ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

যেখানে উপেক্ষিত প্রচ্ছদশিল্পীরা

রাজিব দত্ত
🕐 ১২:৩৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৯

সময় বদলে যাচ্ছে, বদলে যাচ্ছে বইমেলার ধরনও। ছোট্ট জায়গা থেকে আজ বিশাল পরিসীমায় মেলা হচ্ছে, এ বড় আনন্দের। বই প্রকাশ সম্পর্কিত সকলেই মেলার প্রহর গুণেন।

বইমেলা এখন আর লেখক, প্রকাশক কিংবা পাঠকের মেলা নয়। এটা এখন আমাদের আবেগের জায়গা। সেখানে কীভাবে প্রচ্ছদশিল্পীরা কেন উপেক্ষিত থাকে জানি না।

মেলার আগে একজন কবি-লেখক-প্রকাশকের বাইরে একজন প্রচ্ছদশিল্পীও অধীর আগ্রহ নিয়ে থাকে। কোনো শিল্পী বিশেষ বিশেষ প্রস্তুতি নেন, সময় বের করে রাখেন বইয়ের জন্য। কিন্তু কে তাকে খোঁজে? কেউ না। অথচ একজন প্রচ্ছদশিল্পী বাংলার নিজস্ব সংস্কৃতি তার মুনশিয়ানা দিয়ে ফুটিয়ে তোলে।

একটা বইয়ের প্রচ্ছদ কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল শিল্পরুচির লোকজনই বলতে পারেন। একটা পাণ্ডুলিপিকে এক জায়গায় নিয়ে আসার যে অমানুষিক পরিশ্রম করেন একজন প্রচ্ছদশিল্পী তার কতটুকুই বা মূল্যায়ন করতে পারি আমরা? শুধু মেলার কথাই বলছি না, এ অনুযোগ চিরদিনের। মেলা আমাদের যেমন উৎসাহ বাড়িয়ে দেয় তেমনি আক্ষেপও বাড়িয়ে দেয়।

এবারের মেলার নতুন নতুন সংযোজন আমাকে আপ্লুত করেছে। যেখানে ছিমছাম পরিবেশ, উন্মুক্ত জায়গা সবই আছে। ‘লেখক বলছি’ নামে নতুন মঞ্চ সংযোজন। অথচ এখানে আরও কিছু থাকতে পারত প্রচ্ছদশিল্পী, প্রকাশক এমনকি একজন বাইন্ডারও। সবার স্বপ্নের ফসলই তো বইমেলা! নির্বাচিত বইয়ের প্রচ্ছদের পদর্শনীও রাখতে পারে মেলা কর্তৃপক্ষ।

আসলে প্রচ্ছদশিল্প ব্যাপারটা পেশাগত দিক থেকে তৈরি হয়নি বাংলাদেশে। প্রকাশনা ব্যবসার মতোই অপেশাদার। যার কারণে এখানে ভালো প্রচ্ছদশিল্পী তৈরি হয়নি। কোনো শিল্পীই প্রচ্ছদ তৈরি করাকে নিরাপদ আশ্রয় মনে করেন না। আমাদেরও তো জীবন। দুটি খেয়ে-দেয়ে বাঁচতে হয়। একজন প্রচ্ছদশিল্পী মেলাকেন্দ্রিক শত শত বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকেন, অথচ তার ভাণ্ডারে আসে নামমাত্র পয়সা। এ দিয়ে কি হয়?

একটা পেইন্টিংয়ের দাম যেখানে পাঁচ-দশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। সেখানে প্রচ্ছদের ক্ষেত্রে কেনো এত কম পারিশ্রমিক পান জানি না।

একজন লেখক তার বইয়ের বিক্রির ওপর রয়্যালিটি পার, ওই বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে একজন প্রচ্ছদশিল্পীরও কি কিছু পাওয়ার থাকে না? একটা বইয়ের প্রচ্ছদকার হিসেবে বইয়ের একটা কপিও তো আশা করতে পারে একজন শিল্পী। তাও হয় না। কিন্তু অনেক দেশে প্রচ্ছদশিল্পীদের অবস্থান অনেক ওপরে।

একজন প্রচ্ছদশিল্পী তখনই বিখ্যাত হন যখন লেখক বিখ্যাত। যেমন হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রচ্ছদ করার কারণে ধ্রুব দাকে (ধ্রুব এষ) সবাই চেনে-জানে। কিন্তু অন্যরা? কতজন চেনে-জানে তাদের? তারা কি মানসম্মত প্রচ্ছদশিল্পী নন? আমাদের এখানে বিখ্যাত লেখক বা জনপ্রিয় লেখক কম বলেই এমনটা ঘটে।

যাই হোক, এসব হতাশার কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমার মেলা নিয়েই কথা বলি। যেহেতু আমি যৎসামান্য কবিতা লিখি সেহেতু মেলায় ঢুকেই আগে কবিতার বই-ই দেখি। বিশেষ করে তরুণদের। লিটলম্যাগ চত্বরে থাকা হয় বেশি। এবার একটু ব্যতিক্রম, কারণ লিটলম্যাগ চত্বরের এ করুণদশা আমার চোখে কখনই দেখিনি।

এতটা নির্জীব, শ্রান্ত-ক্লান্ত কখনই কাম্য ছিল না। একাডেমি প্রাঙ্গণে লিটলম্যাগ চত্বর না রাখাটাই ভালো ছিল। এরপর মেলাতেই ঘুরি, নানারকম বই দেখি। প্রচ্ছদের ভালো-মন্দ দিক চোখ এড়াতে পারে না।

কতশত ভালো প্রচ্ছদের মাঝে কতশত নিম্নমানের প্রচ্ছদ দেখি তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নানারকম আক্ষেপ-হতাশার মধ্য দিয়ে কেটে যায় বইমেলা। অথচ শুরুর আগে বা শুরুতে মনের ভেতর উৎফুল্লতা কাজ করে, মেলা শেষে তা ক্লান্ত হয়ে যায়। এবার আমি নিজেও খুব বেশি প্রচ্ছদ করিনি। শুধু অতি অনুরোধ থেকে কিছু করেছি। যেটা অন্যবারের তুলনায় ক্ষীণ। ইচ্ছে করে না খুব একটা। কেন যেন বিতৃষ্ণা কাজ করছে...কতটুকু পাচ্ছি কিংবা কতটুকু দিচ্ছি এসব ভেবে।

 
Electronic Paper