ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ | ১২ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রাত নামলেই শুরু হয় বিষ দিয়ে মাছ শিকার

তোফাজ্জল হোসেন, সুন্দরবন থেকে ফিরে
🕐 ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ০৫, ২০২১

রাত নামলেই শুরু হয় বিষ দিয়ে মাছ শিকার

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের অভয়ারণ্যের বিভিন্ন নদী ও খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। এছাড়া ঘুষ গ্রহণ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সাধারণ মৎস্যজীবী ও জেলেদের অভিযোগ, অভয়ারণ্যে মাছ শিকারের জন্য বরগুনার পাথরঘাটা ও বাগেরহাটের শরণখোলায় একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। চক্রটি রেঞ্জ কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে অভয়ারণ্যের খাল ও নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে মাছ শিকার করে।

চক্রের হোতা হলো- পাথরঘাটার পদ্মস্লাইস এলাকার হালিম খাঁ, পিরোজপুরের ভা-ারিয়ার ইকরির জাকির তালুকদার, শরণখোলার কদমতলার এমাদুল শরীফ, বকুলতলার চান্দু ও লিটন মাতুব্বরসহ আরও কয়েকজন। এদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শতাধিক জেলে নৌকা কাদেরের খাল, বেতমোর, বন্দে আলীর খাল, হুমরার খাল, কস্তুরা, ডিমেরচর, পক্ষীদিয়ার চর, দুধমুখী, ঝাপা, কচিখালী ও কটকা নদীসহ আশপাশে জাল পেতে ও কীটনাশক প্রয়োগে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ লাখ টাকার মাছ লুটে নিচ্ছে। এদের মধ্যে জাকির তালুকদার ও এমাদুল শরীফ বেতমোর, দুধমুখী নদী ও কটকা অফিসের সামনে, চান্দু কটকা জেটির সামনে ও টাওয়ারের খাল, হালিম খাঁ কটকা অফিসের পাশে কাদেরের খাল, জামতলা সি-বিচ ও দুধমুখীর বালির খাল এবং লিটন মাতুব্বর সিডাকটকা, কচিখালী সাপের খাল, অফিস খালসহ আশপাশের খালে মাছ ধরেন। এসব খালে সাধারণ জেলে ও বড়শির জেলেদের মাছ ধরতে দেওয়া হয় না।

এছাড়া লিটন মাতুব্বর সুন্দরবনে জেলেদের মাঝে কীটনাশক সরবরাহ করে মাছ ধরতে উৎসাহিত করে থাকেন। ইতিপূর্বে তাকে কয়েক মাস সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য পাস দেওয়া বন্ধ করেছিল বনবিভাগ। কিন্তু এসিএফ জয়নাল আবেদীন আবার লিটনকে মাছ ধরার সুযোগ করে দেওয়া।

মাছ ধরার জন্য জেলেরা সংশ্লিষ্ট এলাকার বিশেষ করে কটকা, কচিখালী, চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি ও সুপতি ফরেস্ট স্টেশনের বিএম আনেয়ার হোসেনের সঙ্গে গোন হিসেবে চুক্তি করেন। প্রতি গোনে ৯ দিনে জেলে গ্রুপ প্রতি ৩০-৪০ হাজার টাকা করে শামীম হোসেন নামের এক ইঞ্জিন ম্যানকে অগ্রিম দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান।

প্রতি মাসে দুটি গোনে মাছ ধরা জেলেদের কাছ থেকে ইঞ্জিনম্যান শামীমকে ৬-৭ লাখ টাকা আদায় করে এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে দিতে হয়। এই ইঞ্জিনম্যান শামীমকে দিয়েই এসিএফ জয়নাল আবেদীন শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন অনিয়ম করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এসব জেলে দিনের বেলায় সুন্দরবনের ছোট ছোট খালে নৌকাসহ নিজেদের লুকিয়ে রাখে। রাত নামলেই তারা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে ভোরেই আড়তে নিয়ে যায়। এসব মাছ প্রতিদিন ভোরে পাথরঘাটার পদ্মসøুইস বাজার ও বনসংলগ্ন শরণখোলা বাজারের মৎস্য আড়তে বিক্রি করে এবং পিকআপে খুলনা-ঢাকায় পাঠানো হয়।

জেলেরা আরও জানান, চিংড়ির জালে প্রতি গোনে প্রতিটি নৌকায় ৪০-৫০ মণ ছোট মাছ ধরা পড়ে, যা তারা নদী সাগরে ফেলে দেওয়া হয়। এতে ধ্বংস হচ্ছে সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ। কীটনাশক দিয়ে মাছ ধরার কারণে গত দুই গোনে চিংড়ি মাছ আগের মতো পাওয়া যাচ্ছে না। উল্লেখ্য, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় শরণখোলা রেঞ্জের সুপতি, কচিখালী ও কটকাসহ বেশ কিছু এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে সরকার। অভয়ারণ্যে এলাকার সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ। কারণ ওই এলাকাগুলোর নদী ও খাল মৎস্য প্রজননের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন দৈনিক খোলা কাগজকে বলেন, ‘সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর সঠিক নয়। তবে কিছু অসাধু লোক অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে অনেক সময় মিথ্যা অপবাদ ছড়ায়।’

সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘কটকা অভয়ারণ্যে মাছ ধরার খবর তার জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’

 
Electronic Paper