ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খসরুর প্রতি সম্মানে আজ বসছে না সুপ্রিম কোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২১

খসরুর প্রতি সম্মানে আজ বসছে না সুপ্রিম কোর্ট

সাবেক আইনমন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদ্য প্রয়াত সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর প্রতি সম্মান দেখিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ বসছে না। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে সকাল পৌনে ৯টায় লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে আবদুল মতিন খসরুর মরদেহ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি চত্বরে নেয়া হয়। সেখানে সকাল ১০টায় তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (১৪ এপ্রিল) বিকেল ৪ টা ৫০ মিনিটের দিকে মারা যান আবদুল মতিন খসরু।

গত ১৬ মার্চ থেকে তিনি সিএমএইচ-এ চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৩ এপ্রিল থেকে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) সকাল ১০টায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জানাজা শেষে তার মরদেহ কুমিল্লায় নেয়া হচ্ছে। সেখানে বাদ জোহর বুড়িচং উপজেলায় তৃতীয় জানাজা হবে। এরপর বাদ আসর ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় চতুর্থ জানাজা এবং স্থানীয় মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পঞ্চম জানাজা হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরুর পাঁচটি জানাজা শেষে ব্রাহ্মণপাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আব্দুল মতিন খসরু ২০২১-২২ মেয়াদের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন। হাসপাতাল থেকেই গত ১২ এপ্রিল ভার্চুয়ালি তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

তিনি ১৯৯৬-২০০১ সালে আইনমন্ত্রী থাকার সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কালো আইন ইনডেমনিটি বাতিল ও লিগ্যাল এইড আইন প্রণয়ণ করা। আব্দুল মতিন খসরুর সময়ে সরকারের সবচেয়ে সফল কাজটি ছিল ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ।

এই অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। এছাড়াও আইন অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ মামলা পরিচালনা করেছেন।

আবদুল মতিন খসরুর সংক্ষিপ্ত জীবনী

তৃণমূল থেকে জাতীয় রাজনীতির শীর্ষে উঠে আসা রাজনীতিবিদ ছিলেন এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ।

একজন আইনজীবী হিসেবে শতভাগ পেশাদার ছিলেন তিনি। কুমিল্লা জজ কোর্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্টে প্র্যাকটিসে সাফল্য অর্জন করেন তিনি। সর্বশেষ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরআগে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য (প্রেসিডিয়াম সদস্য)। আবদুল মতিন খসরু কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং- ব্রাহ্মণপাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন পাঁচবার। আমৃত্যু ওই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।

১৯৭৮ সালে কুমিল্লা জজ কোর্টে আইন পেশায় যুক্ত হন আবদুল মতিন খসরু। ১৯৮২ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করেন তিনি। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ভোটে সদস্য নির্বাচিত হওয়ার গৌরবও রয়েছে তার। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একজন জেষ্ঠ্য আইনজীবী ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলটির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

১৯৯১ সালে কুমিল্লা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যে তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় দফায় এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় বিচারের পথ বন্ধে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল পাসে আবদুল মতিন খসরুর অগ্রণী ভূমিকা ছিল। এ বিল পাস করার প্রাক্কালে জাতীয় সংসদে আবদুল মতিন খসরুর বক্তব্য অগনিত মানুষের হৃদয়কে স্পর্শ করেছিল। তার ওই বক্তব্য ছিল ঐতিহাসিক।

তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আমৃত্যু দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন আবদুল মতিন খসরু।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আবদুল মতিন খসরুর জীবন প্রদীপ নিভে গেল। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি হন তিনি। চিকিৎসায় করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও অন্যান্য রোগে আজ বুধবার বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

গত ১৫ মার্চ সংসদ সচিবালয়ে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন আবদুল মতিন খসরু। ১৬ মার্চ সকালে তার করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ওইদিনই তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচে) ভর্তি করা হয়। অবস্থা ভালো না হওয়ায় ২৮ মার্চ রাত ১২টার দিকে আবদুল মতিন খসরুকে আইসিইউতে নেয়া হয়। ১ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। এরপর ৩ এপ্রিল আইসিইউ থেকে তাকে সাধারণ কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। এরপর অবস্থা খারাপ হলে সাবেক এই আইনমন্ত্রীকে মঙ্গলবার লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আবদুল মতিন খসরু ১৯৫০ সালের ১২ ফেবব্রুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মিরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মো. আবদুল মালেক এবং মাতা জাহানারা বেগম। তারা চার ভাই এক বোন৷ আবদুল মতিন খসরু ব্যক্তিজীবনে এক ছেলে এক মেয়ের জনক।

তিনি ১৯৯২ সালে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সচিব নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থানীয় কমিটির সভাপতি ছিলেন।

আব্দুল মতিন খসরু ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে আব্দুল মতিন খসরু আইনমন্ত্রী থাকাকালে সংবিধান ও আইনের শাসন বিরোধী কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকান্ডর বিচারের ব্যবস্থা করেন তিনি। পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারবর্গের আত্মস্বীকৃত খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়।

তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ শোক প্রকাশ করেছেন।
আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে তার নির্বাচনী এলাকা, নিজ জেলা কুমিল্লা এবং সারাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকদের মধ্যে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েও দায়িত্ব পালন শুরুর পূর্বেই সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীদের অভিভাবক আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে শোকাহত আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন আইনজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।

 
Electronic Paper