ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বিশেষ যত্নে কমবে করোনায় মৃত্যু

আরিফ শাওন
🕐 ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৭, ২০২০

করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মৃতদের বেশিরভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব। যার বেশিরভাগ দীর্ঘমেয়াদি (ডায়াবেটিস, হার্ট-কিডনির সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা) একাধিক রোগেও আক্রান্ত। তাই বয়স্ক এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে’— এমন মানুষের বেলায় বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন— প্রথমত, খেয়াল রাখতে হবে তারা যাতে আক্রান্ত না হন। দ্বিতীয়ত, লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে বা আক্রান্ত হলে দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া। বাসার বয়স্কদের বেলায় বিশেষ সচেতন ও একটু বিশেষ যত্নে নিলে কমে আসবে করোনায় মৃত্যুর হার। তারা বলছেন, বয়স্কদের বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো অবস্থাতেই বাসার বাইরে বের হতে না দেওয়া। বাজার বা অন্যান্য কাজে তাদের বাইরে না পাঠানো। বাসার অন্য যারা কর্মক্ষেত্রে বা অন্য প্রয়োজনে বাইরে যাবেন, তারা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাইরে যাবেন। মাস্ক পরবেন। বাসায় ফিরে অবশ্যই ভালো করে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর তাদের কাছে যাবেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন— বাসার তরুণ-তরুণীরাই বয়স্কদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলছেন। অনেকেই বিনা কারণে বাইরে যাচ্ছেন। মাস্ক পরছেন না। হাতও ঠিকভাবে ধুচ্ছেন না। স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। তারা অনেকেই বাইরে থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় আমলে নিচ্ছেন না। তিনি এমনি এমনিই সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু তার দ্বারাই মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছেন তার পরিবারের বয়স্ক বা অন্য সদস্যরা। লক্ষণ প্রকাশ না পাওয়ায় অজান্তেই তার থেকে ভাইরাস যাচ্ছে পরিবারের অন্যদের শরীরে। অর্থাৎ বাসার যারা বাইরে বের হন বা তরুণ-তরুণী যারা বিনা প্রয়োজনে বাইরে বের হন, তারাই মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলছেন বয়স্কদের।

২৫ নভেম্বর সকাল ৮ থেকে ২৬ নভেম্বর সকাল ৮ পর্যন্ত করোনায় দেশে ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ৩৭ জনের মধ্যে ৩৩ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব। ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৬ হাজার ৫২৪ জনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার তথ্যানুযায়ী, দেশে করোনায় শূন্য থেকে ১০ বছরের ৩১ জন, ১১ থেকে ২০ বছরের ৫২ জন, ২১ থেকে ৩০ বছরের ১৪৫ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের ৩৪১ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৭৯৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের ১ হাজার ৭০৩ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ৩ হাজার ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১০ বছরের নিচে মৃত্যু কম। ২০ এর নিচেও প্রায় কাছাকাছি। ৫০ এর নিচে মোট ১ হাজার ৩৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর শুধু ৫১ থেকে ৬০ এর মধ্যেই মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৩ জন। শূন্য থেকে ৫০ এর তুলনায় শুধু ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৩৪১ জন বেশি মারা গেছেন। ৫০ এর উপরে বিভিন্ন বয়সী মারা গেছেন ৫ হাজার ১৬২ জন। অর্থাৎ গড়ে ৫০ পর্যন্তদের তুলনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যু প্রায় ৩ দশমিক ৭৯ গুন।

এটাকে যদি আরও ভেঙে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে ১০ বছরের নিচের তুলনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যু প্রায় ১৬৬ গুণ। ২০ বছরের নিচের তুলনায় ৯৯ গুণ; ৩০-এর নিচের তুলনায় ৩৫ গুণ; ৪০-এর নিচের তুলনায় ১৫ গুণ এবং ৫০-এর নিচের তুলনায় সাড়ে ৬ গুণ। এমআইএসএর এ তথ্য বিশ্লেষণ করে শিশু ও যুবকদের তুলনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যু কতগুণ তা নির্দিষ্ট করে বলা না গেলেও কাছাকাছি বলা যায়। ১৮ পর্যন্ত শিশু। কিন্তু এখানে ২০ পর্যন্ত হিসাব আছে। তাতে শিশুদের তুলনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যু অন্তত ৬২ গুণ বেশি। যুবক ধরা হয় ৪৫ বছর পর্যন্ত। কিন্তু এখানে হিসাবে আছে ৫০ পর্যন্ত। তাতে দেখা যায় যুবকদের তুলনায় পঞ্চাশোর্ধ্বদের মৃত্যু ৪ গুণ।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, বয়স্ক; আবার তিনি একাধিক দীর্ঘমেয়াদি রোগেও আক্রান্ত- যেটাকে কোমরবিটি বলা হয়। এদের জন্য করোনায় মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। তাই এরা আক্রান্ত হলে লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে তাদের বাসায় না রেখে চিকিৎসা না দিয়ে অবশ্যই দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। গাফিলতি করা যাবে না। সব চেয়ে ভালো হয় তাদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করা। তারা যাতে আক্রান্ত না হন, বাসা বা বাড়ির অন্যদের সেই বিষয়ে বিশেষ নজর রাখা; সচেতন থাকা। দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা বয়স্করা যত কম আক্রান্ত হবেন, মৃত্যুর হারও তুলনামূলক ততটা কম হবে বলে জানান তিনি। গেল কয়েকদিনে হঠাৎ মৃত্যু বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি জানান, যারা এখন মারা যাচ্ছেন, তারা রিসেন্টলি আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন এমন নয়। আরও আগে আক্রান্ত হয়েছেন। দেখা গেছে- হয়তো তাদের পরিবার হাসপাতালে নিতে দেরি করে ফেলেছে। শুরুতে নিতে পারলে ভালো ফল আসত। এমন সময় হয়তো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে— যে তখন তার মাল্টি অরগান ধরে ফেলেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়— আগে না নিয়ে এমন সময়ে হাসপাতালে নেন, তখন আর কিছু করার থাকে না। তাই তিনি বয়স্কদের বাসায় না রেখে আগে থেকেই হাসপাতালে আনার পরামর্শ দেন।

 
Electronic Paper