ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ম্যান বুকার ২০১৮

আনা বার্নসের মি টু গল্প

সাইদ রহমান
🕐 ৩:৩১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ০২, ২০১৮

একটি সাহিত্যকর্ম বিখ্যাত হওয়ার পেছনে যে কারণটি প্রধান হিসেবে কাজ করে সেটি হলো বাস্তব সমাজমানসের সঙ্গে তার সম্পর্ক। আনা বার্নস তার ‘মিল্কম্যান’ উপন্যাসের মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে নিজের একটি সাঁকো তৈরির চেষ্টা করেছেন। এই চেষ্টায় তিনি যে সফল তার প্রমাণ হিসেবে মিল্কম্যান জিতে নিয়েছে ম্যান বুকার পুরস্কার-২০১৮। বলাবাহুল্য, নোবেল পুরস্কারের পর এটিকেই বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান সাহিত্য পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আলোড়ন তুলেছে ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন। আনা বার্নসও তার মিল্কম্যান উপন্যাসে এমনই এক গল্প বলার চেষ্টা করেছেন।

এক স্বল্প বয়স্কা নারীর ওপর এক ক্ষমতাধর পুরুষের যৌন হয়রানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে উপন্যাসটি। এই আখ্যান তাই নারীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আরও সতর্ক করে তুলবে।

ম্যান বুকার কমিটির প্রধান নির্বাচক ও বিশিষ্ট দার্শনিক কোয়াম এন্থনি অ্যাপিয়াহা উপন্যাসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি এই উপন্যাস মানুষের মধ্যে #মি টু আন্দোলনকে আরও ছড়িয়ে দিতে পারে। এটি আমাদের গভীরভাবে নৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সচেতনতামূলক বার্তা প্রদান করতে পারে। পাশাপাশি #মি টু আন্দোলনের প্রতি আসা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতেও বইটি আমাদের সহায়তা করতে পারে।’

আনা বার্নস উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রথম সাহিত্যিক, যিনি ‘ম্যান বুকার’ জিতলেন। তবে সমগ্র আয়ারল্যান্ডের হিসাব করলে এর আগে আরও ৩ জন সাহিত্যিক এই সম্মানে ভূষিত হয়েছেন।

তারা হলেন জন বানভিল, আনে এনিরাইট এবং রড্ডি দোয়াইল। এ ছাড়া ২০১৩ সালের পর তিনিই প্রথম নারী, যিনি ম্যান বুকার বিজয়ের গৌরব অর্জন করলেন। এর আগে ২০১৩ সালে ইলানর ক্যাটন নামের এক লেখিকা এই সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন।

এটি আনা বার্নসের তৃতীয় উপন্যাস। কেন্দ্রীয় চরিত্রের স্বল্প বয়স্কা নারীর নিজস্ব কোনো নাম নেই। তাকে ডাকা হয় ‘মিডল সিস্টার’ বা মেজ বোন হিসেবে, যার বয়স মাত্র ১৮ বছর। আর ক্ষমতাধর পুরুষটি আধাসামরিক বাহিনীর একজন সদস্য, নাম মিল্কম্যান। বয়সের দিক থেকে বেশ প্রবীণ। তাদের মধ্যকার প্রেমের গুঞ্জন, যৌন সহিংসতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের নানা গল্প উঠে এসেছে উপন্যাসটির বর্ণনায়।

ম্যান বুকার কমিটির প্রধান নির্বাচক অ্যাপিয়াহা উপন্যাসটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘আনা বার্নস আমাদের সামনে পুরোপুরি ভিন্নধর্মী একটি গল্প তুলে ধরে আমাদের সমাজে প্রচলিত নানা বিতর্কের সমুচিত জবাব দিয়েছেন; নতুন চিন্তা ও অবিশ্বাস্য কল্পনা শক্তির গদ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন। নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নির্যাতন ও ক্রমবর্ধমান হুমকির বিষয়গুলোকে ব্যঙ্গাত্মক অথচ তীব্র মর্মভেদী ভাষায় তুলে ধরেছেন।’

আনা বার্নস ১৯৬২ সালে উত্তর আয়ারল্যান্ডের রাজধানী বেলফেস্টে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ইস্ট সাসেক্সে বসবাস করছেন। তার রচিত অন্য দুটি উপন্যাস হলোÑ ‘নো বোনস (২০০১)’ এবং ‘লিটিল কনস্ট্রাকশনস (২০০৭)’।

এরপর দীর্ঘ অবসর ভেঙে ‘মিল্কম্যান’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তিনি আবার লেখালেখির জগতে ফিরে আসলেন।

লেখক তার এই নতুন উপন্যাসের মূল কথা তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ‘উপন্যাসটিতে এমন একটি জায়গার বর্ণনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ভয়াবহ সহিংসতা বিরাজমান; সেখানকার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে প্রচ- সন্দেহ-অবিশ্বাস; মানুষ আক্রান্ত হয়ে পড়েছে প্যারানিয়া বা বিকৃত মস্তিষ্কের বিশেষ রোগে।’

 

 
Electronic Paper