ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫ ধারা কেন অবৈধ নয়

হাইকোর্টের রুল জারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ০২, ২০১৯

বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯১ এর ১৫ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ‘ভাড়া নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগসহ বাড়িভাড়ার বিদ্যমান অসংগতি দূর করে মানসম্মত বাড়িভাড়া নির্ধারণে সুপারিশ প্রণয়নে অনুসন্ধান আইন-১৯৫৬ এর ৩(১) ধারা অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে গতকাল আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাইনুল হাসান।

আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক, বাড়ি-মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কোনো বাড়ির মানসম্মত ভাড়া নির্ধারণ করিবেন এবং এমনভাবে উহা নির্ধারণ করিবেন যেন উহার বাৎসরিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থিরকৃত উক্ত বাড়ির বাজারমূল্যের ১৫% সমান হয়। তবে শর্ত থাকে যে, যেক্ষেত্রে মানসম্মত ভাড়ার পরিমাণ চৎবসরংবং জবহঃ ঈড়হঃৎড়ষ ঙৎফরহধহপব, ১৯৮৬ (ঢঢওও ড়ভ ১৯৮৬) এর অধীন নির্ধারণ করা হইয়াছে সেক্ষেত্রে অনুরূপভাবে নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া, নিয়ন্ত্রক কর্তৃক সংশোধন বা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত এ ধারার অধীন নির্ধারিত মানসম্মত ভাড়া হিসাবে গণ্য হইবে। সম্পূরক আবেদনে বলা হয়, ২০১০ সালের ১৭ মে হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৫ সালের ১ জুলাই পর্যবেক্ষণসহ জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করা হয়। কিন্তু রায় প্রকাশের আগেই ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বজলুর রহমানের অকাল মৃত্যু হলে বাদীপক্ষ রায়ের অনুলিপি পাননি। পরে এ রিট মামলাটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে হাইকোর্টের এ বেঞ্চে আসে।

মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনে ভাড়া নির্ধারণ করার যে পদ্ধতি বলা আছে, সে পদ্ধতি অনুসারে এখন যে বাসার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সে বাসার ভাড়া হবে ৯০ হাজার টাকা। এটাই হলো দেশের প্রচলিত আইন। এ কারণে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিধান ছিল সে ব্যাপারে কেউ আদালতে যাচ্ছে না। কারণ এটা অসম্ভব এবং অকার্যকর। এ পরিপ্রেক্ষিতেই এইচআরপিবির পক্ষ থেকে আইনটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত শুনেছেন। তিনি আরও বলেন, মানসম্মত বাড়িভাড়া নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। ফলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালাই ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়াচ্ছেন, অনেক ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এই সব নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে। কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবেন, আইনি জটিলতা এতটাই বড় যে সে কারণে সেটা তারা পারছেন না। এই কারণে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের জন্য। সেই আবেদন শুনে আদালত রুল জারি করেছেন বলে জানান মনজিল মোরসেদ।

যে কারণে হাইকোর্টে বাড়িভাড়া?
১৯৯১ সালে বর্তমানে প্রচলিত বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনটি জারি করা হয়। অন্যদিকে ১৯৯১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)। এ আইনের বিধান কার্যকর না হওয়ায় এবং কোন এলাকার ভাড়া কত হবে, তা সুনির্দিষ্ট করে সরকার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করুক, এটি কার্যকর চেয়ে ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট করা হয়। একই বছরের ১৭ মে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনে বলা হয়েছিল, বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রসিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিস দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকরা সেটা পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসারেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। এ রিটের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন কার্যকরের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে সরকারের প্রতি রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

 
Electronic Paper