ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

সেলেস্টিয়াল বডিজ

ওমানি সাহিত্যের প্রভা

মীম মিজান
🕐 ১২:২৪ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০১৯

চলতি বছরের অনুবাদ ফিকশন গ্রন্থের ওপর ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছেন ওমানি ঔপন্যাসিক জোখা আলহারছির উপন্যাস ‘সেলেস্টিয়াল বডিজ’। উপন্যাসটি আরবি উপন্যাস ‘সাইয়্যেদাতিল কামার’-এর ইংরেজি ভাষান্তর। ২৮ মার্চ ২০১৯ দ্য ন্যাশনাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয় উপন্যাসটির রিভিউ। লিখেছেন মারসিয়া লিনাক্স কুয়ালে। বাঙলায়ন করেছেন মীম মিজান।

২০১০ সালে যখন জোখা আলহারছির দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশ হলো, তখন এটা জানা হলো, এক প্রধান সাহিত্য মেধার উদয় হয়েছে। মূলনাম সায়্যিদাতুল কামর (শশীর ললনা) এখানে ঠাসা বুননে ১৮৮০ সাল থেকে একবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভকাল পর্যন্ত ওমানি পরিবারের সামগ্রিক বিষয়াদি আলোচিত হয়েছে। মারিলিন বুথ কর্তৃক ২০১৮-তে যা সেলেস্টিয়াল বডিজ বা স্বর্গীয় দেহগুলী নামে অনূদিত হয়। আর হঠাৎ করেই সেই বইটি সাড়া ফেলে দেয় পাঠকমহলে।

২০১৯ সালের জন্য আন্তর্জাতিক ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার জন্য ১৩টি গ্রন্থের দীর্ঘ তালিকায় স্থান পায় গ্রন্থটি। আর আলহারছি এ পর্যন্ত উপসাগরীয় বা আরব্য ছয়জন লিস্টেড লেখকের মধ্যে অন্যতম।

উপন্যাসটি যখন ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটি কোন ‘ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতা’ কিংবা ‘স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক’ সরলধারার পথাবলম্বী নয়। বইটি ঐতিহাসিক আবেদনময়তাকে আর সুখকর সমাপ্তিকে নিন্দা করেছে। ব্যক্তি চরিত্রগুলো উপহাস্য হয়েছে যখন রোমান্সকে পৃথিবী উপলব্ধির মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে। যখন মায়াকে তার পতি আবদুল্লাহ জিজ্ঞেস করল, সে কি তাকে ভালোবাসে, মায়ার উত্তর ছিল : ‘এটা কি মিসরীয় সিনেমা, তারা কি তোমার মনন খেয়ে নিয়েছে?’

সেলেস্টিয়াল বডিজ (স্বর্গীয় অবয়বগুলো) প্রকৃতপক্ষে কখনই ‘সুখকর সমাপ্তি’কে তুলে ধরে না। যদিও অতীত-বর্তমানের পুনঃমূল্যায়ন চলমান। আর যখন গ্রন্থটি আমাদের বলে না যে কীভাবে বিষয়গুলো বেরিয়ে আসছে, খুবই নিপুণভাবে উদ্বেগ তৈরি করে ‘আহা!’ মুহূর্তে, চরিত্রগুলো যখন সম্যকরূপে বুঝতে পারে তাদের অতীত।

ইতিহাসের শক্তি
প্রত্যেক চরিত্র-নারী অথবা পুরুষ, দাস অথবা মুক্ত-নিজেদের ফাঁদে দেখতে পায়, কোন উপায়ে, ইতিহাসের দ্বারা। এখনো তারা স্বাধীনতার লড়াইয়ে জড়িত। মায়া নিজেকে তার মেয়ে ‘লন্ডন’-এর নামে জাহির করছে, তার পরিবারের কানাঘুষা সত্ত্বেও। এখনো এই নামটি তার মেয়েকে ওমানি ইতিহাস থেকে মুক্ত করতে পারেনি। যুবতী ও অপ্রকৃতস্থ, সে নড়াচড়া করতে পারে না, তাই বসে বসে থাকে। তার বিবাহ-বিচ্ছেদের পর আখ্যানটি জিগ্যেস করে : ‘কিন্তু লন্ডন ক্যানো এক জায়গায় জমে থাকে? এটাকে পৃষ্ঠার ভারের নিচে দুমড়ে যেতে দাও! যতক্ষণ না সে এটাকে উল্টোতে পারে?’

