ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

ক্ষমা পাননি সিভিল সার্জন

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ১:১৯ অপরাহ্ণ, মে ২৩, ২০১৯

পটুয়াখালীতে মাদ্রাসাছাত্রী সীমাকে (১৩) গণধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় অসঙ্গতিপূর্ণ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করায় সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধর্ষণের পর হত্যা মামলার ডেথ সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি থাকায় গত ৭ মে এর কারণ ব্যাখ্যা করতে ওই জেলার সিভিল সার্জনকে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বুধবার এ ঘটনায় পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. শাহ মো. মোজাহিদুল ইসলাম আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করলেও তা মঞ্জুর করা হয়নি।

উল্টো তার বিরুদ্ধে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বিপরীতধর্মী তথ্য দেওয়ায় ওই সিভিল সার্জন এবং মেডিকেল অফিসার রেজাউর রহমানের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানপূর্বক ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন আদালত।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।

গত বছর ২৪ অক্টোবর ধর্ষণের পর হত্যার শিকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সীমার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রেজাউর রহমান প্রতিবেদনে লেখেন, ‘গলায় দাগ রয়েছে, শ্বাসরোধে মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। তবে এটা দুর্ঘটনাজনিত কারণে হতে পারে।’ ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. শাহ মো. মোজাহিদুল ইসলাম।

আদালত সিভিল সার্জনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘এভাবে যদি ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেন তাহলে জাতির কাছে কী বার্তা যায়? এভাবে রিপোর্ট দেওয়ার কারণে একটা মামলার বিচার প্রভাবিত হয়, এমনকি রায় ভিন্ন হয়। যেখানে বাদী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়।’ পরে আদালত সিভিল সার্জনের ক্ষমার আবেদন নাকচ করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।

আদালত আরও বলেন, ‘যেখানে মেয়েটির মা ধর্ষণের পর হত্যা করার অভিযোগে মামলা করেছেন, সেখানে চিকিৎসক ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে কীভাবে অসঙ্গতিপূর্ণ মন্তব্য করেন?’

ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ বলেন, ধর্ষণের শিকার নিহত শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বর্ণনায় চারটি ক্ষতের কথা উল্লেখ আছে। অথচ মন্তব্য অংশে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা বলা হয়েছে, যা দুর্ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে গরমিল থাকায় পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনসহ ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসা বোর্ডের সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

সীমা পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী হামিদিয়া মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। গত বছরের ২৪ অক্টোবর সীমাকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ঘটনার তিন মাস পর গত ৩ জানুয়ারি পটুয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নালিশি অভিযোগ করা হয়।

সীমার মা তাসলিমা বেগম বাদী হয়ে আটজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন। প্রথমে থানায় মামলা করতে গেলে থানা পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনি। এ মামলার আসামি দানেশ চৌকিদার হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। ওই জামিন আবেদনে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আসামি পক্ষ। সেখানে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রেজাউর রহমান প্রতিবেদনের তথ্য লেখেন। ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সিভিল সার্জন।

 

 
Electronic Paper