ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

খুলনার চাঞ্চল্যকর হালিম হত্যার বিচার শুরু, অভিযুক্ত ৩০

মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২১

খুলনার চাঞ্চল্যকর হালিম হত্যার বিচার শুরু, অভিযুক্ত ৩০

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও দিঘলিয়া উপজেলার সেনহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চাঞ্চল্যকর গাজী আব্দুল হালিম হত্যা মামলার সপ্তম দফায় চার্জশিট আদালতে গৃহীত হয়েছে। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে চার্জশিট গ্রহণ করেন বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরী। একই সঙ্গে চার্জ গঠনের মাধ্যমে মামলাটি বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে স্থানান্তর করা হয়। আগামী ২৫ অক্টোবর মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মেহেদী হাসান।

এর আগে সপ্তম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে গত বছরের ২৩ আগস্ট আদালতে সপ্তম দফা চার্জশিট দাখিল করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশন (পিবিআই) পরিদর্শক শেখ আবু বকর। কিন্তু করোনাকালে আদালত বন্ধ থাকায় শুনানি পিছিয়ে যায়।

সূত্র জানায়, এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি পাঁচবার এবং থানা পুলিশ একবার মিলিয়ে ছয়বার এ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়। কিন্তু বাদীপক্ষের নারাজি পিটিশনসহ বিভিন্ন কারণে আলোচিত এ মামলাটির তদন্ত ও চার্জশিট দফায় দফায় দাখিল করা হয়।

জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পেশকার মেহেদী হাসান বলেন, চার্জশিটের ওপর শুনানিকালে মামলার বাদী নিহত আ. হালিম গাজীর স্ত্রী ফারহানা হালিম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি আদালতে চার্জশিটের বিষয়ে অনাপত্তি আবেদন দাখিল করলে আদালত তা বিচারের জন্য গ্রহণ করেন।

সপ্তম দফায় আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হচ্ছেন দিঘলিয়া উপজেলার চন্দনীমহল গ্রামের গাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে গাজী মো. ইমরান হাসান ওরফে মনিরুল, উপজেলার সুগন্ধি গ্রামের মৃত. সোহরাব মোল্লার ছেলে মোল্লা জুলকার নাইম ওরফে মারজান আহমেদ ওরফে মুন্না, খুলনা নগরীর খালিশপুরস্থ কাশিপুর রাজধানী মোড় এলাকার মনোয়ার হোসেন মন্টু শেখের ছেলে মো. ইসতিয়াক হোসেন ওরফে ইস্তি, নগরীর দেয়ানা দক্ষিণপাড়ার মৃত আফতাব ঢালীর ছেলে মোঃ শাকিল হোসেন রানা, পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার জোলাগাতী গ্রামের হানিফ হাওলাদারের ছেলে জাহিদ হাওলাদার, নগরীর দৌলতপুর কেশবলাল রোড এলাকার আইয়ূব আলী হাওলাদারের ছেলে তাইজুল ইসলাম ওরফে রাজু, দেয়াড়া গ্রামের মৃত. আব্দুল খালেক শেখের ছেলে মারুফ হোসেন শেখ, নগরীর খালিশপুর মুজগুন্নি উত্তর পাড়ার রুস্তম মল্লিকের ছেলে সেলিম মল্লিক, চন্দনীমহল গ্রামের গাজী সিরাজুল ইসলামের ছেলে গাজী রেজাউল ইসলাম ওরফে বাবু গাজী ও গাজী এনামুল হাসান ওরফে মাসুম, আব্দুস সালাম গাজীর ছেলে নূরুল ইসলাম গাজী ওরফে নূরু গাজী, চন্দনীমহল গ্রামের মৃত. আব্দুর রহমান শেখের ছেলে শাহীন শেখ, চন্দনীমহল গ্রামের গাজী জাহিদুল ইসলামের ছেলে গাজী মো. ইমরান হোসেন, চন্দনীমহল গ্রামের হাসান গাজীর ছেলে গাজী মো. জাহিদুল ইসলাম, সেনহাটি পশ্চিমপাড়ার আব্দুল আউয়াল মোল্লার ছেলে মানিক মোল্লা, চন্দনীমহল গ্রামের মৃত. আব্দুল মজিদের ছেলে আনিসুর রহমান, দেয়াড়া গ্রামের শাজাহান শেখের ছেলে মুরাদ ওরফে গালকাটা মুরাদ, চন্দনীমহল গাজীপাড়া এলাকার মো. আমজাদ সরদারের ছেলে মাসুদ সরদার, সেনহাটি গ্রামের বাকামিয়ার ছেলে মাসুদ, হাজীগ্রামের মৃত. মোস্তফা মোল্লার ছেলে দিদার মোল্লা, চন্দনীমহল গোরস্থানের মোড় এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে তরিকুল ইসলাম, স্টার জুটমিল ১নং গেট এলাকার মৃত. সিরাজুল হকের ছেলে হুমায়ূন কবির, মোঃ হাসেন আলীর ছেলে শেখ মনিরুল ইসলাম (সাংবাদিক), সেনহাটী গ্রামের সোহরাফের ছেলে মুরাদ, চন্দনীমহল গ্রামের মৃত আঃ মজিদ মল্লিকের ছেলে আব্দুল রকিব মল্লিক, নগরীর খালিশপুর এলাকার হানিফের ছেলে মোঃ মনিরুল, চন্দনীমহল গ্রামের মৃত হাশেম গাজীর ছেলে আজগর গাজী ও দৌলতপুরের পাবলা এলাকার মৃত সাংবাদিক আজিজ শেখের ছেলে শহীদুল ইসলাম শাহীন, চন্দনিমহল গ্রামের রুস্তম আলী মোল্লার ছেলে মোল্লা আকরাম হোসেন ওরফে আকরাম মোল্লা এবং নগরীর দৌলতপুরস্থ পাবলা ক্রসরোড এলাকার আলতা ভিলা ছাত্রী নিবাসের শহীদুল ইসলাম শাহীনের ছেলে শাওনুল ইসলাম শাওন।

