ঈদ এখন ফ্যাশনের
হালরং ডেস্ক
🕐 ১:২১ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০১৯
ঈদ মানেই খুশি। আর সে খুশির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয় নতুন পোশাক। ঈদ সামনে রেখে বিপণিবিতানগুলোতে নেমেছে মানুষের ঢল। ঈদের পোশাক কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন যারা, জেনে নিন এই ঈদের ট্রেন্ড কোন পোশাকগুলোতে। জানাচ্ছেন পাপিয়া পপি।
ঈদে সাধারণত পুরনো ঐতিহ্যকে ধারণ করার প্রবণতা যুগ যুগ ধরে চলে এসেছে। এবারের ঈদ বাজার ও ফ্যাশন হাউসগুলো সে ধারা বজায় রেখেছে। তাই ঈদের ফ্যাশন ট্রেন্ড আগেকার মতোই বৈচিত্র্য এসেছে।
এবারের ঈদ এসেছে এমন এক সময় যখন-তখন নামে বৃষ্টির ঘনঘটা আর তীব্র গরম। তাই গরম এবং বর্ষা ঋতুর কথা মাথায় রেখেই ঈদের পোশাকের ডিজাইন করেছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। বেছে নিয়েছেন একই সঙ্গে জমকালো আর স্বস্তিদায়ক কাপড়। রঙ বাংলাদেশের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন তৌসিক আহমেদ জানান, রোজাতেই শুরু হয়ে গেছে উদযাপন প্রস্তুতি। রঙ বাংলাদেশ ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে অনন্য সম্ভারে সাজিয়েছে ঈদ সংগ্রহ। প্রতিবারের মতো এবারও থিমনির্ভর কালেকশন তৈরি করা হয়েছে। তিনটি বিশেষ থিমে তৈরি হয়েছে পোশাক।
ইসলামিক নকশা, ফ্লোরাল ও ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল এই তিনটি থিমই হয়েছে এবারের উৎসব সংগ্রহের নকশা উপাদান। ঈদ কালেকশনের তিনটি থিমে পোশাক নকশায় অবশ্যই গুরুত্ব পেয়েছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় আবহ। পাশাপাশি সময়, প্রকৃতি, আবহাওয়া আর আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডও। এবারের ঈদ কালেকশন তৈরি করা হয়েছে আরামদায়ক কাপড়ে। বিশেষ করে তাঁতে বোনা সুতি কাপড়, লিলেন, মসলিন, হাফসিল্ক, এন্ডিকটন, ভয়েল কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে।
আর সেইসঙ্গে আনা হয়েছে রঙের ক্ষেত্রেও বৈচিত্র্য। লাল, অফ হোয়াইট, বিস্কুট, মেজেন্টা, পেস্ট, নেভাল ব্লু, মিষ্টি মেরুন, কফি ব্যবহার করা হয়েছে মূল রং হিসেবে। অন্যান্য রং হিসেবে রয়েছে রয়েল ব্লু, লাইট গোল্ডেন, লাইট টিয়া, লাইট লেমন, সি-গ্রিন, অ্যাস, কমলা, কালো। আর নকশায় স্ক্রিনপ্রিন্ট, ব্লকপ্রিন্ট, হ্যান্ডওয়ার্ক, কারচুপি, মেশিন এমব্রয়ডারি, টাই অ্যান্ড ডাই এবার গ্রহণ করা হয়েছে। মেয়েদের পোশাকে এবার ঈদে স্থান করে নিয়েছে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, টপস, স্কার্ট-টপসেটস, প্লাজো, আনস্টিচ, ওড়না, ব্লাউজ পিস, তৈরি ব্লাউজ। আর ছেলেদের পাঞ্জাবি, শার্ট, ফতুয়া, টি-শার্ট, পায়জামা, গেঞ্জি, লুঙ্গি, টুপি। ছোটদের পোশাক সালোয়ার কামিজ, সিঙ্গেল কামিজ, ফ্রক, স্কার্ট-টপস সেট, টপস, প্লাজো, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট। বরাবরের মতো উৎসবের পোশাক হিসেবে বর্ণিল রঙে হালকা কাজ তারুণ্যের পোশাক চাহিদায় থাকবে শীর্ষে। আর সবসময় ফ্যাশন ফলোয়ার হিসেবে মেয়েরা এগিয়ে।
