খুলনায় ঈদে করোনা ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা
মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ১০:৫৭ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ১৫, ২০২০
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে খুলনায় একদিকে পশুর হাটের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত রয়েছেন গরুর খামারি ও ব্যাপারীরা, অপরদিকে করোনা পরিস্থিতিতে প্রশাসনও ব্যস্ত হাটে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিয়ে। তবে, পশুর হাটের সঙ্গে সঙ্গে ইতিমধ্যেই উন্মুক্ত হয়েছে জেলার সব মার্কেট, শপিংমল ও দোকান পাট। আর নগর ও জেলার তিন রেডজোনের লকডাউনও উঠে যাচ্ছে ১৬ জুলাই থেকে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদুল আজহায় অসচেতন হলে করোনা ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ঈদুল ফিতর পরবর্তী পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রশাসনকে কঠোরভাবে হাট-বাজার নিয়ন্ত্রণের দাবি উঠেছে।
সূত্র জানায়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত বছর খুলনা মহানগর ও জেলায় পশুর হাট বসেছিল ৩০টি। এর মধ্যে জেলার নয়টি উপজেলায় ২৯টি ও মহানগরে ছিল একটি কোরবানির পশুর হাট। উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর মধ্যে ছিলÑ রূপসা উপজেলার তালিমপুর ও পূর্ব রূপসা বাসস্ট্যান্ড, ফুলতলা উপজেলা সদর, ডুমুরিয়া উপজেলার খর্নিয়া, শাহাপুর, আঠারো মাইল, চুকনগর, পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী, গদাইপুর, কাছিকাটা, পাইকগাছা জিরোপয়েন্ট, দাকোপ উপজেলার বাজুয়া, চালনা, কয়রা উপজেলার দেউলিয়া, গোবিন্দপুর, কালনা, ঘুগরাকাঠি, মান্দারবাড়িয়া, হোগলা, দিঘলিয়া উপজেলার এম এম মজিদ কলেজ মাঠ, জালাল উদ্দিন কলেজ মাঠ, পথেরবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তেরখাদা উপজেলার ইখড়ি কাটেঙ্গা, বটিয়াঘাটা উপজেলার বাইনতলা। এবারও উল্লিখিত স্থানগুলোতে হাট বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার অধিকাংশ হাটে চলছে প্রস্ততি। তবে, ১১টি স্থায়ী হাটের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এছাড়া জেলা প্রশাসন ‘কুরবানি হাট খুলনা’ অ্যাপ এবং ‘কুরবানি হাট খুলনা ডটকম’ নামে ওয়েবসাইটেও পশু ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধা চালু করেছে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সূত্র জানায়, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে মোট গবাদি পশু রয়েছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে গরু ৪০ হাজার ৯৬৮টি এবং ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া এবারের কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই সূত্র মতে, গত বছর খুলনা জেলায় খামারের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১টি এবং কোরবানির জন্য ৫১ হাজার ২৯৪টি পশু প্রস্তুত ছিল। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার খামারের সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ১১১টি আর গবাদি পশুর সংখ্যাও কমেছে ৬ হাজার ১০১টি।
কেসিসির পশু হাটে থাকবে জীবাণুনাশক টানেল
এদিকে, অন্যান্য বছরের মতো খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) আয়োজনে নগরের জোড়াগেটে কোরবানির পশুর হাট শুরু হবে আগামী ২৬ জুলাই থেকে। এটি খুলনা মহানগরের একমাত্র কোরবানির পশুর হাট। এ হাট চলবে ঈদের দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। ৯ জুলাই নগর ভবনে অনুষ্ঠিত কোরবানির পশুরহাট সংক্রান্ত এক প্রস্তুতি সভায় কেসিসি পরিচালিত জোড়াগেট পশুহাটে জীবাণুনাশক টানেল স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সভায় বলা হয়, নগরীর কোনো বাস বা রেলস্টেশনের পাশে হাট বসানো যাবে না। নগরীর কোথাও যেন অবৈধভাবে পশুর হাট বসতে না পারে- সে বিষয়ে সচেতন থাকার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া সভায় কেসিসির উদ্যোগে অনলাইনের মাধ্যমে পশু ক্রয়-বিক্রয় এবং পশুর হাটে ওয়াকিটকি ব্যবহার, হাটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নিরাপত্তা, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নিচু জায়গা ভরাট করাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়।
এ বিষয়ে কেসিসি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে খুলনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানির পশুর হাটে প্রবেশ করতে হবে। প্রত্যেককেই মাস্ক পরতে হবে। হাটের প্রবেশপথে জীবাণুনাশক হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। কোনো বয়স্ক লোক এবং শিশুদের হাটে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
উন্মুক্ত শপিংমল-মার্কেট
এদিকে, ঈদুল ফিতরে ভারত এবং ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ করোনা আক্রান্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে খুলনায় মানুষের অবাধ আনাগোনার কারণে দু’অংক থেকে করোনা রোগী বেড়ে চার অংকে পৌঁছে যায়। এ কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগর ও জেলার সব ধরনের দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়। যা ৯ জুলাই থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। যদিও জেলা প্রশাসনের গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত খোলা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না বললেই চলে।
অপরদিকে, রেডজোন ঘোষিত নগরীর ১৭ ও ২৪ নং ওয়ার্ড এবং রূপসার আইচগাতি ইউনিয়নের লকডাউনও ১৬ জুলাই থেকে উঠিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ফলে ঈদে সব কিছুই ওপেন থাকছে। এছাড়া ছুটিতেও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষের আনা-গোনাও থাকবে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে কি-না তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি
সিভিল সার্জন খুলনার দফতরের সূত্র জানান, ২৫ মে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের দিন খুলনা জেলায় করোনা পজিটিভের সংখ্যা ছিল দু’অংকের মধ্যে, মাত্র ৭৫ জন। আর মৃতের সংখ্যা ছিল ৩ জন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে মার্কেট উন্মুক্ত থাকা এবং আক্রান্ত অঞ্চলগুলো থেকে খুলনায় মানুষের অবাধ যাতায়াতের ফলে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৩ জুন আক্রান্তের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২০ জনে, ১২ জুন ৩০৪ জন, ১৮ জুন ৫৮৯ জন, ২৫ জুন ১৩শ’ ৫৮ জন, মৃত ১৮ এবং ১৩ জুলাই সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে ৩ হাজার ১৯৬ জনে দাঁড়িয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৪৮ জনের। যা খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিষয়টিতে উদ্বেগজনক উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, এবারের ঈদেও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি।