কোরবানির পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খুলনার খামারিরা
মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ৯:০৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ০৮, ২০২০
পশুর হাটের ওপর ভরসা করতে পারছেন না খুলনার গরুর খামারিরা। আদৌ হাট বসবে কিনা, বসলেও ক্রেতারা আসবে কিনা- এ ধরনের নানা দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে তারা লাভবান হতে পারবেন কিনা- সে চিন্তাও মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের। সবমিলে দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না খামারি ও পশু ব্যবসায়ীদের। ফলে হাটের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখন থেকেই গরু বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা।
চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় খামারিরা বলছেন, পরিস্থিতি বুঝেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে চান। দাম পেলেই কেবল গরু হাটে তুলবেন। অন্যথায় লোকসান দিয়ে তারা গরু বিক্রি করবেন না। যে কারণে সঠিক দামে আগে থেকেই বিক্রির চেষ্টা করছেন তারা।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্র জানান, খুলনায় মোট ৬ হাজার ৮৯০টি গবাদি পশুর খামার রয়েছে। এসব খামারে মোট গবাদি পশু রয়েছে ৪৫ হাজার ১৪৮টি। এর মধ্যে গরু ৪০ হাজার ৯৬৮টি এবং ৪ হাজার ১৮০টি ছাগল ও ভেড়া এবারের কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
এই সূত্র মতে, গত বছর খুলনা জেলায় খামারের সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ১টি এবং কোরবানির জন্য ৫১ হাজার ২৯৪টি পশু প্রস্তুত ছিল।
পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের তুলনায় এবার খামারের সংখ্যা কমেছে এক হাজার ১১১টি আর গবাদি পশুর সংখ্যাও কমেছে ৬ হাজার ১০১টি।
খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরের মরহুম খান মোজাফ্ফর হোসেন ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী এরশাদ খাঁন সবুজ জানান, তার খামারে ৮০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সংকটকালীন পরিস্থিতিতে খুব একটা লাভ না হলেও ছেড়ে দেবেন। তবে লোকসানে গরু বিক্রি করতে রাজি না তিনি।
একই উপজেলার মেসার্স এম টি ডেইরি ফার্মের মালিক মো. জামাল হোসেন বলেন, পশু খাদ্যের অতিরিক্ত মূল্য ছাড়াও অন্যান্য খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় গরুর লালন-পালনে ব্যয় বেড়েছে। তবে ভারত বা মায়ানমার থেকে পশু না আসলে এবং হাটে ক্রেতা সমাগম হলে লোকসান হবে না বলে আশা করছেন তিনি।
তবে হতাশা ব্যক্ত করে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়ার খামারি জাহিদ হোসেন বলেন, এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে হাটের ওপর ভরসা করতে পারছি না। এ সংকটময় মুহূর্তে দাম নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন তিনি।
দাকোপ উপজেলার কৈলাশঞ্জের খামারি অজয় মজুমদার বলেন, তার খামারে কোরবানিযোগ্য ১০টি গরু রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার গরু কেনায় আগ্রহী কোনো ব্যাপারীরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে পশু হাটে ক্রেতার অভাবে দাম পড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সাচিবুনিয়ার খামারি মো. আলতাফ হোসেন বলেন, তার খামারে ১২টি দেশি গরু রয়েছে। যার মধ্যে কোরবানিযোগ্য ৫টি। কিন্তু এবছর ব্যাপারীরা অনেক কম আসছেন। ফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে।
একই উপজেলার অপর খামারি সুমন হোসেন বলেন, অনেকেই অনলাইনে গরু ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করছেন। কিন্তু খামারিরা হাটে গরু নিয়ে বিক্রি না করতে পারলে তুষ্ট হয় না।
তেরখাদা এলাকার খামারি কাশেম আলী বলেন, প্রতি বছর কোরবানিতে বিক্রির উদ্দেশে গরু লালন-পালন করে ভাল দামে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এবার দামের পাশাপাশি বিক্রি নিয়েও শঙ্কিত তিনি।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুশেন হালদার জানান, এবার উপজেলায় ৫ হাজার পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার গরু এবং দেড় হাজার ছাগল। উপজেলায় কোরবানিতে পশু ঘাটতি হবে না বলেও জানান তিনি।
এদিকে খামারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, করোনার কারণে সংকটে রয়েছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা। যারা সাধারণত একাধিক ভাগে কোরবানি দিয়ে থাকেন। ফলে তাদের অনেকেই চলতি বছর কোরবানি দিতে পারবেন কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এতে করে কোরবানির পশু বিক্রি কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসএম আউয়াল হক বলেন, এবার করোনার কারণে পশুরহাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা হবে। এছাড়া অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। যে কারণে পশু বিক্রি নিয়ে খামারিদের খুব বেশি হতাশ হওয়ার কিছু নেই।