দিঘলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ঘুষ কেলেঙ্কারি ফাঁস
মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০২২
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার দলিল লেখকদের কথোপকথনের কল রেকর্ডে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ঘুষ কেলেঙ্কারি চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়েছে। বিশেষ করে এ কথোপকথনে দলিল লেখকরা দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ প্রতি লাখে সাব-রেজিস্ট্রারকে ৫শ’ টাকা করে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। একই সঙ্গে তারা এভাবে আর ঘুষ দিবেন না বলেও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বিষয়েও মোবাইলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
এদিকে, দলিল লেখকদের বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় সাব- রেজিস্ট্রার দলিল করার ক্ষেত্রে দীর্ঘ বছরের প্রচলিত নিয়ম পরিবর্তন করে ‘কাগুজে নিয়ম’ চালু করেন। আর এ কারণেই ক্ষুব্ধ হয়ে দলিল লেখকরা প্রতিবাদ স্বরূপ দলিল লেখা বন্ধ করে দেন। এভাবে সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত তিন সপ্তাহ যাবৎ দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ রয়েছে।
অপরদিকে, সাব-রেজিস্ট্রার ও দলিল লেখকদের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মধ্যে হঠাৎ করে রহস্যজনকভাবে বুধবার দলিল লেখকরা ‘সংবাদ সম্মেলন’ করে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। কল রেকর্ডে তারা সাব-রেজিস্ট্রার শুভ্রা রাণী বাড়ৈয়ের বিরুদ্ধে ঘুষের বিষয়ে আলোচনা ও ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সংবাদ সম্মেলনে তারা সাব-রেজিস্ট্রারের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।
সম্প্রতি দিঘলিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জন দলিল লেখক পরস্পর মোবাইলে কথোপকথনে দলিল রেজিস্ট্রি বাবদ সাব- রেজিস্ট্রার কর্তৃক প্রতি লাখে ৫শ’ টাকা করে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে কথা বলেন।
তারা হলেন- সমিতির সভাপতি মোড়ল মফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ টুটুল, আনিসুর রহমান, রাজু কুমার সেন, আশরাফুল ইসলাম ও অপু দেবনাথ। উল্লিখিত দলিল লেখকরা স্থানীয় ‘জনৈক’ একজন ব্যক্তির সঙ্গে এ বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে ঘুষের বিষয়ে কথা বলেছেন। যার রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে।
দিঘলিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোড়ল মফিজুর রহমানকে জনৈক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল কথোপকথনে বলতে শোনা যায়, সাব-রেজিস্ট্রার প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিচ্ছে। দলিল লেখকরা সবাই বসে এ ঘুষ না দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি।
সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ টুটুলকেও দলিল লেখকরা সবাই বসে ঘুষ বন্ধের বিষয়ে কি করা যায়- তা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া ঘুষ না দিলে সাব- রেজিস্ট্রার কর্তৃক দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়ার হুমকির বিষয়টিও উঠে আসে।
একইভাবে দলিল লেখক অপু দেবনাথও সাব-রেজিস্ট্রার শুভ্রা রাণী বাড়ৈ কর্তৃক দলিল বাবদ প্রতি লাখে ৫শ’ টাকা করে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি স্বীকার করেন। এমনকি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। কথোপকথনে দলিল লেখকরা সবাই সাব-রেজিস্ট্রারের ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি এক বাক্যে স্বীকার করেন এবং এ ঘুষ বন্ধের ব্যাপারে ঐক্যমত পোষণ করেন।
কিন্তু হঠাৎ করে কী কারণে তারা ‘সংবাদ সম্মেলন’ করে স্ববিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন- সে বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে দিঘলিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মোড়ল মফিজুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সমিতির নামে দলিল লেখকদের কর্মবিরতির বিষয়টি স্বীকার করেন।
দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার শুভ্রা রাণী বাড়ৈ ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে, অফিসে লেনদেনের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার না করলেও ‘সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বিষয়টি বোঝেন তো...’ বলে এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার দিপক কুমার সরকার বলেন, দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রির জন্য অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে দলিল লেখকদের একটি রশিদ প্রদানের কথা বলা হয়েছে। সেখানে অর্থ গ্রহণের সব তথ্য লিপিবদ্ধ থাকবে।
এদিকে দিঘলিয়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের ভ্রম (ভুল) সংশোধনের জন্য অর্থ দাবি এবং অসদাচারণের অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সরেজমিন দিঘলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা খুলনা সদর সাব-রেজিস্ট্রার মো. আনোয়ার হোসেন।
অভিযোগ রয়েছে- সাব-রেজিস্ট্রার শুভ্রা রাণী বাড়ৈ এবং অফিসের পেশকার (কেরাণী) মো. আব্দুল গণি ১৩টি দলিলের ভুল সংশোধনের জন্য দলিল প্রতি ৫ হাজার টাকা করে অর্থ দাবি করেন। একই সঙ্গে দলিল লেখক ফেরদাউস লিটুর বিরুদ্ধে অসদাচারণের অভিযোগ আনা হয়েছে।