১১ মামলার শুনানি পিছিয়েছে
খালেদার জামিন রায় আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৪৩ অপরাহ্ণ, মে ১৫, ২০১৮
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিল আবেদনের ওপর রায় ঘোষণার জন্য আজ বুধবার দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ।
গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গতকাল আরও অধিকতর যুক্তিতর্ক করে। পরে গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ নতুন এ দিন ধার্য করেন।
এর আগে এ বিষয়ে রায়ের ধার্য দিনে গতকাল সকালে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জামিনের বিরোধিতার বিষয়ে আরও কিছু ডকুমেন্ট দেবেন জানিয়ে শুনানির জন্য একদিন সময় আবেদন করেন।
কিন্তু, আদালত তাকে বলেন, কালকে (আজ বুধবার) একজন ব্রাদার জাজ (বেঞ্চের চার বিচারকের একজন) থাকতে পারবেন না, তিনি খুবই অসুস্থ। আপনি বই-পুস্তক নিয়ে আজই (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় কোর্টে আসেন। এরপর দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন। শুনানিতে জামিনের বিরোধিতা করে অন্য মামলার উদাহরণ দেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
তিনি আদালতকে দেখান, হাইকোর্ট জামিন দিলেও আপিল বিভাগ তা খারিজ করেছিলেন। তাই খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিনও বাতিল করার আর্জি জানান সরকারপক্ষের এ আইনজীবী।
তবে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের বিরোধিতা করে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের দেওয়া রেফারেন্স সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। অন্য সময়ে হাইকোর্ট লঘুদণ্ডের (শর্ট সেন্টেন্স) ক্ষেত্রে জামিন দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করার উদাহরণ অ্যাটর্নি জেনারেল ও দুদক দিতে পারবে না। তাই খালেদা জিয়ার জামিন বহাল রাখা হোক। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আদালতকে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলা আর অন্য মামলা এক নয়। তিনি আদালতকে বলেছেন, অন্য মামলার সঙ্গে খালেদা জিয়ার মামলাকে একসঙ্গে মেলালে চলবে না। এ মামলা সরকারি তহবিল আত্মসাতের মামলা। প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিলে টাকা এসেছিল। সেই টাকা তুলে অন্য একটি এতিম তহবিলে হস্তান্তর করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এই সরকারি টাকা তুলে অন্য তহবিলে দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া।
দুপক্ষের বক্তব্য শুনে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আপিলের ওপর রায় ঘোষণার জন্য বুধবার (আজ) দিন ধার্য করেন সর্বোচ্চ আদালত।
এ মামলায় আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।
গতকাল আদালতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য জয়নুল আবেদীন ফারুক ও বিএনপি নেতা খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল বিভাগের রায় ঘিরে সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট ও এর আশপাশ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সব ফটকেই পরিচয়পত্র দেখিয়ে প্রবেশ করতে হয়।
এর আগে গত ৯ মে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ড পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদকের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গতকাল রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেছিলেন আপিল বিভাগ।
গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। দুই সপ্তাহের মধ্যে সরকার, দুদক ও আসামিপক্ষকে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। খালেদা জিয়ার জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের লিভ টু আপিল গ্রহণ করে এ আদেশ দেওয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
খালেদার ১১ মামলার শুনানি পিছিয়েছে
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও নাশকতার ১১ মামলার শুনানি পিছিয়েছে। গতকাল বকশিবাজারের অস্থায়ী আদালতে মামলাগুলোর শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনক্রমে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা শুনানি পিছিয়ে আগামী ১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে ঢাকার দারুসসালাম থানা এলাকায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা ৮ মামলা, যাত্রাবাড়ী থানার দুই মামলা ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ওই আদালতে বিচারাধীন।