ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কমলা ভট্টাচার্য একমাত্র নারী ভাষাশহীদ

সাইদ রহমান
🕐 ১২:২৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯

কমলা ভট্টাচার্য। যিনি বাংলা ভাষার জন্য আত্মদানকারী একমাত্র নারী ভাষাশহীদ। কমলা একসময়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করে এবং সঙ্গে টাইপ রাইটিং শিখে চাকরি করে তার বিধবা মায়ের দুঃখ দূর করবেন।

কমলা যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী, বরাক উপত্যকা তখন উত্তাল ভাষার সংগ্রামে। অভাব-অনটনে বড় হওয়া কমলা মনে মনে তখন ভীষণ লড়াকু। সরকারের ভাষানীতির বিরুদ্ধে সেও হয়ে ওঠে সোচ্চার। আসামের বরাক উপত্যকায় আন্দোলন চলছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যেহেতু ওই অঞ্চলের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল বাংলাভাষী।

১৯৬০ সালের এপ্রিলে, আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটিতে অসমীয়া ভাষাকে প্রদেশের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবের সূচনা হয়। এতে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। অসমীয়া উত্তেজিত জনতা বাঙালি অভিবাসীদের আক্রমণ করে। জুলাই ও সেপ্টেম্বরে সহিংসতা যখন উচ্চরূপ নেয়, তখন প্রায় ৫০ হাজার বাঙালি হিন্দু ব্রক্ষ্মপুত্র উপত্যকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। অন্য ৯০ হাজার বরাক উপত্যকা ও উত্তর-পূর্বের অন্যত্র পালিয়ে যায়।

১০ অক্টোবর, ১৯৬০ সালের সেই সময়ের অসমের মুখ্যমন্ত্রী অসমীয়াকে আসামের একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাব উত্থাপন করেন। উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক রণেন্দ্রমোহন দাস এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু ২৪ অক্টোবর প্রস্তাবটি বিধানসভায় গৃহীত হয়।

ঘটনাক্রমে ১৯ মে, ১৯৬১ বরাক উপত্যকায় হরতাল আহ্বান করা হয়। এদিকে হরতালের আগের দিন রাতে করিমগঞ্জে ব্যাপক ধর-পাকড় চালায় পুলিশ, হামলা হয় গণপরিষদের কার্যালয়ে। পুলিশের এই মারমুখী আচরণে ফুঁসে ওঠে করিমগঞ্জ। জনতা বেরিয়ে আসে রাস্তায়।

১৯ মে সকাল থেকে সর্বত্র হরতাল পালিত হতে থাকে। শিলচরে রেলস্টেশনে সেদিন ভোর থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আন্দোলনকারীরা। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানায়। দোকানপাট যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। দুপুরের দিকে আন্দোলনের ব্যাপকতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে রাজ্য সরকার। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়ে সত্যাগ্রহ এ আন্দোলনে।

এতে ঘটনাস্থলেই শহীদ হন ১১ জন, আহত হন অন্তত অর্ধশতাধিক। সেখানেই বাংলা ভাষার জন্য প্রথম নারী হিসেবে শহীদ হন ১৬ বছরের কিশোরী কমলা ভট্টাচার্য।

সেদিনের স্বপ্ন দেখা মেয়েটার চাকরি আর করা হয়নি কিন্তু মাধ্যমিকে সে ঠিকই পাস করেছিল। জানা যায়, তার রেজাল্ট নিয়ে বিধবা মা আর্তনাদ করে প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ের মতো স্বাধীন দেশের মানুষের হাতেই প্রাণ যাবে গো তোমার সন্তানের।’ স্বাধীন দেশে ১৯ মে ভাষা আন্দোলনের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। কমলার আত্মদান বৃথা যায়নি। কমলাসহ সেই ১১ জন শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাকে আসামের সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় সরকার।

 

 
Electronic Paper