ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আনুশকাহ ধর্ষণ-হত্যা: দায় স্বীকার দিহানের

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৪:৩৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ০৮, ২০২১

আনুশকাহ ধর্ষণ-হত্যা: দায় স্বীকার দিহানের

ধানমন্ডি মাস্টার মাইন্ড স্কুলের ও লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নুর আমিনকে (১৭) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তানভীর ইফতেফার দিহান (১৮) দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় আসামি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কলাবাগান থানার পুলিশ পরিদর্শক আ ফ ম আসাদুজ্জামান।

আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান বলেন, আনুশকার বন্ধু দিহানকে একমাত্র আসামি করে তার বাবা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আমাদেরও ধারণা, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকেও তেমন রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। কারণ, ধর্ষণের পর তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল।

এ ঘটনায় হাসপাতাল থেকে আটক দিহানের তিন বন্ধুকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা বলেন, আমার মেয়ের এ বছর ও লেভেল পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার সাজেশন্স দেয়ার কথা বলে ওকে ডেকে নিয়ে যায় ফারদিন ইফতেখার দিহান। ওরাই আমাকে ফোন দিয়ে বলেছে আন্টি ও অসুস্থ। তখন আমি বলেছি ভালো মেয়ে গেল, অসুস্থ কীভাবে হয়েছে। বলেছে আমাদের সাথেই ছিল তবে এখন সেন্সলেস হয়ে পড়েছে। পরে ওরাই আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমি হাসপাতালে পৌঁছার আগেই আবার ফোন দিয়ে বলে ও মারা গেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

এর আগে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে নিহত আনুশকার বাবা মো. আল-আমিন বাদী হয়ে দিহানকে একমাত্র আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডির আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কলাবাগান থানায় ফোন করে জানায়, এক কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এনেছেন এক তরুণ। কিশোরীর শরীর থেকে রক্ত ঝরছে। খবর পেয়ে নিউমার্কেট অঞ্চল পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার (এসি) আবুল হাসান ওই তরুণকে আটকে রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন।

এরপর কলাবাগান থানার পুলিশ দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে ওই তরুণকে আটক করে। খবর পেয়ে ওই তরুণের তিন বন্ধু হাসপাতালে গেলে পুলিশ তাদেরকেও আটক করে। পরে চারজনকে কলাবাগান থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ পরে ওই ছাত্রীর মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

মামলার এজহারে মেয়েটির বাবা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় তার স্ত্রী অফিসের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হন। তিনি ব্যবসায়িক কাজে বের হন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। বেলা পৌনে ১২টার দিকে তার স্ত্রীকে ফোন করে মেয়ে জানায়, সে কোচিং থেকে পেপার্স আনতে যাচ্ছে।বেলা একটা ১৮ মিনিটে মেয়ের মায়ের মোবাইল ফোনে কল আসে। ফারদিন ইফতেখার দিহান নিজের পরিচয় দিয়ে জানান, মেয়েটি অচেতন অবস্থায় পড়ে গেছে। তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলে, সে দিহান। আমার মেয়ে তার বাসায় গিয়েছিল। আকস্মিকভাবে আমার মেয়ে অচেতন হয়ে পড়ায় সে আমার মেয়েকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেছে। এই খবর পেয়ে মেয়েটির মা অফিস থেকে বের হয়ে বেলা একটা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে যান। সেখানে থাকা কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছ থেকে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে মেরে ফেলা হয়েছে মর্মে আমার স্ত্রী জানতে পারেন। বেলা একটা ৫৭ মিনিটে বিষয়টি মেয়ের বাবাকে জানান স্ত্রী। এর পর আমি হাসপাতালে ছুটে যাই।

এজাহারে বাবা লেখেন, তার মেয়েকে বেলা ১২টার দিকে দিহান কলাবাগানের লেকসার্কাস রোডে নিজের বাসায় নিয়ে যান। সেখানে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। রক্তক্ষরণে মেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে দিহান ধর্ষণের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে বেলা একটা ২৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পৌনে দুইটার দিকে মারা যায় মেয়েটি।

 

 
Electronic Paper