ঢাকা, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩০ ভাদ্র ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

শিক্ষা ও ধর্মীয় ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ

মো: নুরুল আমিন
🕐 ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০২৩

শিক্ষা ও ধর্মীয় ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১) সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন ও ধর্মীয় সংস্কার নিয়ে ভাবতেন। একটি উন্নত সমাজ বিনির্মাণে ও কুসংস্কারমুক্ত জাতি গঠনে শিক্ষা ও ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর অনবদ্য রচনা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়।  ৩১ বছর বয়স থেকেই শিক্ষা নিয়ে ভাবা শুরু করেন এই শিক্ষা সংগঠক।

তিনি মনে করেন, ‘শিক্ষা হচ্ছে চিন্তা ও কল্পনা শক্তির বিকাশ।’ শিক্ষা যেন পাঠ্যবই নির্ভর না হয়, সে দিকে খেয়াল রাখার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন বই বেশি বেশি পড়ার প্রতিজোর তাকিদ দেন। এক্ষেত্রে তিনি পুথিঁগত শিক্ষার পরিবর্তে প্রকৃত শিক্ষা চর্চার বিষয়ে জোর তাগিত দিয়েছেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করেন, পুথিঁগত বিদ্যা প্রকৃত শিক্ষা নয়। প্রকৃত শিক্ষা তাই, যা মানুষ নিজের চিন্তা-চেতনা শক্তি থেকে শিখে। প্রকৃতপক্ষে এ শিক্ষায় মানুষের স্থায়ী হয়। তিনি শিক্ষা লাভের জন্য প্রকৃতির ছায়া ঘেরা পরিবেশ মনের বিকাশের উপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির আহবান জানান। বিশ্বপ্রকৃতি মানুষের প্রকৃত শিক্ষালাভের স্থান। মানুষ এ প্রকৃতি থেকেই ধীরে ধীরে শিখছে অজানা অনেক কিছু। আর প্রকৃতিও যেন মানুষদের শিখাতে কোন কৃপণতা করে না। এ ধরনের উপস্থাপনা এসেছে কবির ‘ঝুলন’ নামক কবিতায়। প্রকৃতির অনবদ্য সৌন্দয থেকে মানবতার যে বিশেষ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে তার বিবরণ ‘সুখ’ নামক কবিতায় কবি উল্লেখ করেছেন। ‘আজি মেঘমুক্ত দিন; প্রসন্ন আকাশ/হাসিছে বন্ধুর মতো; সুমন্দ বাতাস/মুখে চক্ষে বক্ষে আসি লাগিছে মধুর। আনন্দের সাথে শিক্ষা গ্রহণে তাঁর চিন্তা আজও প্রশংসিত। শিক্ষা উন্নয়নে ও বিস্তরণে রবীন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে কলকাতায় ‘ব্রক্ষবিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ১৯২১ সালে ওই স্থানে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৯৫১ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে। ১৯১২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুরুল গ্রামে কুঠিবাড়িটি ক্রয় করে সেখানে ‘বিশ্বভারতীয়’ দ্বিতীয় শিক্ষাপ্রাঙ্গন হিসেবে স্থাপন করেন ‘শ্রীনিকেতন’। দরিদ্রদের শিক্ষা সুযোগদানে ১৯৩৬ সালে সেখানে স্থাপন করেন ‘লোক-শিক্ষা সংসদ’। ১৯৩৭ সালে ‘শিক্ষাচর্চা’ নামে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করেন। এভাবে এ মহান শিক্ষানুরাগী ও বিদ্যোৎসাহী রবীন্দনাথ শিক্ষা সংস্কার, বিস্তার ও উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। ধর্ম মানুষকে সত্য ও সুন্দর পথে ধাবিত করে। ধর্ম মানুষকে মুক্তি দেয়। সামাজিকভাবে সুখী ও সমৃদ্ধ জীবন যাপনে উৎসাহিত করে। কিন্তু ধর্মান্ধতা ও পরধর্মে নিন্দা এ দুটি ব্যধি সমাজকে ধ্বংস ও বিশৃঙ্খলার দিতে ধাবিত করে বলে তিনি মনে করেন। ধর্মীয় উন্মাদন প্রতিরোধে ও পরধর্মের প্রতি উদারতা প্রকাশের আহবান জানিয়ে তিনি লিখেছেন ‘ধর্ম প্রচার’ র্শীষক কবিতাটি। এ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ধর্মাজ্ঞ ও ধর্মান্ধদের উপহাস করেছেন। তিনি মানব কল্যাণ ও মানব উন্নয়নে এবং সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলার সুফল বয়ে আনতে ধর্মচর্চার আবশ্যকাতার বিষয়ও এ কবিতায় আলোকপাত করেছেন। রবীন্দ্রনাথ এভাবে বাঙালি সমাজকে পশ্চাৎপদতা থেকে বের করে ধর্মীয় সকল অনুশীলন যথাযথ পালন করার আহবান জানিয়ে একটি সুশৃঙ্খল ও সুস্থ সমাজ বিনির্মাণে ভূমিকা রেখেছেন। পরিবার ও সমাজ ত্যাগ করে ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণে তিনি নিরুৎসাহিত করে ‘ধর্মপ্রচার’ কবিতায়।

মো: নুরুল আমিন
অধ্যক্ষ
প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী কলেজ, রায়পুর, লক্ষপুর।

 

 
Electronic Paper