ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

অদিতির ভালোবাসা জিতল হাইকোর্টে

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ০১, ২০১৯

২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর নিম্নবর্গীয় হরিজন সম্প্রদায়ের তুষার দাস ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণকন্যা সুষ্মিতা দেবনাথ অদিতিকে। কিন্তু অদিতির মা নাবালিকা মেয়েকে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন তুষারের বিরুদ্ধে। শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও তুষারকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। এর মাঝে অদিতির কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক সন্তান। তিনি স্বামীর ন্যায়বিচারের দাবিতে হাইকোর্টে আপিল করেন। অবশেষে হাইকোর্টের আদেশে জয় হলো ভালোবাসার। তুষার দাস জামিন পেয়েছেন। এখন স্বামীর কারামুক্তির অপেক্ষায় রয়েছেন অদিতি।

আজ (১ আগস্ট) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তুষারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন শিশির মুহাম্মাদ মনির ও মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসাইন। রায় ঘোষণার পর অদিতি জানান, দুই বছর আগে তারা ভালোবেসে বিয়ে করেন। কিন্তু এই বিয়ে মানেননি তার ব্রাহ্মণ পরিবার। তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- দেন শরীয়তপুরের জেলা জজ আ. ছালাম খান। অদিতি স্বেচ্ছায় বিয়ে করার কথা বললেও আমলে নেননি নিম্ন আদালত।

আদালত রায়ে বলেছিলেন, ‘আসামি তুষার দাস ভিকটিম অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদ- ও ২০ হাজার টাকা অর্থদ- এবং অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।’

গত ৩ জুলাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন।

আজ সন্তান কোলে নিয়ে আদালতে আসেন অদিতি। তিনি বলেন, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাক্ষণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিবাহ করেছি। আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। ৮৮ দিন বয়সের শিশুসন্তান নিয়ে আমাকে ফেরারি হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামীকে মুক্তি দিন।’

এ সময় আদালত বলেন, ‘আমাদের সমাজে এরকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের সমাজে উঁচু-নীচু জাতের একটা সমস্যা রয়েছে।’ একই সঙ্গে ১৪ বছরের কারাদ- নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আদালত বলেন, ‘এই জজ সাহেব (নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণাকারী বিচারক) সবকিছু একদিনেই করেছেন। এভাবে যদি সারা দেশের বিচারকরা মামলার বিচার করেন, তাহলে নিম্ন আদালতে মামলার জট থাকার কথা না!’

অপহরণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়া প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, ‘যেখানে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি রায়েই বলা হয়েছে, সেখানে অপহরণের অভিযোগে কীভাবে সাজা দেয়?’ এরপর তুষারকে জামিন দিয়ে তাকে নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড স্থগিত করেন আদালত।

 
Electronic Paper