ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ঈদেই বিয়ে...

হালরং ডেস্ক
🕐 ৬:২১ অপরাহ্ণ, জুন ০৩, ২০১৯

ঈদ সমাগত। সেই সঙ্গে গ্রীষ্মের প্রচ- তাপদাহ। তাই বলে কি আর উৎসব আয়োজন থেমে থাকবে? মোটেই নয়! এই গরমে একটু বুঝেশুনে পোশাক নির্বাচন করলে বিয়ের মতো জমকালো আয়োজনেও দিব্যি থাকতে পারবেন স্বাচ্ছন্দ্যে। তবে সাজটাও হওয়া চাই আবহাওয়া উপযোগী।

কনের পোশাক
আগের দিনে বিয়ে মানেই লাল টুকটুকে বউ। কিন্তু বর্তমানে সেটি ভাঙছেন কনেরা। বিয়ের পোশাক নিয়ে কাজ করেন এমন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তেমনটাই জানা গেল। কনের পোশাকে রঙের এই বৈচিত্র্য অবশ্য দু-তিন বছর থেকেই দেখা যাচ্ছে। ডিজাইনাররা জানালেন, ম্যাজেন্টা, নীল, সবুজ, সাদা, বেগুনির মতো রংগুলোর প্রাধান্য থাকবে এবারের কনের পোশাকে। ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান জানালেন, এখনকার কনেরা অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন। বিয়ের দিনটিতে সবাই চায় একটা নিজস্বতা। লাল, বাদামি বা সোনালির মতো বিয়ের পোশাকের গঁৎবাধা রঙে সেই বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়াটা একটু কঠিন। তাই বিয়ের পোশাকের রঙে এই বৈচিত্র্য কনেরা গ্রহণ করছেন বেশ সহজভাবে। তাই বলে চিরায়ত শাড়ির আবেদন কিন্তু ফুরিয়ে যাবে না।

তবে হালে ঐতিহ্যবাহী কাতান, বেনারসি, জামদানি, মসলিনের শাড়ির পাড়ে থাকবে বৈপরীত্যের ছোঁয়া। শাড়ির জমিনটা গাঢ় সবুজ হলে আঁচল আর পাড়ে থাকবে সোনালি রঙের ছোঁয়া। মসলিনের পাশাপাশি শিফন শাড়িও চলবে বিয়ের বাজারে। এবারে মেশিনের কাজ নয়, শিফন শাড়ির জমিনে ভরাট হাতের কাজে ফুটে উঠবে জমকালো ভাব।

হালকা সাজেই স্নিগ্ধা
ত্বক : মেকআপের ক্ষেত্রে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বেজ মেকআপ। আর আমরা সবসময়ই গুরুত্ব দিই স্কিনটোনের সঙ্গে ম্যাচ করে বেজ মেকআপ করার ওপর। কিন্তু আমি বলব, যেহেতু বিশেষ দিনের বিশেষ সাজ এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের সব অতিথির দৃষ্টি থাকে বউয়ের দিকে, চলতে থাকে তার সাজসজ্জা নিয়ে নানান আলোচনা-সমালোচনা, তাই স্কিনটোন অবশ্যই হতে হবে ন্যাচারাল স্কিনটোনের চাইতে ২/১ শেড আপ এবং বেজ করতে হবে অনেক যত্ন সহকারে। খেয়াল রাখতে হবে হাত গলা, পিঠ ও মুখের ত্বকের রঙের যেন ফারাক না থাকে। রাত ও দিনের বেজের ক্ষেত্রে কিছুটা ফারাক থাকতেই পারে। তবে, বেজ মেকআপের পরে কনফার্মিং এবং হাইলাইটিং করতে হবে।

চোখ : বউয়ের সাজের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চোখের সাজ। বর্তমানে রঙের ব্যবহার কম করে চোখকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় করে তোলাটাই সবার পছন্দের। ছোট চোখ, বসা চোখ, উদ্ভাসিত চোখ চোখের ধরন যাই হোক, চোখের জন্য কেমন সাজ মানানসই হবে তা ভালোভাবে বুঝেই করা প্রয়োজন। কোনো চোখে কর্নারে কাজল দিলে ভালো লাগবে আবার কোনো চোখে হাইলাইটার। আজকাল চোখের নিচের ল্যাশলিডের কোণ ঘেঁষে সাদা কাজল ব্যবহার করা হয়। এটাও কিন্তু সব ধরনের চোখের জন্য প্রযোজ্য নয়। তাই বুঝে মানানসই সাজটাই নেওয়া প্রয়োজন।

বউয়ের সাজের ক্ষেত্রে একটা আইল্যাশ তো পরানো হয়-ই। তার পরেও আপার ও লোয়ার ল্যাশে অবশ্যই লাগাতে হবে ঘন করে মাশকারার প্রলেপ। ২/৩ কোট মাশকারা লাগতে হবে। আইলাইনারের ব্যবহারটা আসলে নির্ভর করে কী লুক দিতে চাচ্ছেন তার ওপর। চোখে শেপ সুন্দর দেখাতে আই লাইনারের ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি।

ঠোঁটের সাজ : সব সময়ই যে কোনো একটিকে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইলে আরেকটিকে একটু হালকা রাখতে হয়। তাই চোখের মেকআপ যদি ডার্ক হয় তবে অবশ্যই ঠোঁটকে হালকা রাখতে হবে। অনেক সময় সম্পূর্ণ সাজের ওপরও নির্ভর করে কী রঙের লিপস্টিক আপনার জন্য মানানসই হবে। গরমের সময় ক্রিম ও ম্যাট লিপস্টিক ভালো, বিশেষ করে দিনের বেলায়। এবং রাতে পার্ল, গ্লসি লিপস্টিক ব্যবহার করা যেতে পারে।

