রঙে ভরা বৈশাখ
পাপিয়া পপি
🕐 ১:১১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ০৮, ২০১৯
শুরু হয়ে গেছে বাঙালির প্রাণের বৈশাখ প্রস্তুতি। ভেতরে ভেতরে সবাই তৈরি হচ্ছে নানা আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য। নানা সমস্যা ও যন্ত্রণা সত্ত্বেও বাঙালি ঠিকই বৈশাখের প্রথম প্রহরে বরণ করে নেবে নববর্ষকে। পুরনোকে বিদায় জানিয়ে সবাই মেতে উঠবে নতুনের আবাহনে। এই উদযাপন নতুন পোশাক ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পোশাক ও সাজসজ্জা। আর তা নিয়ে বাঙালির ভাবনার শেষ নেই
নারীর রং
নারীর উৎসব মানে সাজসজ্জা। আর বৈশাখী উৎসবে বাঙালি নারীর কাছে শাড়ি বরাবরই একটু এগিয়ে। অনেকে জামদানি বা সিল্ক শাড়ি পরতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজে থাকতে পারে গ্রামীণ আবহ। ঘটি হাতা, গলায় কুঁচি, লেস ফিতায় ব্লাউজ বা প্রিন্টের যে কোনোটায় মানিয়ে যাবে। কিছু বছর আগেও পহেলা বৈশাখের পোশাকে দেশি বাদ্যযন্ত্র আর ব্যবহার্য জিনিসের নকশার প্রাধান্য বেশি পেত। ধীরে ধীরে সে নকশায় জায়গা করে নিয়েছে বাংলার প্রকৃতি আর নানা আলপনার ছবি। লাল-সাদা রঙের সঙ্গে কমলা, নীল, হলুদ, বেগুনি ইত্যাদির মিলন। বয়স, পরিবেশ আর অভ্যাসের সঙ্গে মিল রেখে বেছে নিতে পারেন বছরের নতুন শাড়িটি।
শাড়ির পাশাপাশি সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টপস, কুর্তি, স্কার্টসহ বিভিন্ন পোশাকে বৈশাখকে রাঙিয়ে চলেছেন বাঙালি নারী। বাঙালি পোশাকের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রঙ-এর মিডিয়া নির্বাহী তৌসিক আহমেদ জানান, এবার নববর্ষের পোশাকে তারা গ্রহণ করেছেন নকশিকাঁথা, কাইয়ুম চৌধুরীর রেখাচিত্র ও আলাম (চাকমা সম্প্রদায়ের বয়ন)। সময়, প্রকৃতির অবস্থা, পারিপার্শ্ব, আবহাওয়াও পোশাকের উপকরণ নির্বাচনে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। রঙের ব্যবহার ঘটিয়েছেন লাল, মেরুন, অফ হোয়াইট, সাদা, নীল, কমলা, মেজেন্টা। অন্য রং হিসেবে রেখেছেন গোল্ডেন হলুদ, গেরুয়া, টিয়া, সবুজ, ফিরোজা, ওলিভ, বিস্কুট, মিষ্টি কমলা, কফি, পিংক, পেস্ট। শাড়ির সঙ্গে ম্যাচিং করে খোঁপায় জড়াতে পারেন বেলি ফুলের মালা সেই সঙ্গে মাটির গহনা, ট্র্যাডিশনাল অর্নামেন্ট, চুড়ি, ব্যাগ পরতে পারেন। হাতে দিতে পারেন মেহেদি আরও একটু বেশি রাঙাতে মাখতে পারেন আলতা। হয়তো একটা ছোট লাল টিপ কিংবা পায়ে নূপুর।
কীভাবে সাজবেন শাড়িতে?
