ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

কড়া নিরাপত্তায় সীমিত রাস উৎসব

মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
🕐 ১০:৪৭ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ২৮, ২০২০

বাংলাদেশের বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে এক আকর্ষণীয় উৎসবের নাম সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোর কোলের রাসমেলা বা উৎসব। সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনাকে ঘিরে এই রাসমেলা অনুষ্ঠিত হলেও ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রতিবছর হাজারো মানুষ এই মেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতসহ বিদেশ থেকেও অনেক ভক্ত ও দর্শনার্থী আসেন এই মেলায়।

আজ শনিবার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী সেই রাস উৎসবে শুধু থাকছে রাস পূর্ণিমার পূজা। করোনা পরিস্থিতির কারণে শুধু সনাতন (হিন্দু) ধর্মাবলম্বীরাই এ পূজায় ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। রাস পূজার জন্য প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত সবাইকে সঙ্গে রাখতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। আগামী সোমবার শেষ হবে এ আয়োজন।

উৎসবস্থলে তিন দিনের বনরক্ষীদের পাশাপাশি নিরাপত্তায় থাকবে র‌্যাব-৬ খুলনা, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা, নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবেন সেখানে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও ধর্মীয় স্পর্শকাতর উৎসব হওয়ায় যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দায়িত্বপালন করবেন তারা। এদিকে রাসপূজা উপলক্ষে পরিবেশ দূষণ রোধেও ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেটসহ বিভিন্ন দ্রব্য সাগর, নদী বা চরে ফেলায় দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এসব আবর্জনা ফেলতে ট্রলারে করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

জানা গেছে, আগামী রোববার সন্ধ্যায় সুন্দরবনের দুবলার চরে রাসপূজা ও সোমবার সকালে দুবলার চরসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে পুণ্যস্নানের মাধ্যমে এবারের আয়োজন শেষ হবে। বন বিভাগের নির্ধারিত বিভিন্ন শর্ত মেনে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে রাস পূজা উপলক্ষে মেলার আয়োজনের সুবিধা-অসুবিধা ও সংক্রমণের আশঙ্কা মাথায় রেখে এবার শর্ত সাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা এবং পুণ্যস্নানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মো. মোহসীন হোসেন জানান, রাস উপলক্ষে পুণ্যস্নান ও পূজায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, সুন্দরবনে প্রবেশ থেকে শুরু করে সার্বক্ষণিক মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। রাস পূজাগামী সব জলযানে এবং পূজা স্থলে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী (হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ) রাখতে হবে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বনে প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অনুষ্ঠানের অন্তত সাত দিন আগে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের অফিসে ভক্তদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও লঞ্চের কর্মচারীদের তালিকাসহ আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া সুন্দরবনে রাস পূজার জন্য প্রবেশের অনুমতিপ্রাপ্ত সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখতে হবে। শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ নিশ্চিত করতে বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা তাদের সঙ্গে রাখা জাতীয় পরিচয়পত্র পরীক্ষা করবেন। কোনো ট্রলার বা লঞ্চে ৫০ জনের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, রাস পূজায় প্রবেশের জন্য এবার পাঁচটি রুট নির্ধারণ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বুড়িগোয়ালিনি, কোবাদক থেকে বাটুলা নদী-বল নদী-পাটকোস্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী অতঃপর দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়–য়া, শিবসা নদী মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী-চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।

এবারের রাস পূজায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বনরক্ষীদের পাশাপাশি র‌্যাব-৬ খুলনা, কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন মোংলা, নৌবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োজিত থাকবেন। রাস উৎসবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ব্যতীত অন্য কেউ আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারবেন না। কোস্টগার্ডের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতি বছরের মতো এবারেও হাজার হাজার হিন্দু তীর্থযাত্রীর সমাগম ঘটবে বলে আশা করা যায়। এ উপলক্ষে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণসহ পুণ্যস্নানে আগত পুণ্যার্থী/তীর্থযাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সর্বদা নজরদারি রাখবে।

 
Electronic Paper