ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রক্তাক্ত ধ্বংসযজ্ঞে যিনি শিল্প আঁকেন

সাইদ রহমান
🕐 ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ০৮, ২০১৯

তাম্মাম আযযাম একজন সিরিয়ান আর্টিস্ট। জন্ম সিরিয়ার দামেস্কে ১৯৮০ সালে। দামেস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা অনুষদে তৈলচিত্রের ওপর অধ্যয়ন করেন। আযযামের কাজের প্রাথমিক দিকটি হলো তিনি তার শিল্পকর্মে অভিযোজন করেন এমন সব চিত্রকর্মে যা মানুষ সহজেই অনুধাবন করতে পারে, যেগুলো মানুষ খোলা চোখে প্রতিনিয়ত দেখছে সেসব বিষয়ে গভীর চিন্তার উদ্রেক ঘটায় তার চিত্রকর্ম।

সিরিয়া সংকটের শুরুর দিকে, আযযাম আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে সিরিয়ায় ঘটা নির্মমতার চাক্ষুষ প্রমাণ দিতে ডিজিটাল মাধ্যম ও গ্রাফিক আর্ট ব্যবহার করেন। তার ওইসব কাজগুলো ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় যা ডিজিটাল মিডিয়া ও গ্রাফিক আর্টে তার উদ্ভাবনী সৃজনশীলতা ও আগ্রহকে নির্দেশ করে।

তিনি অদ্ভুত সব বিষয় সবার সামনে এনেছেন তার ডিজিটাল আর্ট ও পথ শিল্পের মাধ্যমে, যা শক্তিশালী প্রতিবাদের মাধ্যম। ২০১৩ সালের শুরুর দিকে আযযাম সাড়া বিশ্বের শিরোনামে পরিণত হন তার ‘ফ্রিডম গ্রাফিতি’ শিল্পকর্মের জন্য, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালে পরিণত হয়। সম্প্রতি তিনি তার আঁকা ছবিতে এমন সব চিত্ররূপ ব্যবহার করেছেন যা মানুষকে এক অনন্য চিত্রকল্পের দিকে মনোনিবেশ করতে তাড়িত করে। তার ক্যানভাসের শিল্পকর্ম তাকে পরিচয় করিয়েছে বিধ্বংসী এক বিশাল জগতের সঙ্গে, যা থেকে বাদ যায়নি তার স্বদেশ। দামেস্ক শহরের যুদ্ধবিধ্বস্ত দালান কোঠাই হয়ে উঠেছে তার ক্যানভাসের প্রাণ।

গোস্তাভ ক্লিমটের বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্যা কিস’ অভিযোজন করে দামেস্কের একটি আবাসিক ভবনের সামনে আকা সোনালি হলুদ রঙের চিত্রটিকে নবরূপ দান করেছেন যা এখন বুলেটের আঘাতে হয়েছে ধূসর কালো এবং ক্ষতবিক্ষত। ওই সময় কিছু লোক বিশ্বাস করেছিল, কেউ হয়তো সিরিয়ার আবাসিক ভবনের দেওয়ালে ঘনিষ্ঠ চুম্বন দৃশ্যটি এমনিতেই এঁকেছেন। যাই হোক, মানুষ দেখছিল তাম্মাম আযযামের সত্যিকার ‘ফোটোমনটেজ’ চিত্রটি। ‘ফ্রিডম গ্রাফিতি’ হচ্ছে সিরিয়ান মিউজিয়াম ফটো সিরিজের জন্য তার দীর্ঘমেয়াদি কাজের একটি অংশ।

এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমি উদ্ভাবন করেছি অনেক নতুন নতুন পদ্ধতি। এ ছাড়াও স্থাপনার কাজে ব্যবহৃত বস্তু সামগ্রী ব্যবহার করে শিল্পকর্ম তৈরি করতে পরীক্ষা- নিরীক্ষা করছি কিন্তু আমি অধিক পছন্দ করি ক্যানভাসে আঁকা তৈলচিত্র।’ সিরিয়া বিদ্রোহ তাম্মামের জীবন ও কাজ সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। বিদ্রোহ শুরুর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর ২০১১ তিনি নোটিস পান এবং বাধ্য হন সিরিয়ান নিয়মিত সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে।

এক সাংবাদিক আযযামকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘অনেক বেশি বিনাশ কি অনেক বেশি সৃষ্টিশীলতার পেছনের কারণ?’ উত্তরে তাম্মাম আযযাম বলেছিলেন, ‘সম্ভবত, এটা আপনার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে শিল্পীরা চায় তাদের বাস্তবতাকে ধারণ করতে যা তারা দেখে।’ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আযযাম কিছু একক ও যৌথ প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায়। যেমন, বাইয়েনাল ডেল সূর, ক্যারাকাস (২০১৭), ফর-সাইট ফাউন্ডেশন, সানফ্রান্সিসকো (২০১৬, ২০১৭), ইউরোপিয়ান ক্যাপিটাল অফ কালচারাল প্যাফোস, প্যাফোস (২০১৭), সিটি মিউজিয়াম অফ অডেনবার্গ, ওলডেনবার্গ (২০১৭), কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়াজগুলো মাঝে আছে, ‘দ্যা রোড’, ‘ইউনিভার্স’, ‘ব্রেকিং নিউজ’। তবে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছিল ‘ফ্রিডম গ্রাফিতি’ যার মাধ্যেমে সারা বিশ্বে তিনি সমাদৃত হন।

 

 
Electronic Paper