ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ইঁদুরখালের ধান

গল্প

আনিফ রুবেদ
🕐 ৬:২৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০৯, ২০১৮

ধান কাটা হয়ে গেছে। কেটে নেয়া ধানগাছের গোড়াগুলো জমির গায়ে লেগে গেছে। গোছা গোছা কাটার মতো ধানগাছের গোড়ালি। ধান কাটা হয়ে গেছে একথা বলা হয়েছে আর আঁটিসহ ধান নিয়ে চলে গেছে যার যার জমি। জমিতে ছোট ছোট সোনার কুঁচির মতো ঝরা ধান পড়ে আছে। সোনালি পোকার মতো কোনো কোনো ধান ছোট ছোট গর্তের ভেতর লুকিয়ে রয়েছে, কোনো কোনো সোনার মতো ধান জমির ওপর বসে থেকে হাসছে। ধানগাছের গোড়ালিগুলো, ঝরে পড়ে থাকা ধান আর ধানী জমি ধীরে ধীরে কথা বলে।

এদের সাথে কথা বলতে বা এদের কথা শুনতে বা এদের বিচ্ছেদ ঘটাতে ওরা আসছে। ওরা চারজন আছে। চারজনের বাড়ি চারপাড়ায়। ওদের আসা শেষ হলে বোঝা যাবে আরও কী ঘটতে যাচ্ছে। এই ফাঁকে কয়েকটি ইঁদুর বেরিয়ে সোনার কুঁচিগুলোকে তাদের সাদা দাঁতের সাথে সহবাস করার লোভ দেখায়। জমিতে বসে হাসতে থাকা সোনালি পোকার মতো ধানগুলো ইঁদুরের সাদা দাঁতের প্রেমে পড়ে এবং কিছু ধান মাটির আড়ালে গা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করে। কোনো কোনো ধান পরিত্যক্ত গোড়ালিগুলোর ভেতরেই মাথা লুকিয়ে আছে।

ওরা হেঁটে আসে আর ইঁদুরেরা ওদের হেঁটে আসা দেখে স্পষ্টভাবে বলে দেয় তোমরা খালের ভেতর ঢুকে যাও, ধানের সাথে সহবাস বন্ধ করো। তাদের হেঁটে আসা হয়তো একথা বলে না। তাদের হেঁটে আসার শব্দ হয়তো শুধু ভয় দেখায়। বা ভয়ও দেখায় না। তবু ভয় পায় ইঁদুরেরা। ভয় পেয়ে তাদের গর্তের ভেতর ঢুকে যায়।

ছোট ছোট চারজন মানুষের বাচ্চা আলের ওপর পা ছড়িয়ে বসে। তারা ছোট ছোট করে কথা বলে আর ঝরে পড়া ধানগুলো তাকিয়ে দেখে। একেকটা ধান একেকটা চালের বস্তা। একটা সোনালি বস্তার ভেতর একটা সাদা চাল রাখা আছে। এসব চাল মানুষে খায়। তারা ধান কুড়ানোর জন্য এসেছে। এরা বসে বসে ছোট ছোট সোনার কুঁচির মতো ধান খুঁটতে লাগল।

সোনালি পোকার মতো ধান টুকতে টুকতে তাদের একজন ওঠে। একটা আলের ওপর উঁচু হয়ে দাঁড়ায়। দাঁড়িয়ে প্যান্টের বোতাম খুলে একটা ইঁদুরখালের মুখ লক্ষ্য করে মুততে শুরু করে। অন্যরা তার মুতা দেখে তাকিয়ে তাকিয়ে। ‘তোর মুতে তো খুব গন্ধ রে রমজান’ বলে মুখটাকে হাস্যকরভাবে বিকৃত করে রমেলা। রমেলার বিকৃত মুখ দেখে হি হি করে হেসে ওঠে কুরবান। রমেলাও হেসে ওঠে। তাদের হাসি শুনে এবং মুখ ঘুরিয়ে দেখে রমজানও মুততে মুততে হাসে। তারা চারজন হি হি করে হাসে।

মুতা শেষ করে রমজান আবার এসে বসে তার জায়গায়, রমেলার পাশে। ধান টুকতে শুরু করে। বসতেই রমেলা বলে-‘তোর নুনুটাতো বেশ রে রমজান, আতরের মতো মুত বেরোয়।’ এবারও সবাই হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে তারা সোনাপোকা ধান কুড়ায়। তারা ধান কুড়ানোতে আরও গতি তৈরি করে। ছোট ছোট ছড়ানো ছিটানো ধান তাদের হাত আর চোখের সহযোগিতায় ছোট কাপড়ের ব্যাগে উঠে আসে। একটু পরেই সন্ধ্যা নেমে আসে খুব নরমভাবে। তারা ধান আর ধানের গোছা আর ধানের জমির কোনো পার্থক্য করতে পারে না। ধান আর খুদে খুদে মাটির ঢেলার পার্থক্য করতে পারে না। তারা সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ধানপূর্ণ ছোট ছোট কাপড়ের ব্যাগের মুখে গিঁট দিয়ে বেঁধে ফেলে।

চারজনেই একসাথে মুততে বসে। সারি বেঁধে মুততে বসে। মুততে মুততেই রমজান মূত্ররত রমেলার দিকে তাকিয়ে বলে, ‘তোর মুতে তো ঠিকই আতরের গন্ধ রে রমেলা। আল্লার কসম তোর মুত থেকে সত্যি সত্যি আতরের গন্ধ বের হচ্ছে।’ রমেলা হাসে, কুরবানও হাসে, সবাই হাসে। হাসতে হাসতে একে-অপরের মুতের ওপর গড়িয়ে পড়ে। তারা তাদের নিজেদের মুতের ওপর গড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। একজন বলল, ‘এবার চল ফিরে যাই।’ তারা ফিরে সন্ধ্যাকে লাত্থি মারতে মারতে। ফেরা শেষ হলে। তারা চারজন চারটা ইঁদুরের খালে ঢুকে যায়।

অন্ধকার নামল। ঘন অন্ধকারে কোনো কিছুর সাথে কোনো কিছুকে পার্থক্য করা যায় না। শুধু একটা করুণ কান্না ভেসে আসছে। কোনদিক হতে ভেসে আসছে বোঝা যাচ্ছে না। পুব দিকে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, পশ্চিমে পাতলেও। উত্তর দিকে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, আবার দক্ষিণেও।

 
Electronic Paper