ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ | ১০ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

নয়ন বন্ডরা একদিনে তৈরি হয় না

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে হাইকোর্টের সতর্কবার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১০:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৪, ২০১৯

বরগুনায় প্রকাশ্যে শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা মামলার অগ্রগতি জানার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। ক্রসফায়ারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এ সময় আদালত বলেন, নয়ন বন্ডরা একদিনে তৈরি হয় না। অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে আইনি সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের বিষয়েও জোর দেন হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিফাত হত্যা মামলার অগ্রগতি তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাসার। তিনি আদালততে জানান, এ মামলার কোনো আসামি দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারেনি। এরই মধ্যে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন এবং সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড নিহত এবং অন্য আসামিদের ধরতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গত ২৬ জুন বরগুনায় শহরের সড়কে দিনে-দুপুরে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবক রিফাতকে। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় ওঠে সারা দেশে। রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বর্ণনায় নাম আসা প্রধান তিন হামলাকারীকে কয়েক দিনেও গ্রেফতার করতে না পারার সমালোচনা চলছিল দেশজুড়ে। এরমধ্যেই গত সোমবার সকালে পুলিশ প্রধান আসামি নয়নের ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার খবর দেয়।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মামলার অগ্রগতি জানানোর পর বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কামরুল কাদের বলেন, আমরা (বিচার বিভাগ) কখনোই নির্বাহী বিভাগের যেসব দায়িত্ব পালন করার কথা সেসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। এটা তাদের দায়িত্ব, তাদের রুটিন ওয়ার্ক। যদি সেখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটে তখনই শুধু বিচার বিভাগ নির্দেশনা বা হস্তক্ষেপ করে থাকে। তবে আমার এক্সট্রা জুডিশিয়াল (বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড) কিলিং পছন্দ করি না। হয়তো প্রয়োজনের খাতিরে অনেক সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী তা বাহিনী করে থাকে। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। আইন যে সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে সেটা যেন নিশ্চিত হয়।

বিচারক আরও বলেন, একদিনে এ নয়ন বন্ডরা তৈরি হয় না। কেউ না কেউ তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে থাকে। কেউ না কেউ লালন-পালন করে ক্রিমিনাল বানায়।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাসার সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। উনারা একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেছেন। আমরা আদালতের কাছে সে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছি। এ বিষয়ে সার্বিক অগ্রগতি অবহিত করেছি। এ মামলায় ১২ জন এজাহারনামীয় আসামি আছেন। তার মধ্যে পাঁচজন গ্রেফতার হয়েছেন। নয়ন বন্ড নামে একজন আসামি ঘটনাস্থলে গুলিতে মারা যান বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ পর্যায়ে আদালত নয়ন বন্ড কীভাবে মারা গেল জানতে চাইলেন তিনি বলেন, আমরা জানিয়েছি পুলিশের কাছে গোপন সংবাদ ছিল অত্র মামলা আসামিরা সেখানে অবস্থান করছেন। পুলিশ সেখানে গিয়েছে এবং পুলিশের উপরে প্রথমে অতর্কিতভাবে গুলিবর্ষণ শুরু হয়। তখন পুলিশ নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য পাল্টা গুলি চালালে সেখানে একজন মারা যান। ইতোমধ্যে এলাকাবাসী সেখানে ছুটে আসে। এলাকাবাসীই প্রথম নয়ন বন্ডকে শনাক্ত করে। তারপর তারা জানতে পারেন নিহত ব্যক্তিই নয়ন বন্ড ছিল। সেখানে তার গ্রুপ ০০৭-এর অন্যান্য সদস্য ছিল। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা এবং একটি অস্ত্র আইনের মামলা হয়েছে। বিষয়গুলি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে কোনো ধরনের রুল জারি করেননি। কিন্তু পরবর্তীকালে যদি প্রয়োজন হয় উনারা তা জানতে চাইবেন। তদন্ত পরবর্তী যা-ই আসবে তা আদালতে উপস্থাপন করা হবে বলে জানান এ আইন কর্মকর্তা।

এর আগে গত ২৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বরগুনায় রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন। সেদিন আদালত রিফাত হত্যা মামলার আসামিরা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে, সেজন্য সীমান্তে সতর্কতা জারি করতে বলেন। মূল আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় সেদিন আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেন, এমন ঘটনায় পুলিশের আরও তৎপর হওয়া উচিৎ ছিল।

সেদিন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এফ আর এম নাজমুল আহসান বলেন, দেশের পরিস্থিতি কোথায় গেছে! অনেকে দাঁড়িয়ে দেখলেন। কেউ প্রতিবাদ করলেন না। সমাজ কোথায় যাচ্ছে? আমারা সবাই মর্মাহত। এরপর আদালত মামলার অগ্রগতি শুনতে আজকে (৪ জুলাই) দিন ঠিক করে দিয়েছিলেন।

 
Electronic Paper