অন্যান্য চরিত্রগুলো কখনই পাতা উল্টোনের চেষ্টা করেনি; তাদের অতীত অবজ্ঞা করা সত্ত্বেও।

মায়ার বোন খাওলা রাখঢাক রোমান্স পছন্দ করে। আর তার বাহ্যত একটি সুখী বিয়ে হয়েছে। কিন্তু মধ্যবয়সে এসে খাওলার ভেতরে ‘বুনো জঙ্গল’ জেগে ওঠে। চমৎকারভাবে তার ওপর আগের জড়ানো ভালো দিকগুলো উন্মুক্ত হয়। চরিত্রগুলো তাদের অতীত দুঃখগাথাকে আবৃত করতে চায়, যদিও ব্যথার কণ্টক ফুটে ওঠার নানা পথ খোঁজে। এটা ওমানের দাসত্বের ইতিহাসের মতোই। উপন্যাসের মূল পরিবারের দুটি পূর্বপুরুষ বা উত্তরসূরি আছে : একজন ব্যবসায়ী হিলাল যে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা করে প্রতিপত্তি পেয়েছে। যার ছেলে ব্যবসায়ী সুলায়মান। হিলালি আগে দাস ছিল। অপরজন সেনঘর যাকে তার গ্রামের বাইরে ধরে জাহাজে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে ওমানে বিক্রি করার আগে একজন ইংরেজ বাগানীর কাছে বেঁচে দেওয়া হয়েছিল।

প্রায়শই চরিত্রগুলো নিজেদের ও অন্যদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ওমানে দাসপ্রথা অবৈধ। যেটি সর্বশেষ দেশ যে দাসপ্রথাকে বাতিল ঘোষণা করেছে। যার শেষ হয় ১৯৭১ সালে। এখনো উভয় প্রকার চরিত্রের উত্তরসূরিদের মধ্যে চরম বিরোধিতা চলমান যারা দাসপ্রথা চালু করেছিল আর যারা দাস হয়েছিল।

ওমানকে উন্মুক্তকরণ
এমনকি বীরত্বপূর্ণ পর্বও ফাঁদ হতে পারে। মায়ার কেতাবি বোন আসমা খালিদকে বিয়ে করেছিল। খালিদ একজন চারুশিল্পী যে তার বাবার উচ্চাকাক্সক্ষা থেকে পলায়নের যজ্ঞে ব্যস্ত। খালিদের বাবা তাকে প্রায়শই স্মরণ করিয়ে দেয় যে : ‘তার পিতামহ শেখ মনসুর বিন নাসির ছিলেন সেসব অশ্বারোহী সৈন্যের মধ্যে অন্যতম যারা মুতলাক ওয়াহাবীকে পরাস্ত করেছিল বারবার ওমানের উপর আক্রমণে।’ ‘সে এমন একটা যুদ্ধের মধ্যে ছিল যেখানে ওমানিদের ওপর নৃশংসভাবে কৃপাণ চালানো হয়েছিল। তাদের হাত বাঁধা ছিল। আর তাদের ওপর কালের আঁধার নেমে এসেছিল। নারীকুল যোদ্ধাদের হাতকে পানিতে সিক্ত করেছিল যতক্ষণ না তারা তাদের কৃপাণ ত্যাগ করে।’

এটা খুব চমৎকার একটা চিত্রকল্প, কিন্তু খালিদের জন্য একটা বন্দিশালা, যে কায়রোতে বসবাসরত অবস্থায় ঘোড়ার ছবি আঁকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করত। তাকেও ওমানে ফেরানো হয়েছে।

 
Electronic Paper