অভিযোগপত্রে মোট ৭৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

সর্বশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামি রেজাউল ইসলাম ওরফে বাবু গাজীর বাড়িতে হালিম গাজীকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। মাসুম, মনিরুল, জাহিদুল ও আজগর গাজী পরিকল্পনাকারী ছিলেন।

আরও উল্লেখ করা হয়, দিঘলিয়া থানা এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ ছিল। হালিম গাজী তৎকালীন এমপি’র সমর্থনপুষ্ট হওয়ায় অন্যান্য গ্রুপ কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এলাকার বিভিন্ন ঠিকাদারী কাজ নিয়েও তার সঙ্গে এদের বিরোধ তৈরি হয়। অপরদিকে, ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গাজী সিরাজুল ইসলামের বড় ছেলে গাজী মো. ফিরোজের ভাই গাজী মাসুম, গাজী মনিরুল ও গাজী রেজাউলের ধারণা ছিল- হালিম গাজী ভবিষ্যতে ফিরোজ গাজীর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। সে কারণে সে (হালিম) ফিরোজ গাজীকে গুম করেছে। ভাই গুম হওয়ার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তারা হালিমকে হত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়। ঘটনার কয়েকদিন আগে কেআইটিসি মিলের লোহার গুঁড়া বিক্রিকে কেন্দ্র করে ম্যানেজার শাহীন, তার পুত্র শাওন এবং গাজী মনিরুলদের সাথে হালিম গাজীর হাতাহাতি হয়। এ কারণে তারাও হালিম হত্যায় যুক্ত হয়। এছাড়াও আসামি মুন্নার ভাই আরিফ নিহত হওয়ার ঘটনায় মুন্নাও হালিম গাজীকে দোষারোপ করত।

তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এসব গ্রুপ একত্রিত হয়ে যশোরের বেজপাড়ার হারুনের ছেলে আশিককে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে ঠিক করা হয়। তাকে ঘটনার তিন দিন আগে এনে দৌলতপুরের হোটেল বোরাকে রাখা হয়। এরপর তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে। ওই দিন সন্ধ্যায় দৌলতপুর দেয়ানায় এ হত্যাকাণ্ডের চুক্তি মোতাবেক টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র এখনও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর সেনহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হালিম দুপুর ৩টায় উপজেলা পরিষদ থেকে নূর গাজীর মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে গোয়ালপাড়া নামক স্থানে সন্ত্রাসীরা তার ওপর গুলিবর্ষণ করে। আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে পরদিন তাকে হেলিকপ্টার যোগে ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১১ সালের ২ নভেম্বর রাত ২টায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় ৩১ অক্টোবর হালিমের স্ত্রী ফারহানা হালিম তার স্বামীর ওপর হামলার ঘটনায় দিঘলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২৩ নভেম্বর তিনি ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি সম্পূরক অভিযোগ দাখিল করেন। এছাড়াও ২০১২ সালের ২ জানুয়ারি আসামি আনিসুর রহমান ও অপর একজনের বিরুদ্ধে আদালতে দ্বিতীয় দফায় সম্পূরক এজাহার দাখিল করেন। এ মামলার আসামি শাকিল হোসেন রানা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে ইসতিয়াক হোসেন ওরফে ইস্তিও আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এ মামলার প্রথম দফা চার্জশিট দাখিল করেন দিঘলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলী নওয়াজ। দ্বিতীয় দফা চার্জশিট দাখিল করেন খুলনার সিআইডি এসআই (নি.) এস এম হাবিবুল্লাহ, তৃতীয় দফা চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মিঠু রানী দাস, চতুর্থ দফা চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক (নি.) শেখ শাহাজাহান, পঞ্চম দফা চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি খুলনা মেট্রো’র সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. শাহাদাৎ হোসেন এবং ৬ষ্ঠ দফা চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি বাগেরহাটের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিয়ার রহমান।

 
Electronic Paper