ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নকল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি

দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:০৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৯

ভেজাল-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ, বাজারজাত ও বিক্রির কারণে যাদের জেল-জরিমানা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিশেষ ক্ষমতা আইনের এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ড দেওয়ারও বিধান রয়েছে।

মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিবেদন দেখে বিচারপতি এ কে এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিকভাবে এ নির্দেশনা দেন। এ দিন ‘মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রয়ে গৃহীত কার্যক্রম’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

প্রতিবেদন দাখিলের পর রিটের শুনানিকালে আদালত বলেন, একই ফার্মেসিতে একাধিকবার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়া গেলে নিয়মিত মামলা দায়ের করতে হবে। ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ফার্মেসির বিরুদ্ধে শুধু ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা পর্যাপ্ত নয়। ভেজাল ওষুধের সঙ্গে জড়িতদের যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদ- হওয়া উচিত। এ সময় বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ লিখে চিকিৎসকদের কমিশন খাওয়ারও সমালোচনা করেন হাইকোর্ট। পরে আগামী ১২ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন আদালত।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য ইতোমধ্যে যাদের জেল-জরিমানা করা হয়েছে, তারা যদি আবার একই ধরনের অপরাধে অভিযুক্ত হন, তখন তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়েরের জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত।

তিনি বলেন, ভেজাল বা মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের জন্য এখন সাত দিন বা একমাস বিনাশ্রমে দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হলে যাবজ্জীবন এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। ফলে যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের আমরা হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, যেন তারা মেয়াদোত্তীর্ণ, ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণ না করেন, বিক্রি না করেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, গত দুই মাসে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে। একই সময়ে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

গত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ‘মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ বিক্রি বন্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়ে ১৩ হাজার ৫৯৩টি ফার্মেসি পরিদর্শন করে মোবাইল কোর্টে ৫৭২টি মামলা করা হয়। এতে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল ও ভেজাল ওষুধ সংরক্ষণের দায়ে দুটি ফার্মেসি সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়াও একই সময়ে ৩৪ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ১৪৩ কোটি টাকার মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ধ্বংস করা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ বি এম আলতাফ হোসেন। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি। বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।

মঞ্জুরুল হক বলেন, অভিযানের সঙ্গে আমরা একমত। নকল ওষুধ যেন বাজারে না থাকে, এটা আমরাও চাই। একটা আবেদন ছিল ওষুধের নাম যেন বাংলায় লেখা থাকে। আমরা প্যাকেট খুলে দেখিয়েছি, বাংলায় লেখা আছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ইংরেজিতে লেখা। আদালত স্ট্রিপেও (ওষুধের পাতায়) বাংলায় চেয়েছেন। স্ট্রিপে ইংরেজিতে লেখা আছে। আমরা বলেছি, ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বসব। বসে যতটুকু সম্ভব করব। ইতোমধ্যে অনেকগুলো বাংলায় হয়ে গেছে। আদালতের চাওয়া শতভাগ যেন হয়। আমাদের বিদেশেও ওষুধ পাঠাতে হয়। তাই সবকিছু ঠিক করে একটি প্রতিবেদন দেব।

আদালতকে উদ্ধৃত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টিটিভ) দিয়ে চিকিৎসকদের প্রভাবিত করার জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে সেটা বন্ধ করার জন্য ওষুধ শিল্প মালিক সমিতিকে আদালত নির্দেশনা দিয়েছেন, যেন এ ধরনের কোনো অনিয়ম বা অন্যায় না হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে পরবর্তীতে আদালত আদেশে বা নির্দেশনা দিতে পারেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদ বাশার বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইন, ২০০৯’র ৫১ ধারায় স্পষ্ট বলা আছে, অন্যান্য দ্রব্যের মতো মেয়াদোত্তীর্ণ-ভেজাল ওষুধও যেন কেউ বিক্রি করতে না পারে। সেজন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
সেজন্য আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে অভিযান পরিচালনা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধের প্যাকেট এবং ওষুধের পাতায় যেন স্পষ্ট করে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, মূল্য এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বাংলা এবং ইংরেজিতে ছাপিয়ে বাজারজাত করেন সেজন্য ঔষধ শিল্প সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জনস্বার্থে এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানির পর সারা দেশে বাজার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ প্রত্যাহার, জব্দ ও ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গণ ২৮ জুন রুলসহ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহকারী, সংরক্ষণ ও বিপণনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

রুলে ফার্মেসি, ঔষধাগারে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও সংরক্ষণ বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, বাণিজ্য সচিব, শিল্প সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও উপ-পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সভাপতি ও মহাসচিবকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আদালতে প্রতিবেদন দিল ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর।

গত ১০ মে এক অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয়। এ বিষয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদন যুক্ত করে জাস্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশনের পক্ষে এর নির্বাহী পরিচালক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন গত ২৪ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেছিলেন।

 
Electronic Paper