স্ত্রী-পুত্রসহ তিনজনকে হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি সৌমেনের
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
🕐 ৫:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৪, ২০২১
কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় স্ত্রী, সৎ সন্তান ও এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা মামলার আসামি সদ্য বরখাস্ত পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সৌমেন কুমার রায়কে আদালতে হাজির করা হয়েছে। সোমবার দুপুর ১টা ১০ মিনিটে কঠোর নিরাপত্তায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. রেজাউল করিমের আদালতে তাকে হাজির করা হয়। এ ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নিশিকান্ত সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিনজনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সৌমেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির আবেদন করা হলে বিচারক তার জবানবন্দি রেকর্ড করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সৌমেন জবানবন্দিতে, আসমা খাতুনকে দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে সম্পর্কের টানাপোড়েনে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে আদালতে দায় স্বীকার করেছেন।
এর আগে ঘটনার দিন রবিবার রাতেই নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল ইসলাম জানান, মামলায় এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করা হয়। ওই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
এদিকে নিহত তিন জনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার রাত ১২টার পর স্ব স্ব পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সোমবার সকালে নিহতদের লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে তাদের পরিবার নিয়ে যায়।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, শাকিলের মরদেহ তার বাবা মেজবাউল রহমানের কাছে এবং আসমা খাতুন ও তার ছয় বছর বয়সী ছেলের মরদেহ মা হাসিনা বেগমের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, বাদ জোহর নিহত আসমা খাতুন ও তার ছেলে রবিনের জানাজা শেষে নিজ গ্রাম কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের নাতুড়িয়া কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
অন্যদিকে নিহত শাকিল খানের নিজ গ্রাম কুমারখালী উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাঁওতা কারিগর পাড়া গ্রামের মেছের উদ্দিন দারুল উলুম কওমি মাদরাসায় বাদ জোহর জানাজা শেষে সাঁওতা কারিগর পাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এছাড়াও খুনের ঘটনায় এএসআই সৌমেন রায়কে রবিবার (১৩ জুন) বিকেলে বরখাস্ত করা হয়। এ ঘটনায় খুলনা রেঞ্জ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। খুলনা রেঞ্জের দুজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ কুষ্টিয়ার এক পুলিশ কর্মকর্তাকে তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
এদিকে তিন খুনের ঘটনাস্থল কাস্টমস মোড়ে, গভীর রাতে পুলিশের গাড়ি গিয়ে পানি দিয়ে রক্ত ধুয়ে দিয়েছে। ঘটনাস্থলের পাশের ভবন ও আশপাশের দোকানের নিরাপত্তায় থাকা নিরাপত্তাকর্মী খন্দকার রেজাউল হক প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এমন তথ্য দিয়েছেন। ঘটনাস্থলের তিনতলা ভবনের নিচতলায় কলাপসিবল গেটের ভেতরে আসমা ও শাকিলকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ভবনের সামনে রবিনকে হত্যা করা হয়। দুটি জায়গা পানি দিয়ে ধুয়েছে পুলিশ।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সব আলামত জব্দ করা হয়েছে। যেহেতু সেখানে রক্ত রয়েছে, এতে মানুষ ভয় বা আতঙ্কিত হতে পারে, এ জন্য রক্ত পরিষ্কার করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, রোববার কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে গুলি করে তিনজনকে হত্যা করা হয়। এই তিনজন হলেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের ভড়ুয়াপাড়া গ্রামের আমির আলীর মেয়ে আসমা খাতুন (৩৪), আসমার ছেলে রবিন (৬) ও একই উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সাওতা গ্রামের মেজবাউল রহমানের ছেলে শকিল খান (২৩)। রবিন আসমার সাবেক স্বামীর সন্তান। তিনজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে আসমার তৃতীয় স্বামী এএসআই সৌমেন রায়কে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। শাকিলের সাথে দ্বিতীয় স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড বলে তিনি স্বীকার করেছেন।
কুষ্টিয়া পুলিশ সূত্র জানায়, সৌমেন রায় ২০১৫ সালে কনস্টেবল থেকে এএসআই পদে উন্নীত হন। পরে ২০১৬ সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় যোগ দেন। সেখান থেকে জেলার অন্যান্য থানায়ও কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ মিরপুর থানার হালসা ক্যাম্পে ছিলেন। এরপর বাগেরহাট হয়ে খুলনা ফুলতলা থানায় যোগ দেন।