ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘উজি’ পিস্তলে উদ্বেগ

প্রীতম সাহা সুদীপ
🕐 ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ৩০, ২০২০

বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় একটি আগ্নেয়াস্ত্রের নাম ‘উজি’। এ অস্ত্রটি সর্বপ্রথম নির্মিত টেলিস্কোপিং বোল্টযুক্ত আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। ইসরায়েল-বেলজিয়ামসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এটি ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন বৈধ অস্ত্রের দোকানেই বিক্রি করা হচ্ছে সেমি অটোমেটিক (আধা স্বয়ংক্রিয়) এ অস্ত্রটি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে ১১১টি উজি পিস্তল আমদানি করেছে ঢাকার ছয়টি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৫৩টি উজি পিস্তল তারা লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করে। এখনো ৫৮টি এসব প্রতিষ্ঠানে রয়ে গেছে। আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র থেকেও এটি অত্যাধুনিক।

চলতি বছরের ২০ আগস্ট গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি সিলভার রঙের প্রাইভেটকারসহ মিনাল শরীফ নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদসহ একটি অস্ত্রের লাইসেন্স উদ্ধার করা হয়। পরে মিনালকে নিয়ে ধানমন্ডির ১৫ নম্বর সড়কে তার বাসায় অভিযানে যান ডিবি পুলিশের সদস্যরা। সেখান থেকে আরও মাদকের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় একটি উজি ব্র্যান্ডের পিস্তল ও ৪৪ রাউন্ডগুলি। 

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মিনালের অস্ত্রের লাইসেন্সের সঙ্গে উদ্ধার করা অস্ত্রটি মিলিয়ে গরমিল দেখতে পান অভিযানরত ডিবি সদস্যরা। লাইসেন্সে .২২ (পয়েন্ট টুটু) বোর রাইফেল উল্লেখ থাকলেও ওই লাইসেন্সের বিপরীতে তার কাছে পাওয়া যায় অত্যাধুনিক উজি পিস্তল (মডেল-টতও চওঝঞঙখ ঈঅখ.২২খ.জ.ঐঠ)। এ পিস্তলটি মিনাল ২০১৬ সাল থেকে ব্যবহার করে আসছিলেন। এরপরই পিস্তলটি নিয়ে মিনালকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

জিজ্ঞাসাবাদে মিনাল জানান, অস্ত্রটি পুরানা পল্টনের বৈধ অস্ত্রের দোকান এমএইচ আর্মস কোম্পানি থেকে কিনেছেন। তখন গভীর অনুসন্ধানের জন্য ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি-নং ১০৮৩) করে তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি নেয় ডিবি পুলিশ। পরে লাইসেন্সের সঙ্গে অস্ত্রের ধরনের গরমিলের বিষয়ে জানতে এমএইচ আর্মস কোম্পানির মালিক মোকারম হোসেনকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির জবাবে ওই ব্যবসায়ী জানান, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেডের রমনা শাখার মাধ্যমে অস্ত্র আমদানি করেন। আমদানিকৃত পণ্য রাইফেল হিসেবে নিয়মিত শুল্ক পরিশোধ করে কাস্টমস হাউস ঢাকা থেকে খালাসের মাধ্যমে রাইফেল হিসেবে বিক্রির জন্য গুদামজাত হয়। তাদের আমদানি করা অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি মিনাল শরীফ নিজের বৈধ লাইসেন্স দেখিয়ে ক্রয় করেন।

তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানতে পারেন, ২০১৫ সাল থেকে গত ৫ বছরে রাজধানীর লাইসেন্সধারী ছয়টি অস্ত্র বেচাকেনার প্রতিষ্ঠান ১১১টি .২২ বোরের উজি পিস্তল আমদানি করে। এর মধ্যে ৫৩টি উজি পিস্তল তারা লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের কাছে বিক্রি করেছে। এখনো ৫৮টি উজি এসব প্রতিষ্ঠানে রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ এমএইচ আর্মস কোং, মঈন আর্মস কোং, আহম্মদ হোসেন আর্মস কোং, মেসার্স তোজাম্মেল হোসেন কোং এবং শফিকুল ইসলাম আর্মস অ্যান্ড কোং।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ডিবি কর্মকর্তা দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, এটি একটি মিলিটারি গ্রেডেড অস্ত্র। যা বাংলাদেশে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেলজিয়াম আর্মড ফোর্সেস ও ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্সে এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। অস্ত্রটির বিষয়ে আমরা সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ মতামত চেয়ে আবেদন করেছিলাম। তাদের মতামতের ভিত্তিতে এরই মধ্যে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞ মতামতে বলা হয়, আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যবহার করা পিস্তলের চেয়েও এটি অত্যাধুনিক। এর ম্যাগাজিনের ধারণক্ষমতা ২০ রাউন্ড। আর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ব্যবহৃত পিস্তলের সর্বাধিক ম্যাগাজিন ধারণক্ষমতা ১৫ রাউন্ড। এ ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা ভিআইপিদের নিরাপত্তায় ব্যবহৃত হতে পারে। অস্ত্রের লাইসেন্সে ক্যালিবার ছাড়া অস্ত্রের ধরন সুনির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন। অস্ত্রের লাইসেন্স পিস্তল বা রাইফেল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকলেও ম্যাগাজিনের ধারণক্ষমতা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।

ডিবির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল বলেন, প্রাথমিকভাবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত অস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানসংক্রান্ত পরিপত্র অনুযায়ী উজি পিস্তল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ব্যবহারের সুযোগ নেই। .২২ বোর রাইফেলের লাইসেন্স সরকার দেয়। কিন্তু এটা রাইফেল নয়, পিস্তল। রাইফেলের লাইসেন্স নিয়ে এই পিস্তল ব্যবহার করছেন অনেকে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, সেনাসদর দফতরের মতামত পাওয়ার পর বিষয়টি উদ্বেগজনক এবং সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় আরও গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।

 
Electronic Paper