ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

২০ মণের ‘রাজা’ কাদেরের একমাত্র সম্বল, দাম চাচ্ছেন ১২ লাখ

লিটন ঘোষ জয়, মাগুরা
🕐 ৮:২৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৭, ২০২১

২০ মণের ‘রাজা’ কাদেরের একমাত্র সম্বল, দাম চাচ্ছেন ১২ লাখ

সরকারি আবাসনে সীমাহীন দারিদ্র্যতার সাথে তার বসবাস। দিন আনে দিন খাই। অভাবের সংসার। পেশায় তিনি ইজিবাইক চালক। অথচ পরম যত্নে পালন করেছেন ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বিশালাকার ষাড়। কালো সাড়টির বিশাল দেহ আর রাজকিয় চেহারার জন্য তিনি তার নাম দিয়েছে গরিবের রাজা।

তিন বছর আগে স্থানীয় রামনগর হাট হতে ৩৯ হাজার টাকায় ১ বছর বয়সের ফ্রিজিয়ান বাছুরটি ক্রয় করেন ইজিবাইক চালক মাগুরা সদরের রামনগর আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা কাদের মোল্লা। এরপর থেকে নিজে খেয়ে না খেয়ে খাবার জুগিয়েছেন ষাড়টির। ইজিবাইক চালিয়ে সামান্য আয় উপার্জনের অধিকাংশই অর্থই ব্যয় করেছেন একমাত্র সম্বল ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাড়টির পেছনে।

ষাড়টির ওজন আজ প্রায় ২০ মন বলে দাবি তার। উচ্চতায় সাড়ে পাঁচ ফিট, সাড়ে সাত ফিট লম্বা চার বছর বয়সী ষাড়টির দাম হাকছেন ১২ লক্ষ টাকা। তবে বাজার অনুপাতে ন্যায্য মুল্য পেলেই ষাড়টি বিক্রি করবেন তিনি।

বাজারে এ এলাকার সবচেয়ে বড় ষাড়ের স্বীকৃতি পেয়েছে তার এই গরুটি। দূর দুরান্ত হতে ষাড়টি দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন মানুষ। ভূমিহীন কাদের ষাড় বিক্রির টাকায় একমাত্র সন্তানের জন্য জমি কিনে বাড়ি করে দেয়ার সপ্ন দেখছেন। ষাড়টি চুরি হওয়ার ভয়ে নিজের টিনের ঘরের পাশে ইটের দেয়াল তুলে আটকে রেখেছেন। বিক্রির পরই দেয়াল ভেঙে বের করা হবে রাজাকে। কাদেরের সফলতা দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন আশ্রায়নে অন্য বাসিন্দারা। তবে করোনা পরিস্থিতিতে তার সে স্বপ্ন পুরণ নিয়ে শংকায় পড়েছেন মাগুরা রামনগর দুর্গাপুর আশ্রায়নের বাসিন্দা দরিদ্র কাদের।

কাদের জানান, অনেক স্বপ্ন ও সাধ করেই ৩৯ হাজার টাকায় ফ্রিজিয়ান জাতেরব একটি গরুর বাছুর কিনে পালন করছেন যার নাম দিয়েছিলেন “রাজা”। স্বামি স্ত্রী মিলে পরম যত্নে লালন পালন করছেন রাজাকে। তার মতো গরিবের সংসারে উন্নত জাতের রাজকীয় চেহারার ষাড়টি বেড়ে ওঠায় গরিবের রাজা নাম দিয়েছেন তিনি। ইজি বাইক চালিয়ে সামান্য উপার্যনের অধিকাংশই ব্যয় করেছেন রাজার খাবার জোগাতে। তবে বিদেশি জাতের হোলেও দেশীয় পদ্ধতিতে ঘাস, গমের ভুসি, খুদ ইত্যাদি খাবার খাইয়েছেন তিনি। এ বছর কোরবানি ঈদে ভালো মুল্যে বিক্রি করে সন্তানের জন্য এক টুকরো জমি ও ঘর তুলে দিতে চান ভূমিহীন কাদের। আবাসনের নিজের টিনের ঘরের কোনে চুরির ভয়ে ইটের দেয়াল ঘিরে গোয়ালে আটকে রেখেছেন রাজাকে। নিজের আসা যাওয়া জন্য সামান্য একটু দরজা রাখা আছে যেখান দিয়ে রাজাকে বের করার উপায় নেই। এক বছরের অধিক সময় ধরে বন্দি হয়ে আছে শান্ত স্বভাবের রাজা। দেখতে আসা সকলেই গায়ে হাত বুলিতে আদর করে শান্ত রাজার। ষাড়টি বিক্রি করে ভাগ্য বদলাবেন সে আশায় দিন গুনছেন তার পুরো পরিবার।

কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে বিক্রর জন্য এখনো তেমন সাড়া পান নি তিনি। সবশেষে লকডাউনের কারণে ইজিবাইক বন্ধ থাকায় নিজের আয়ের পথও বন্ধ ছিল। অনেকের থেকে ধার দেনা করেই রাজার খাবার জোগান দিচ্ছেন তিনি। আগেও দেনা হয়ে রয়েছেন। এখোনও বড় ব্যাপারীরা না আসায় বিক্রির জন্য তেমন সাড়া পাচ্ছেন না। ঢাকায় বড় হাটে নিয়ে যাবার সে সাধ্যিও নেই তার।

মাগুরা হতে রামনগর আশ্রয় কেন্দ্রে ষাড় দেখতে আসা যুবক টুটুল জানান, মানুষের মুখে ষাড়টির গল্প শুনে দেখতে এসেছেন তিনি। আশ্রায়নে এই স্থানে এইরকম বড় ষাড় তৈরি করে কাদের মোল্লার বিশেষ নজির তৈরি করলেন। যা দেখে অবাক হয়েছেন তিনি। স্থানীয়রা বলছেন এ বছর কাদেরের গরিবের রাজাই অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ষাড়।

আশ্রায়নে কাদেরের প্রতিবেশি মনিকা খন্দকার, শফি মন্ডলসহ অন্যান্যরা জানালেন, কাদের সামান্য উপার্যনে ইজিবাইক চালিয়ে নিজে খেয়ে না খেয়ে ষাড়টির খাবার জুগিয়েছেন। তার এই সফলতায় দেখে অন্যরাও তার মতো অন্তত একটি করে ষাড় পালনের জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। দরিদ্র কাদের মিয়ার ষড়টি বিক্রি করে স্বপ্ন পুরণ হোক, তার ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটুক এমনটি আশা করেেছন আশ্রায়নের প্রতিবেশিরা।

 
Electronic Paper