু ভেবেছো প্রেরণা...
তোমার আহ্বানে, অঙুলি হেলনে আর পরামর্শে
সামুদ্রিক শিলা থেকে পার্বতী শিলার মধ্যে যত খাঁজ আছে
আছে যত চড়াই-উতরাই, যত বাংলার জলাভূমি, যত
বনরাজিলীলা, জাতিগোষ্ঠী, নগর-বন্দর, ঘাট-প্রান্তর
স্থল-জলস্থলী, ভিটা-বাড়ি আর মুক্তি আশের ধ্যানী বাঙালি
মুগ্ধতায় জীবন দিয়ে জীবন গড়তে গেছে যুদ্ধে
সমতার ছিল না সে যুদ্ধ। লোহার দৈত্যের কাছে বাঙালির
লাঠিপুরাণ মুগ্ধপ্রাণ আয়োজনে দিয়েছে প্রেরণা
তোমার অমোঘ বাণী। “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
একশত বছর পর দেখা হচ্ছে, অথচ দেখিনি তোমাকে।
তোমাকে তো সেই কবে থেকে চিনি। বাঙালিকে যেদিন চেনা
বাংলা ভাষায় উজ্জয়নী ‘মা’ ডাকের মধুরতায়
তুমি তো সেই বঙ্গপর্যটক, প্রাচীন নাবিক
বাঙালির স্বপ্নের ফেরি নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছ হাজার বছর
পরাধীনতার খুনিচিত্রের স্মৃতিবহা দু’চোখ তোমার
তারপরও দেখেছো স্বপ্ন হাজার বছরের বধির বদ্বীপে
অমাবস্যার ঘোর কাটিয়ে নিয়ে এসেছো জ্যোতির্ময় স্বাধীনতা
তোমাকে তো সেই কবে থেকে চিনি
একশত বছর পর দেখা হচ্ছে তোমার জন্মদিনে, অথচ দেখিনি তোমাকে।