চুল : যে কোনো সাজের ক্ষেত্রেই চুলের সাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিয়ের সাজের ক্ষেত্রে চুলের সাজ অনেকটাই নির্ভর করে পোশাক ও গহনার ওপর। সিঁথাপাটি, ঝাঁপটা, টিকলি, মাথার ওড়না; আবার অনেকেই হেজাবও পরেন। তাই চুল, কপাল, সাজসজ্জার ধরন সবকিছুর ওপর নির্ভর করেই মানানসই চুলের সাজ নির্বাচনী করা প্রয়োজন। সব সময় মনে রাখা প্রয়োজন সময়, পরিবেশ-পরিজনদের পছন্দের সাজ ও নিজের আত্মবিশ্বাসের মিশেলই নববধূর বিশেষ মুহূর্তের বিশেষ সাজে দিতে পারে হীরার মতো জৌলুস।

বরের সাজ : আজকাল বিয়েতে রূপচর্চার ক্ষেত্রে কনের চেয়ে বরও পিছিয়ে নেই। সেই সঙ্গে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বরের পোশাকও। এই কেনাকাটার মধ্যে প্রথমেই আসে শেরওয়ানি, পাঞ্জাবি, স্যুট, জুতা ও কসমেটিক সামগ্রী। কসমেটিক সামগ্রীর মধ্যে আছে ফেসওয়াশ, পারফিউম, শ্যাম্পু, পাউডার, ক্রিম, আফটার সেভ, সেভিং আইটেম ইত্যাদি ছেলেদের ব্যবহারিক প্রসাধনী। হাল ফ্যাশনের যুগে বরের শেরওয়ানি কনের পোশাকের সঙ্গে রীতিমতো মিল রেখে তৈরি হয়। বেনারসি, জামদানি, সিল্ক ধুপিয়ান ধরনের কাপড় দিয়েই বরের পোশাক তৈরি করা হয়। দিনের জন্য হালকা কালার আর রাতের জন্য ডার্ক কালার হলে ভালো হয়। এখনকার শেরওয়ানিতে বডি ফিটিং কাট বেশি চলছে। আর গলায় হাই নেক ও ভি শেপ এবং লম্বার ক্ষেত্রে লং কাটটাই বেশি চলছে। পায়জামার ক্ষেত্রে চুড়িদার বা সোজা ছাঁটের পায়জামা চলছে। শেরওয়ানিতে খুব ভারী কাজ না করে ছিমছাম ডিজাইনেও আভিজাত্য ফুটে ওঠে। শেরওয়ানির কাজে হ্যান্ড এমব্রয়ডারি, কারচুপি, মেশিন এমব্রয়ডারি মিক্স থাকে। শেরওয়ানিতে জমকালো ভাব ছেড়ে ক্যাজুয়াল ঢঙের চাহিদা বাড়ছে। অফহোয়াইট, মেরুন, পার্পেল, ব্রাউন, হালকা সোনালি নীল, সবুজ এমনকি কালো রঙের শেরওয়ানিও এখন নজর কাড়ছে। নকশার জন্য শুধু কারচুপি নয়, শেরওয়ানিতে ঠাঁই পেয়েছে জরি, চুমকি, পুঁতি, কলকা, নকশাদার কারচুপি আর পাথরের কাজ।

অনুষঙ্গে বিশেষত্ব
কনের ব্লাউজের নকশায় এবার যোগ হবে নতুন বিশেষত্ব। কোমর পর্যন্ত নামবে ব্লাউজের ঝুল, জানালেন ড্রেসিডেলের ডিজাইনার মায়া রহমান। গোল গলা, বোট নেক, জেট নেক থাকবে। তবে এই বছরের ব্লাউজের নকশায় থাকছে নেকলেস নেকের ব্যবহার। মায়া রহমান বললেন, গলার হারের নকশার আদলে পাথরের জমকালো নকশার ডিজাইন বসানো হবে কনের ব্লাউজে। হাতায় থাকবে জরি আর মিনার কাজ। বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা নকশার কটিও পরতে দেখা যাবে বিয়ের কনেকে।

গহনায় বাহার
কনে সাজে ভারী নকশার গহনা পরার চলটা ফুরোলেও গহনার আবেদন কিন্তু এতটুকু ফুরোয়নি নতুন বউয়ের কাছে। আলাদা কয়েকটি হার নয়, বরং গলাজুড়ে ভরাট নকশার চোকার হার পরতে দেখা যাবে কনেকে। পুঁতি বা মুক্তার চার-পাঁচ লহরের মালাও ঝুলতে দেখা যাবে কনের গলায়। এদিকে গহনার নকশায় এ বছর নানা রঙের কুন্দন আর পাথরের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে জানালেন নিউ জড়োয়া হাউসের স্বত্বাধিকারী বাদল চন্দ্র রায়। এ বছর সোনা ছাড়াও অন্যান্য ধাতব গহনা পরতে দেখা যাবে বিয়ের কনেকে। এ প্রসঙ্গে কনকের স্বত্বাধিকারী লায়লা খায়ের কনক জানালেন, পোশাকের মতো গহনার নকশায় স্বাতন্ত্র্য চান কনেরা। আর মেটালের গহনায় সহজেই এ বৈচিত্র্য তুলে ধরা সম্ভব। আর দামটাও থাকে হাতের নাগালে।

 
Electronic Paper