ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৩ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

‘আমিই আবরারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলেছিলাম’

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
🕐 ৩:০২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ০৭, ২০১৯

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। এমন শান্তশিষ্ট ছেলের কোনো শত্রু থাকতে পারে। তার শত্রু থাকতে পারে এ কথা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছেন না নিহত শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। তিনি বলেন, ছেলে আবরার ফাহাদের কোনো শত্রু ছিল না। তাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সমর্থক। এ সময় ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

সোমবার সকালে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম চলছে। পরিবারের সদস্যরা বুঝে উঠতে পারছেন না এত মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ছেলেটিকে কারা কী কারণে হত্যা করল।

মা রোকেয়া খাতুন বলেন, রোববার সকালে আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে মুঠোফোনে আমার কথা হয়। বিকেল ৫টায় হলে পৌঁছে ছেলে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ও আর ফোন ধরেনি।

নিহত ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১-এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

রোববার (৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

এ ঘটনায় রাসেল ও ফুয়াদ নামে দু'জনকে আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। সকালেই তাদের আটক করা হয়। আটক রাসেল ও ফুয়াদ বুয়েটেরই শিক্ষার্থী।

সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আবরার লেখালেখি করতেন। এ কারণে তাকে হত্যা করা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে পুলিশ ও তার পরিবার বলছে, ফাহাদের গায়ে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শরীরের পেছনে, বাম হাতে ও কোমর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত আঘাতের কালো দাগ ছিল।

নিহত ফাহাদের মামাতো ভাই জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, ফাহাদের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। সে কুষ্টিয়ায় গিয়েছিল। গতকালকেই বিকালে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় এসে হলে ওঠে। তারপর মধ্যরাতে খবর পাই ভাই মারা গেছে।

ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বলেন, ফোন না ধরায় আমি ফেসবুকের মেসেঞ্জারে ভাইয়াকে নক করি। ভাইয়া সে সময়ও ফেসবুকে অ্যাকটিভ ছিল, তবে সাড়া দেয়নি।

চাচা মিজানুর রহমান বলেন, আবরার ফাহাদ শিবিরের কর্মী বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এটা বানোয়াট, আবরার একজন উদারমনা ও প্রগতিশীল ছেলে। আমরা গোটা পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক। হানিফ সাহেবের সব প্রোগ্রাম আমরা যাই। তবে আবরার তাবলিগে যেত। বুয়েটে ভর্তির পরও দুই তিনবার সে তাবলিগে গিয়েছিল।

নিহত আবরারের বাবার নাম বরকতুল্লাহ। তিনি বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে আবরার ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। বুয়েটের শেরে বাংলা হলের কাছেই তার হোস্টেল। কুষ্টিয়ার পিটিআই সড়কে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফের বাসার পাশেই তাদের বাড়ি।

 
Electronic Paper