খুলনাজুড়ে ডেঙ্গু ও শিশু রোগ
দেড় মাসে ২৪৭৯৪ জনের আউটডোরে চিকিৎসা, ভর্তি ২১৫৮ জন, বেড না পেয়ে চাপা উত্তেজনা রোগীর স্বজনদের
মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১
খুলনায় কমতে শুরু করেছে করোনা শনাক্তের হার। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা কমলেও উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে ডেঙ্গু ও শিশু রোগীর সংখ্যা। গত এক মাসে শুধু খুলনা শিশু হাসপাতালে নিমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ জন। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ২০৬ ছাড়িয়েছে। এদিকে, খুলনা বিভাগীয় এই শিশু হাসপাতালে বেড না পেয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শিশু হাসপাতালের তথ্য মতে, বছরের প্রথম সাড়ে সাত মাসে (জানুয়ারি থেকে ১৫ আগস্ট) ডেঙ্গু শনাক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ছিল ৫০। পরের এক মাসে আরও ১৫৬ জনের ডেঙ্গু জ্বর শনাক্ত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৬। চলতি বছর খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫৯ জন। অপরদিকে শুধুমাত্র খুলনা শিশু হাসপাতালেই গত আগস্ট মাসে নিমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১২ হাজার ৫৯৯ জন শিশু। ভর্তি ছিল ১ হাজার ৩১২ জন। ২০ দিনের ব্যবধানে সেপ্টেম্বর মাসে আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১২ হাজার ১৯৫ জন। ভর্তি হয়েছিল ৮৪৬ জন। মাত্র দেড় মাসে আউটডোরে মোট রোগী চিকিৎসা নিয়েছে ২৪ হাজার ৭৯৪ জন। মোট ভর্তি রোগী ২ হাজার ১৫৮ জন।
আমেনা খাতুন নামে এক শিশুর বাবা মো. রিপন বলেন, গত দুইদিন ধরে সন্তানকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করব বলে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করছি। কিন্তু সব হাসপাতাল থেকেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে। কিন্তু শিশু হাসপাতালে বেড খালি না থাকায় গত দুই দিন দেরি করেও ভর্তি করতে পারছি না সন্তানকে।
সুমি নামের এক শিশুর মা বলেন, একদিন ঘুরে সন্তানকে ভর্তি করতে পেরেছি। খুলনার অন্যান্য হাসপাতাল থেকে রেফার করে আমাদের শিশু হাসপাতালে পাঠায়। কিন্তু এখানে বেড কম থাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় সন্তানদের নিয়ে এখানে এসে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
খুলনা শিশু হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আল আমিন রাকিব বলেন, আমাদের এখানে ২৭৪টি বেড রয়েছে। যা রোগীর তুলনায় অনেক কম। আমরা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় ভর্তি করতে পারি না রোগীদের। সংকট কাটাতে শিশু হাসপাতালে আরও একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হলে রোগীদের ভোগান্তি অনেকটা কমে আসবে।
খুলনা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. জসিম উদ্দিন হাওলাদার বৃষ্টির মৌসুম থাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে স্বীকার করে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনসহ নানা কারণে ডেঙ্গুর পাশাপাশি খুলনায় উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে শিশু নিউমোনিয়া, জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগ। তবে খুলনায় যেসব রোগী ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ভর্তি হয়েছেন তার অধিকাংশই খুলনা জেলার বাইরের রোগী। অনেকে আছে যারা ঢাকা থেকে ফিরেছেন ডেঙ্গু রোগ নিয়ে, এখানে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে ডেঙ্গু ও স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ায় করোনা ও শিশু রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।