ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রায়ে সন্তোষ রাষ্ট্রপক্ষ, নাখোশ আসামিপক্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ২:৫২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২০, ২০২০

২০০১ সালে রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলায় পাঁচজন নিহত ও ২০ জন আহতের মামলায় ১০ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রবিউল আলম এ আদেশ দেন। এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করলেও নাখোশ আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষের আইনজীবী উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান।

রায় ঘোষণার ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও সিপিবিকে ধ্বংস করতে জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছিল। আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।

রায় প্রকাশে দীর্ঘসূত্রিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় ছিল। মামলা বানচাল করতে তারা সময়ক্ষেপণ করেছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে আসামিদের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি মর্মে তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর নতুনভাবে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হয়। যে কারণে মামলার রায় হতে ১৯ বছর সময় লেগে গেছে।

এর আগে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক রবিউল আলম দীর্ঘ ১৯ বছর পর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২০ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। এ মামলায় ৪৬ জন বিভিন্ন সময় সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির সমাবেশে দুর্বৃত্তরা বোমা হামলা চালায়। এতে পাঁচজন নিহত ও ২০ জন আহত হন। হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন সিপিবি নেতা হিমাংশু মণ্ডল, আবদুল মজিদ, আবুল হাশেম ও মুক্তার হোসেন। আহত হওয়ার ১৩ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ছাত্র ইউনিয়ন নেতা বিপ্রদাস। এ ঘটনায় সিপিবির তৎকালীন সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত শেষে সিআইডি ২০১৩ সালের ২৭ নভেম্বর ১৩ জনকে আসামি করে মামলার অভিযোগপত্র দেয়।

পরে ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। মামলার অন্যতম আসামি মুফতি আবদুল হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।

এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলার সঙ্গে যোগসূত্র পেয়ে ২০০৫ সালে আবার মামলার তদন্ত শুরু হয়। ওই হামলায় মামলা হওয়ার ১৩ বছর পর ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক মৃণাল কান্তি সাহা ১৩ জন আসামি চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার অতিরিক্ত তৃতীয় মহানগর দায়রা জজ আদালত।

মামলার আসামিরা হলেন- হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, হুজির সদস্য মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা সাব্বির আহমেদ, শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মো. মশিউর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মহিবুল মুত্তাকিন, আমিনুল মুরসালিন, মুফতি আব্দুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিরাজ ও নূর ইসলাম।

আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, মামলাটিতে প্রথম চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছিল। পরবর্তীতে আবার তদন্তে গিয়ে চার্জশিট হয়। এ মামলায় সিপিবির সদস্য হিমাংশু মণ্ডলকে আসামি করা হয়েছিল। জেলও খেটেছে সে। পরে তাকে খালাস দেয়া হয়েছে। আর আমার আসামিদের সাজা দেয়া হয়েছে। কাউকে খুশি করতে আদালত এ রায় দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অন্তঃকোন্দলের কারণে সেদিন হামলার ঘটনা ঘটে। সিপিবি ছোট সংগঠন, দুর্বল পার্টি। হাইলাইটে আসার জন্য নিজেরা এরকম ঘটনা ঘটিয়েছে। তাছাড়া তারা তাদের সাউন্ড সিস্টেম উন্নত মানের ছিল না, পুরাতন সাউন্ড সিস্টেম ব্লাস্ট হয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান তিনি।

 
Electronic Paper