বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা মামলার রায় আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২১
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ।
রোববার দুপুর ১২টায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর এক মাস ২২ দিনের মাথায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে এই রায়। রাষ্ট্রপক্ষ ও আবরারের পরিবার আশা করছে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) নিহতের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘পুরো দেশবাসীর মতো আমাদেরও চাওয়া সকল আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি হবে এবং দ্রুত তা কার্যকর করা হবে। ’
এই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, এই মামলায় চার্জশিটে ২৫ জন আসামি এবং ৬০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছি। করোনা পরিস্থিতিসহ নানা প্রতিকূলতার পরও আমরা ৪৬ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপনের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারকাজ শেষ করতে পেরেছি। আশা করছি রায়ে সকল আসামির সর্বোচ্চ সাজা হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, এই মামলায় ফরমায়েশি তদন্ত করা হয়েছে। এমন অনেককে আসামি করা হয়েছে যাদের হত্যাকাণ্ডে কোনো ভূমিকা ছিল না। শুধু একটি সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে এর ওপর ভিত্তি করেই অনেককে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।
আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আমিনুল গনি টিটো বলেন, এই আদালতে রায় যাই হোক আমরা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব বলে বিশ্বাস করি।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
মাত্র ৩৭ দিনে তদন্ত শেষ করে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। চার্জশিটে ২৫ জনকে আসামি করা হয়। আর রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী করা হয় ৬০ জনকে।
চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়। একই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি চার্জগঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
করোনা পরিস্থিতির কারণে বিচারকাজে বিঘ্ন ঘটে। শেষ পর্যন্ত বিচার শুরুর এক বছর দুই মাসের মধ্যে পুরো কার্যক্রম শেষে গত ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিচারকাজ শেষ হয়। ওইদিনই বিচারক রায়ের জন্য ২৮ নভেম্বর দিন ধার্য করেন। বিচার চলাকালে আবরারের বাবাসহ মোট ৪৬ সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দেন।
মামলায় চার্জশিটভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে তদন্ত চলাকালে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।
মামলার আট আসামি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
বিচার শুরুর প্রাক্কালে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।