বাঙালি স্টাইল
দুই বাংলায় এই স্টাইল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটাকে দেবদাস স্টাইলও বলা হয়। আর এভাবে শাড়ি পরার জন্য প্রথম ধাপে কোমর বরাবর নাভির সামনে থেকে শুরু করে বামে গিয়ে একটি ৩৬০ ডিগ্রি বৃত্তাকারে কোমরের চারদিকে ঘুরিয়ে পেটিকোটে শাড়ি গুঁজতে গুঁজতে আবার ডানদিক দিয়ে নাভির সামনে পর্যন্ত নিয়ে আসতে হবে। এই পর্যায় আবার উল্টোদিকে মানে আবার ডানদিকে গুঁজতে গুঁজতে পেছন পর্যন্ত আসতে হবে। পেছনে আসার পর শাড়ির যে অংশটি মাঝামাঝি পেটিকোটের ভেতর গোঁজার কথা সেখানে শাড়িতে একটা গিট বানাতে হবে। এবং ওই গিটটা পেছনে মাঝামাঝি বা একটু বাম ঘেঁষে পেটিকোটের ভেতর গুঁজে দিতে হবে। এবার বাকি শাড়ি আড়াআড়ি করে বাম কাঁধের ওপর হাতের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে আবার ডান হাতের নিচ দিয়ে আঁচল সামনে এনে আবার বাম বা ডান কাঁধে ফেলতে হবে।
মৌসুমি স্টাইল
এটাতে প্রাথমিক সবকিছু নিভি স্টাইলের মতো হবে কিন্তু কুঁচি গোঁজার পর বাম হাতের নিচ দিয়ে পেছন ঘুরিয়ে সামনে না এনে ডান কাঁধের ওপর দিয়ে পেছন থেকে সামনে আনতে হবে। মানে বাম হাতের নিচ দিয়ে পেছন দিক দিয়ে আড়াআড়ি ডান কাঁধে উঠে যাবে এবং আঁচলটা পেছন দিকে না ঝুলে সামনে ঝুলবে। একদম শেষ ধাপ হলো, ঝুলন্ত আঁচলের নিচের কোনা টেনে নিয়ে কোনাকুনিভাবে ডানসাইডে শাড়ির সঙ্গে সেফটিপিন দিয়ে আটকে দিতে হবে। আর একটা কোনা ফ্রি থাকবে।
আটপৌরে
নিজেকে একটু আলাদা দেখাতে আটপৌরে খুব ভালো। প্রথমে শাড়ি যেভাবে পরা হয় সেভাবেই একপাঁক ঘুরিয়ে পরো। তারপর বড় করে আঁচল করে নিন। তারপর কুঁচি। এবার আঁচলটা বাঁদিকে যেভাবে প্লিট করা হয় সেভাবেই করে নিন। এবার পেছনের লম্বা বড় অংশটা ডান হাতের পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে, ডান কাঁধের সামনে আনো। আঁচলের খোঁটটা জাস্ট আটকে দিন।
ছেলেদের বাহার
মেয়েদের মতো ছেলেরা অতটা বাহারি সাজ না সাজলেও বছরের নতুন দিনটিতে পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, পায়জাম, স্যান্ডো গেঞ্জি ধুতিতে সাজতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। অনেকে আবার প্রিয় টি-শার্ট ছেড়ে বাইরে আসতে চান না। তাদের জন্যও বৈশাখের রং লেগেছে পশ্চিমা এই পোশাকে। সারা বছর এখন খুব একটা ফতুয়া পরার চল দেখা না গেলেও অনেকে শখ করে ফতুয়া পরেন বৈশাখে।
এবার ছেলেদের পোশাকে ডিজিটাল প্রিন্টের আধিক্য। পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতুয়া বা শার্টের নকশাতেও ডিজিটাল প্রিন্ট। তরুণদের অনেকেই এসে এই ডিজাইন চান।
তাই এর চাহিদা আছেই। এ ছাড়া পলকা ডট, পোড়ামাটির নকশা, ফুলেল নকশা, পাখি, প্রজাপতি, ঘুড়ির নকশা দেখা যাবে ছেলেদের পাঞ্জাবিতে। চিরায়ত (ক্লাসিক) ধারার বেশ কিছু পাঞ্জাবি দেখা যাবে এবার। কলার ছাড়া গোল গলা পাঞ্জাবিতে ফুলের নকশা। এ ধরনের পাঞ্জাবি লুঙ্গি বা ধুতির সঙ্গে পরা যেতে পারে।