ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কোন পথে তিন বিচারপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:৩৫ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০১৯

উচ্চ আদালতের তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠার পর তাদের ছুটিতে পাঠিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। অনিয়মের কথা বলা হলেও স্পষ্ট করে বলা হয়নি তাদের বিরুদ্ধে ঠিক কোন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বলছে, অসদাচরণের অভিযোগে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পরিপ্রেক্ষিতেই হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ওই তিন বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টে ছুটির আবেদন জানান। তারা হলেন- বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হল ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক। তবে অভিযোগ উঠলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন পথে কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তাই দেখার বিষয়। আইনজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অসদাচরণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে এখন ‘সাংবিধানিক শূন্যতা’ বিরাজ করছে। কারণ হিসেবে তারা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের বিষয়টি বলছেন।

জানা যায়, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে বিচারপতিদের অসদাচরণ তদন্ত ও অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেওয়া আলোচিত ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহাল থাকায় বিচারপতিদের অসদাচরণ তদন্ত ও অপসারণের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হাতেই ফিরেছে। এখন দেখা বিষয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন কি পদক্ষেপ নেন।

তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা আপিল বিভাগের রায়ে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ উপ-অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়। কিন্তু বিচারপতিদের পদত্যাগ সংক্রান্ত ৮ নং উপ-অনুচ্ছেদটি পুনর্বহাল না হওয়ায় কোনো বিচারপতির সাংবিধানিকভাবে পদত্যাগের সুযোগ থাকছে না।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, পদত্যাগের সাংবিধানিক পথ খোলা থাকায় এর আগেও একাধিক বিচারপতি পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে একজন জাল সার্টিফিকেটের কারণে, একজন ঘুষের ঘটনায় এবং আরেকজন একজন লিফলেট বিতরণের ঘটনায় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের পদক্ষেপ চলাকালীন সময়েই পদত্যাগ করেন। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় আপিল বিভাগ বহাল রাখলেও তা স্থগিত করেননি। ফলে বিচারপতিদের অসদাচরণ তদন্ত ও অপসারণের ক্ষমতা এখন সংসদের হাতে নেই। অর্থাৎ এ বিষয়টি দেখভাল করার কথা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের।

এই পরিস্থিতিতে সাংবিধানিক কোন পথে তিন বিচারপতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে-সেটাই এখন দেখার বিষয়। আর যেহেতু রাষ্ট্রপক্ষও ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের বিরুদ্ধে রিভিউ করেছে, তাই ওই রিভিউয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটছে না। অর্থাৎ রিভিউয়ের রায়ে যে প্রক্রিয়াটি সাংবিধানিকভাবে চূড়ান্ত হবে সে পথেই বিচারপতিদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি রায় বহাল থাকে তবে সমস্ত ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের হাতেই থাকছে। আর যদি রায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় বহালের বিরুদ্ধে যায় তবে এ প্রক্রিয়া চলে যাবে সংসদের হাতে।

তবে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে প্রাতিষ্ঠানিক নোটিস জারি না করেই প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে তাদের বিচারিক কাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ তারা যদি সত্যিই ‘নীতি বহির্ভূত’ কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত থাকেন তবে ন্যায় বিচারেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

 
Electronic Paper