ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রূপপুরের বালিশ-কেটলিকাণ্ড: প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, মে ২০, ২০১৯

পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা প্রতিটি বালিশের দাম এবং তা ফ্ল্যাটে উঠাতে ৭৬০ টাকা খরচ দেখিয়ে ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিনসিটি আবাসন পল্লীর এসব আসবাবপত্র অকল্পনীয় মূল্যে কেনা ও তা ভবনে তোলার ঘটনায় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেখতে চান হাইকোর্ট।

এ জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আদালতের অবকাশকালীন ছুটির পর অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কোর্টে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে, এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করে রেখেছেন আদালত।

সোমাবার রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সরওয়ারদীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ সময় ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা তদন্তের জন্য ইতোমধ্যেই দুটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। তাই এ মুহূর্তে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না। তারা কি প্রতিবেদন দেন দেখা হোক।’

এর আগে এ ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত চেয়ে রোববার (১৯ মে) হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করেন।

রিটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সচিব, পাবনার গণপূর্ত অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

আজ শুনানিতে রিটকারী আইনজীবী জানান, ১২৫টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি টাকা! যা প্রত্যেক ফ্ল্যাটের জন্য খরচ পড়ে ২২ লাখ ৭০ হাজার টাকার মতো।

সম্প্রতি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ভবনের আসবাবপত্র কেনাকাটার নথিতে উঠে এসেছে পিলে চমকানো এমন খরচের তথ্য। ১২৫টি ফ্ল্যাটের আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে ওঠাতে ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৬৯ লাখ ৯২ হাজার ২৯২ টাকা!

শুধু তাই নয়, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন এবং অন্যান্য খাতেও আকাশচুম্বী ব্যয় দেখিয়ে গোটা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্পের একজন গাড়ি চালকের বেতন ধরা হয়েছে ৯১ হাজার এবং রাঁধুনী বা মালির বেতন ধরা হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। সরকারি অর্থের এমন যথেচ্ছ ব্যয় ও লুটপাটের চিত্র দেখে রীতিমতো আঁতকে উঠছে সাধারণ মানুষ। এক রূপপুরে বহু খাতের লুটপাটের চিত্রকে জনগণের টাকা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ‘রঙ্গ-তামাশা’ বলেই অভিহিত করছেন অনেকে।

গণমাধ্যমে এসব তথ্য উঠে আসার পর দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা একে সরকারি অর্থের ‘হরিলুট’ হচ্ছে বলে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনায় মুখর হয়েছেন সাধারণ মানুষ। সরকারি টাকার এই রেকর্ড লুটপাটের পেছনে গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা পূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে ইতোমধ্যে। যদিও সংশ্লিষ্টদের দাবি- সব নিয়ম মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গেই কেনাকাটা করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার কোনো সুযোগ নেই।

 

 
Electronic Paper