ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আনুশকার ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১১:০৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০২১

আনুশকার ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম

মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ফারদিন ইফতেখার দিহানের বাসার দারোয়ান মো. দুলালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। এদিকে দিহানের তিন বন্ধুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার চার দিন পর গতকাল সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, কলাবাগানে আনুশকা সংক্রান্ত ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম। হত্যা হয়েছে, ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু তারা দুজনই কিশোর। আমাদের আইনে তারা শিশু। আমাদের আধুনিক আইন দরকার।

তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ জানিয়েছে, দুই মাস আগে গত নভেম্বর মাস থেকে আনুশকা ও দিহানের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এদিকে ভুক্তভোগী আনুশকার বাবা জানিয়েছেন, ঘটনার দিন দুপুর ১২টা ১৯ মিনিটে তাকে ফোন করেছিল তার মেয়ে।

যে কারণে দারোয়ান আটক
গত ৭ জানুয়ারি দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল থেকে আনুশকার লাশ উদ্ধারের পর থেকেই পলাতক ছিলেন দিহানের বাড়ির দারোয়ান দুলাল। গতকাল সোমবার দুপুরে তাকে আটক করে পুলিশ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই দিহানের বাড়ির দারোয়ান দিহানকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন। সেদিন ওই বাসায় আর কারা কারা গিয়েছিল তা জানতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ প্রধান যা বললেন
গতকাল সোমবার র‌্যাব সদর দফতরে র‌্যাব সেবা সপ্তাহ উপলক্ষে মেধাবী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে আইজিপি বলেন, কলাবাগানের ঘটনা পূর্ণাঙ্গ ক্রাইম। হত্যা হয়েছে, ধর্ষণ হয়েছে। কিন্তু তারা দুজনই কিশোর। আমাদের আইনে তারা শিশু। আমাদের আধুনিক আইন দরকার। কিশোরদের জেলে রাখা যাবে না, থানাহাজতে রাখা যাবে না, মোবাইল কোর্টে দেওয়া যাবে না। তাহলে আমরা তাদের রাখব কোথায়? প্রভিশন অফিসার কতজন আমাদের, কোথায় তারা। অনেকেই জানেন না। এগুলো না হওয়া পর্যন্ত আমরা কি বিচার করব না? থেমে থাকব? কিশোর গ্যাং কালচার প্রতিরোধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আমাদের শিশু সংশোধনাগার বা কারেকশন সেন্টার করে দেন।

অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশ প্রধান বলেন, বর্তমানে কিশোর গ্যাং একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা চাই না তারা ড্রাগ নিয়ে নষ্ট হয়ে যাক। বিষয়গুলোর প্রতি পরিবারের সচেতন হতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে। পরিবারের দায়িত্ব তার সন্তান কোথায় যায়, কী করে তার খোঁজ রাখা, নিয়ন্ত্রণ করা। দায়িত্ব না নিতে পারলে সন্তান জন্ম দিয়েছেন কেন? এটা অভিভাবকের সামাজিক দায়িত্ব, ধর্মীয় দায়িত্ব।

দুই মাস আগে প্রেম শুরু আনুশকা-দিহানের
মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে পুলিশ জানতে পেরেছে, দুই মাস আগে দিহান ও আনুশকার মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। হত্যাকাণ্ডে শুধু দিহানকে আসামি করায় এবং দিহানের তিন বন্ধুকে পুলিশ ছেড়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল আনুশকার পরিবার ও বন্ধুরা। পরবর্তীতে পুলিশ জানিয়েছে, ছেড়ে দেওয়া হলেও দিহানের তিন বন্ধুকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।

রমনার ডিসি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পেরেছি তাদের মধ্যে দুই মাস আগে নভেম্বর থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আমরা সার্বিক বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত করছি। দিহানের তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে তারা। ফরেনসিক রিপোর্টে একাধিক ব্যক্তির জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তাদের (দিহানের তিন বন্ধু) সন্দেহের তালিকায় রাখা হবে।

বাবাকে ফোন করেছিল আনুশকা!
আনুশকার বাবা আল আমিন আহম্মেদ দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ঘটনার দিন ঠিক ১২টা ১৯ মিনিটে আমার মেয়ের নম্বর থেকে কল আসে। আমি মিটিংয়ে থাকায় ফোনটা কেটে দিই। তারপর আর ফোন করেনি। তার কিছু সময় পর আমার স্ত্রীর ফোনে কল আসে। ফোন করে আমার মেয়ের অসুস্থতার কথা জানায়। প্রথম ফোনটা না ধরাটাই ছিল আমার সবচেয়ে বড় ভুল।

তিনি বলেন, মনে হয় আমার মেয়েকে যখন জোরজবরদস্তি করা হচ্ছিল, তখনই সে আমাকে ফোন করেছিল। আমি যদি ফোনটা ধরতে পারতাম বিষয়টা এতদূর গড়াতো না। পরে আমাকে না পেয়ে আমার স্ত্রীকে ফোন করা হয়। তবে সেটা হাসপাতাল থেকে নাকি ওই বাসা থেকে এটা আমরা জানি না। হাসপাতালে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা আমাকে জানান, আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

 
Electronic Paper