আমাদের দেশীয় ঈদ ফ্যাশনে তাই বৈচিত্র্য তাদের পোশাকেই বেশি করা হয়। তরুণীদের ফিউশনধর্মী কাপড় বেশি পছন্দ। কম বয়সী মেয়েরা সিঙ্গেল কামিজ, পালাজ্জো, ন্যারো শেপ সিগারেট প্যান্ট বা লেগিংস বা স্কার্ট পরছে লেয়ারিং করে। এবারও ভারতীয় আর পাকিস্তানি ফ্যাশন আমাদের দেশে যথেষ্ট প্রভাব ফেলছে। ৪-৫ বছর ধরে এ ধারা তীব্র। সাম্প্রতিক সময়ের ট্রেন্ড সিঙ্গেল পিস কুর্তি আর সঙ্গে বেলবটম কাট ট্রাউজার, যা প্লাজো নামে প্রচলিত। ওভেন, নিট- দুই কাপড়ের তৈরি পালাজ্জো জনপ্রিয় এসবো থাকবে এবারের ঈদে বেশ চলতি। শহুরে তরুণীরা এখন আরো বেশি সচেতন ফ্যাশন ট্রেন্ড, কালার ফোরকাস্টিং বা প্যাটার্ন বা ফেব্রিক বৈচিত্র্য বিষয়গুলো লক্ষ্য করছে। তাই ক্রেতা চাহিদার প্রভাব দেশীয় রেডি টু ওয়ার ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোতেও। এসব ব্র্যান্ডের দেশীয় ডিজাইনে স্বভাবতই পাশ্চাত্য কাট অনুসরণ এখন বেশ লক্ষণীয়। তবে, ঈদের সময়টায় ক্যাজুয়াল পোশাক আশাক নির্ভর করবে আপনার রুচি এবং শারীরিক গঠন ও বয়সের উচ্ছলতার ওপর।
ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও আমরা জাতিতে তো বাঙালি। তাই কোনো উৎসব মানেই শাড়ি। এবারের ঈদে প্রিন্টেড শাড়ির প্রতি আকর্ষণ লক্ষ করা গেছে। সেই সঙ্গে ব্লক, কালার কম্বিনেশন আজও অমলিন। আজকাল ক্রেতাদের নজর কাড়ছে পেটানো কাজের ঐতিহ্যবাহী শাড়িগুলো। নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে ট্র্যাডিশনাল সব মোটিফ। আর রঙে অনুপ্রেরণা নিচ্ছেন উৎসব আর বর্ষা থেকে। সুতি, সিল্ক, আর তাঁতের শাড়ির চাহিদা অনেক বেশি। তাঁত আর সুতি শাড়ির মধ্যেও আছে নানান রকমফের। টাঙ্গাইলের তাঁত, জুট কটন, সফট কটন, অ্যান্ডি কটনসহ নানান ধরনের সুতি আর তাঁতের শাড়ি। আর সিল্কের শাড়ির মধ্যে বাজারে চাহিদা বেশি টাঙ্গাইলের সিল্ক, হাফসিল্ক, সিল্ক জামদানি, পিওর সিল্ক, অ্যান্ডি সিল্ক এবং অবশ্যই রাজশাহী সিল্ক। সিল্কের পাশাপাশি স্থান করে নিয়েছে মসলিন, অ্যান্ডি, বলাকা সিল্ক, সফট সিল্ক আর তসর সিল্ক। এসবের ওপর নানান ধরনের নকশার কাজ রয়েছে।
দরদাম
বিভিন্ন জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেছে, তাঁতের সুতি শাড়ি ৮৫০-৪,৫০০ টাকা, তাঁতের সিল্ক/হাফ সিল্ক ২,৫০০-৭,৫০০ টাকা, ব্লকপ্রিন্ট, স্ক্রিনপ্রিন্ট শাড়ি ১,২৫০-৪,৫০০ টাকা, সিল্ক শাড়ি ৪,০০০-৮,০০০ টাকা, মসলিন ১০,০০০-২৫,০০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া সিঙ্গেল কামিজ ১২০০-২০০০ টাকা, থ্রিপিস ১৮০০-৩৫০০ টাকা, আনস্টিচ ১,২০০-৩,৫০০ টাকা, লং-স্কার্ট সেট ২,৭০০-৩,৫০০ টাকার মধ্যেই মিলছে।