গ্যাটকো মামলায় খালেদা জিয়ার হাজিরা আজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
🕐 ৯:১৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০১৯
গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানি আজ সোমবার (১৮ মার্চ)। বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেনের আদালতে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ২৭ ফেব্রুয়ারি গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে ১টা ৫ মিনিটে তাকে আবারও কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেদিন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, জয়নাল আবেদিন মেজবা ও জিয়াউদ্দিন জিয়া আদালতের কাছে সময় আবেদন করেন। আবেদনে তারা বলেন, আগের শুনানিতে মামলার আলামতসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু আমরা এখনও সে সব নথি হাতে পাইনি। তাই আমরা শুনানি করতে পারছি না। আমাদের সময় দেয়া হোক।
এ সময় বিচারক সময় আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ১৮ মার্চ পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশারফ হোসেন কাজল অভিযোগ গঠন শুনানি করেন। শুনানি শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ৫ (২) ধারায় দণ্ডবিধির ৪০৯ ও ১০৯ এর আলোকে অভিযোগ গঠনের দাবি জানান তিনি। এর আগে ১০ জানুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিশেষ আদালতে হাজির করার জন্য প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন বিশেষ আদালত।
উল্লেখ্য, জরুরি বিধিমালা সংযুক্ত এ মামলার অভিযোগপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলাটি বাতিল চেয়ে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। রিট আবেদনের কারণে নিম্ন আদালতে প্রায় আট বছর মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এরপর রিট খারিজ করে উচ্চ আদালত ২০১৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে দুই মাসের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই বছরের ৫ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান খালেদা জিয়া।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার বাদী হয়ে ১৩ জনের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১৩ মে জোট সরকারের নয়জন সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলার ২৪ জন আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূইয়া, এম শামছুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার এবং খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো মারা গেছেন। এ ছাড়া সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় অনুযায়ী ফাঁসিতে মৃত্যু কার্যকর করা হয়েছে। ফলে এ মামলায় বর্তমানে আসামির সংখ্যা ১৮ জন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌসচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং গ্যাটকোর পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন।
একই সঙ্গে মামলাটি জরুরি ক্ষমতা আইনের অন্তর্ভুক্ত করা কেন ‘বেআইনি ও কর্তৃত্ব বহির্ভূত’ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চাওয়া হয়। তবে হাইকোর্টের দেয়া স্থগিতাদেশ পরে আপিল বিভাগে বাতিল হয়ে যায়।
এরপর দুদক আইনে গ্যাটকো মামলা দায়েরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৮ সালে আরেকটি রিট আবেদন করেন খালেদা জিয়া। তার আবেদনে হাইকোর্ট আবারও মামলার কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং মামলাটি কেন বাতিলের নির্দেশ দেয়া হবে না-এ মর্মে রুল জারি করেন।
মামলার ২৪ আসামির মধ্যে ৬ জন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। তারা হলেন- সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া, এম কে আনোয়ার, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেম ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো।
অন্য আসামিরা হলেন- বিএনপি দলীয় সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক চেয়ারম্যান কমোডর জুলফিকার আলী, প্রয়াত মন্ত্রী কর্নেল (অব.) আকবর হোসেনের স্ত্রী জাহানারা আকবর, দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল অ্যাগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, গ্যাটকোর পরিচালক সৈয়দ তানভির আহমেদ ও সৈয়দ গালিব আহমেদ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম শাহাদত হোসেন, বন্দরের সাবেক পরিচালক (পরিবহন) এ এম সানোয়ার হোসেন ও বন্দরের সাবেক সদস্য লুৎফুল কবীর।