ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বহুরূপী বাংলার ছায়া

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম
🕐 ২:৩৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১২, ২০১৯

প্রায় আড়াই বছর হতে চলল ‘অর্ধনারীশ্বর’ দেখেছিলাম। দেবরাজ নাইয়া নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এটি। ছবির দৈর্ঘ্যে নিশ্চয়ই এটি স্বল্প আয়ুর, কিন্তু এর যা ক্যানভাস এমনকি এর রেশ তা কোনোভাবেই স্বল্প নয়, বলা যেতে পারে অনেক বড় দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্রের চেয়ে এর পরিধি বিশাল। বহুরূপীর দৈনন্দিন জীবন আর মাতৃছায়ার অপূর্ব এক সমন্বয়ের এ চলচ্চিত্রটি তাই দীর্ঘদিন পরও মনে জাগরূক হয়ে থাকে।

 

চলচ্চিত্রে দৃশ্যের কথা বলা হয়ে থাকে, যেরকম কবিতায় দৃশ্যের জন্ম, আর অর্ধনারীশ্বর চলচ্চিত্রটিজুড়ে যেন আমাদের এরকম দৃশ্যের অবতারণ, তা আজ বিশেষত এপার বাংলায় যদি নির্মিত দৃশ্যও মনে হয়, আদতে রাঢ় বাঙলার যে ঐতিহ্য আর সংস্কৃতি তারই যেন স্মৃতিচারণ, হয়তো কাঁটাতারের ওপারে আজও এমনই দৃশ্য হয়, দেবরাজ নাইয়া তা এঁকে দিয়েছেন তার চলচ্চিত্র খাতায়। পরিচালক দেবরাজের সঙ্গে এ চলচ্চিত্র নিয়ে অল্প কথা হয়েছিল, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা যেমন পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, কর্মক্ষেত্রের থেকে এই চলচ্চিত্র নির্মাণের জগৎটার যে দূরত্ব তার ভেতরও এই স্বপ্নভূক যুবক ঐতিহ্য আর অনুভবের জায়গায় স্পর্শকাতর।

তাই অর্ধনারীশ্বরকে তিনি যখন বহুমাত্রিক ব্যাখ্যার দিকে ছেড়ে দেন, আমরা দেখতে পাই চৈত্রের শেষদিন আর বৈশাখের প্রথম দিন, বর্ষশেষ আর শুরুর এই ব্যতিব্যস্ত মুহূর্তের রঙিন যে গ্রাম-বাংলা, সেখানে এক বহুরূপী, শিব এবং পার্বতী উভয়কে ধারণ করে বেড়িয়ে পড়েন উপার্জনের আশায় এবং দিনশেষে ঘরে ফিরে এই বহুরূপী লোকটি তার একমাত্র মেয়ের টুকরো হাসির জন্য প্রকাশ করেন নিজের ভেতর মাতৃসত্তাকে, মাতৃরূপকে, এই নির্মাণ সহজ নয়, ব্যক্তির পক্ষে, পরিচালকের ভাবনার পক্ষেও। পুরো চলচ্চিত্রজুড়ে দেবরাজ যেন গল্পকথক, উৎসবের মুহূর্তগুলো খুঁটিনাটি বলে বেড়ান, আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, এই ছিল, এই আছে, এই বাঙলা। তার দৃশ্যের বিন্যাস, কত্থকের ভূমিকায় যে স্বর বেরিয়ে আসে, তা আসলে চলচ্চিত্রটিকে কাব্যিক নির্মাণের দিকে নিয়ে যায়। আমাদের মনে রাখতে হবে, দেবরাজ নাইয়া প্রথমত কবি। ষোলো মিনিটের এ চলচ্চিত্র শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রেশ ফুরায় না। আমার এক শিক্ষক বলেছিলেন, দৃশ্যের সফল নির্মাণ একটি সামগ্রিক চলচ্চিত্রকেও হারিয়ে দেয়। দূরে কোথাও কীর্তন হচ্ছে, মেঘের আড়াল থেকে ভেসে আসছে চৈত্র শেষের চাঁদ। আমি এই দৃশ্যের কথা বলছি, তিতাস পাড়ে জ্যোৎস্নার বুনন দেখা আমি এর সঙ্গে একাত্ম বলে হয়তো, না হয় আরও কত দৃশ্য বলা যেত এই ষোলো মিনিটের থেকে।

আমি চলচ্চিত্র থেকে দূর জগতের মানুষ এবং চলচ্চিত্র একটা প্রচুর জানাশোনার জায়গা। ফলে এই অর্ধনারীশ্বর নামক চলচ্চিত্র ক্যানভাসটির সঠিক মূল্যায়ন হয়তো সম্ভব নয় আমার পক্ষে, কিন্তু হয়ে ওঠা কবিতার মতোই হয়ে ওঠা এ চলচ্চিত্রের কথা, মুগ্ধতার কথা না জানালে অন্যায় হবে।

দেবরাজ নিশ্চয়ই অনেকদূর যাবেন, ইতোমধ্যে তার আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘ভয়েস অব সাইলেন্স’ এর সেলুলয়েড কাব্যিকতা অনেককেই মুগ্ধ করেছে, সে যাত্রা দীর্ঘতর হোক, এটুকু আশা।

 
Electronic Paper