ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

এতো যে রক্ত

সুশান্ত মজুমদার
🕐 ১২:১১ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০১৯

টিনের ছাউনি থেকে বেরিয়ে উঠোনের পাতাভর্তি গাছের ছায়ায় বৃদ্ধ বসেন। দীপু তার পাশে। তার আসার উদ্দেশ্য বৃদ্ধকে সে আগেই খুলে বলেছে। এত দিনে তিনি বেঁচে আছেন, দেখা পেয়েছে সৌভাগ্য। বয়সের কষ্ট উপেক্ষা করে তিনি স্মৃতি খোঁড়াখুঁড়ি করেন।

দেপাড়া গ্রামের লোহার পুল পেরিয়ে বাঁদিকে বাবার বলা বাড়িটা দীপু ঠিকঠিক খুঁজে পেয়েছে। একাত্তরে রমজান মাসে এই বাড়িতে এক রাত কাটিয়ে সন্তোষপুর স্কুলের ক্যাম্পে তিনি ফিরে যান। বাবা চান, মুক্তিযুদ্ধ দিনের ঘাঁটি, লড়াইয়ের জায়গা, কোথায় আশ্রয় পেয়েছেন, সব ছেলে খুঁজে পেতে দেখুক।

অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর বৃদ্ধ যেন জেগে ওঠেন-‘হ। মনে পড়িছে। আমার ছোট মাইয়েডা রাত জাইগে মুক্তিগো জন্যি রান্না করিছিল। খাওন হয় সেহেরির টাইমে। তাইলে ওই রাইতের মুক্তিগো মধ্যি কম বয়সী কচি মুখের ছেলেডা, সেই ছিল তোমার বাপ।’ দীপুর মাথায় কাঠি আঙ্গুলের স্নেহের ছোঁয়া রাখার পর বৃদ্ধের বুকের খাঁচা থেকে উঠে আসে দীর্ঘশ্বাস-‘কী যে হইলো। শয়তান-ট্যাটন, পুরনো দালাল-রাজাকার, তাগো গুষ্টির এহন কী দাপট, চোটপাট।’

বৃদ্ধের ভাঁজপড়া নিস্তেজ মুখে সহসা আলো দেখা গেল। হতাশা সরিয়ে কণ্ঠে জেগে ওঠে জোর ‘মরনের আগেও বিশ্বাস রাখি, অতো রক্ত খরচের মুক্তিযুইদ্ধো মুছবে না। ক্যামনে মোছে। মাটি খুঁইড়েলেই যে দেশে মানষ্যিও হাড্ডিগুড্ডি মেলে। দিন বদলাবে। এত বছর পর এই যে টানে টানে তুমি আইছো। অন্যরেও আসপে।’

 
Electronic Paper