ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ | ১১ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

লালন তিরোধান দিবস আজ

সাঁইজির আখড়ায় তিন দিনের সাধুর হাট

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
🕐 ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৬, ২০১৯

বাউল সম্রাট মরমি সাধক ফকির লালন সাঁইয়ের ১২৯তম তিরোধান দিবস আজ বুধবার। দিবসটি স্মরণে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনব্যাপী লালন মেলা। এ উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির বারাম খানার আখড়াবাড়িতে বসছে সাধুর হাট। আখড়াবাড়ি পরিণত হবে সাধু-গুরু-বাউলদের পদচারণায়। মিলনমেলা ভাঙবে শুক্রবার।

 

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুষ্টিয়া লালন একাডেমির আয়োজনে তিরোধান দিবস পালন উপলক্ষে আখড়া বাড়িতে সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’- লালন শাহের বাতলানো এমন সত্য সুপথের সন্ধানে মানবতার দিক্ষা নিতে ইতোমধ্যে আত্মার টানে দেশ-বিদেশের সাধুগুরু ও ভক্তরা দলে দলে এসে হাজির হয়েছেন সাঁইজির মাজারে।

‘আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হোক আমাদের দিন বদলের অনুপ্রেরণা’- এই মূলমন্ত্র বাস্তবায়িত করতে বাউল সম্রাটের ১২৯তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানমালাকে সাজানো হয়েছে তিন দিনব্যাপী।

মূল উৎসব শুরু হওয়ার ৫/৬ দিন আগ থেকে আখড়ায় আসা বাউল সাধকরা মাজারের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে গেয়ে চলেছেন সাঁইজির আধ্যাত্মিক মর্মবাণী ও ভেদ তথ্যের গান। উতোমধ্যে জমে উঠেছে লালন শাহের আখড়া বাড়ি। কুষ্টিয়া পরিণত হয়েছে উৎসবের শহরে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও লালন একাডেমির আয়োজনে ১৬ অক্টোবর বুধবার থেকে শুরু হয়ে একটানা ১৮ অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী বাউল সম্রাট সাধক ফকির লালন শাহের ১২৯তম তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠান চলবে। আখড়া বাড়িতে মঞ্চ ও লালন মেলার স্টল নির্মাণ ও মাজার ধোয়া মোছার কাজ শেষ করা হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে। তিন দিনব্যাপী বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফ।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখবেন কুষ্টিয়া-২ (ভেড়ামারা-মিরপুর) আসনের এমপি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কুষ্টিয়া-১ দৌলতপুর আসনের এমপি আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪(খোকসা-কুমারখালী) আসনের এমপি ব্যারিস্টার সেলিম আলতাফ জর্জ, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খ. মহিদ উদ্দিস প্রমুখ।

ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠীর নির্মম অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনকে যখন বিষিয়ে তুলেছিল, ঠিক সে সময়ই সত্যের পথ ধরে, মানুষ গুরুর দীক্ষা দিতেই সেদিন মানবতার পথপ্রদর্শক হিসেবে বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ’র আবির্ভাব ঘটে কুমারখালীর ছেঁউড়িয়াতে। লালনের জন্মস্থান নিয়ে নানাজনের নানা মত থাকলেও আজো অজানায় রয়ে গেছে তার জন্মরহস্য। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান।

আর্থিক অসংগতির কারণে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তবে তিনি ছিলেন স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। যৌবনকালে পুণ্য লাভের জন্য তীর্থভ্রমণে বেরিয়ে তার যৌবনের রূপান্তর ও সাধন জীবনে প্রবেশের ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। তীর্থকালে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হলে তার সঙ্গীরা তাকে প্রত্যাখ্যান করেন। পরে মলম শাহ’র আশ্রয়ে জীবন ফিরে পাওয়ার পর সাধক সিরাজ সাঁইয়ের সান্নিধ্যে তিনি সাধক ফকিরি লাভ করেন।

ভক্ত মলম শাহের দানকৃতষোল বিঘা জমিতে ১৮২৩ সালে লালন আখড়া গড়ে ওঠে। প্রথমে সেখানে লালনের বসবাস ও সাধনার জন্য বড় খড়ের ঘর তৈরি করা হয়। সেই ঘরেই তার সাধন-ভজন বসত।

ছেঁউড়িয়ার আখড়া স্থাপনের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিষ্যভক্তদের নিয়ে পরিবৃত থাকতেন। তিনি প্রায় এক হাজার গান রচনা করে গেছেন। ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর ভোরে এই মরমি সাধক বাউল সম্রাট তিরোধান করেন। পরে তার সাধন-ভজনের ঘরের মধ্যেই তাকে সমাহিত করা হয়।

 
Electronic Paper