ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ভালোবাসার বন্ধু

কুলদা রায়
🕐 ১:০৮ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৯

২৫ জানুয়ারি ফেসবুকে প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচ্ছদ প্রকাশ করেছিলেন অনু হোসেন। একটি বাক্য লিখেছেন, ‘অভিমত চাই সম্মানিত ভালোবাসার বন্ধুদের কাছে!’

প্রচ্ছদটি কেমন হয়েছে সেই অভিমতই জানতে চাইছেন। কাদের কাছে জানতে চাইছেন? বন্ধুদের কাছে। কেমন বন্ধু? ভালোবাসার বন্ধু। যারা তাকে ভালোবাসেন। তিনিও তাদের ভালোবাসেন। শুধু কি ভালোবাসা? না, ভালোবাসার সঙ্গে তিনি তাদের সম্মান করেন।

অসামান্য এই বাক্যটি। একালে এই বাক্যে বিশ্বাস করেন এমন মানুষ পাওয়া ভার- অন্তত বাংলাদেশে। তিনি, লেখক গবেষক অনু হোসেন, সেই বিরল মানুষের অন্তর্গত ছিলেন। মাস দুয়েক আগে কলকাতায় তিনি কোমো নিয়েছেন। ৩০ জানুয়ারি সকালে ঢাকায় একটি হাসপাতালে তার অপারেশন হলো। তার বন্ধুরা ফেসবুকে লিখলেন, ‘অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে’। সবাই খুব খুশি। বিকাল থেকে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হলো। বন্ধুরা আবার প্রার্থনায় বসেছে। তাদের আর্তি মর্মস্পর্শী। এর মধ্যে ডাক্তার বলে দিয়েছেন, তার শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কাজ করছে না। যে কোনো মুহূর্তে চলে যেতেন পারেন। 

এক বন্ধু তার কাছে গেলে শেষবারের মতো মৃদু গলায় অনু হোসেন জানালেন, প্রকাশিতব্য ‘সমকালে রবীন্দ্রনাথ’ বইটির ফাইনাল পাণ্ডুলিপিটা দেখতে চান। দেখলেনও। হাসলেন। তারপর শান্ত সমাহিত চিত্তে চলে গেলেন গভীর ঘুমে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, বন্ধুরা হাত তুলে তাকে ফিরে আসতে বলছেন। কোনো মিরাকলের আশা করছেন কাঁদতে কাঁদতে-প্রার্থনা করতে করতে। এই হাহাকার অসহনীয়। চোখে জল এনে দেয়।

পয়লা ফেব্রুয়ারি ভোরে অনু চলে গেলেন। ফেসবুকে সম্মানিত ভালোবাসার বন্ধুদের প্রতিটি অক্ষরের ওপর শুরু থেকেই চোখ মেলে রেখেছিলাম। বারবার মনে হচ্ছিল, রবীন্দ্রনাথের কথা। তার মেজো মেয়ে রানী চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে বাবা রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে বলছে, পিতা নোহসি বলো, পিতা নোহসি। বাবা রবীন্দ্রনাথের মুখ থেকে স্ত্রোত্রটি শুনতে শুনতে মেয়ে রানী চলে গেছে অনন্ত লোকে।

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম আমার নেই। কিন্তু আমার নিজের ঈশ্বর আছেন। তাকে আমি দেখি। তিনিও আমাকে দেখেন। তিনি আমার সখা ঈশ্বর। দুজনে এক পাতে ভাত খাই। আমি তার অংশ। তিনি আমার অংশ। এই আমি, তুমি, তোমরা- এই মাটি, আলো, হাওয়া, জল, প্রাণ ও অপ্রাণ-সবই তিনি। তিনিই আমার মা-তিনিই আমার পিতা। আমার সন্তানও তিনি।

প্রিয় সম্মানীত ভালোবাসার বন্ধু, অনু হোসেন, ভাই আমার-আপনি আমাদের পিতার কাছে চলে যাচ্ছেন। ‘পিতা’ ঈশ্বর আপনাকে তার সুকোমল বুকে তুলে নিচ্ছেন। বলছি, পিতা নোহসি, পিতা নো বোধি...।

 
Electronic Paper