সব পথ মিশেছে লালনধামে
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
🕐 ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২২, ২০১৯
লালন সাঁইয়ের স্মরণোৎসবে ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। দাওয়াত নেই, পত্র নেই, তবুও সব পথ যেন এসে মিশে গেছে মরা কালী নদীতীরে। কুষ্টিয়া শহর থেকে মাত্র ১০ মিনিটের রাস্তা ছেঁউড়িয়া। কিন্তু এখন সে রাস্তায় যেতে সময় লাগছে ঘণ্টার ওপরে। সাধু-গুরু বাউলের বাইরে সাধারণ দর্শনার্থীর ভিড়ই বেশি।
বাউলের চারণভূমিতে আসা হাজার হাজার লালন-ভক্ত, সাধু-গুরু কর্তৃপক্ষের দেওয়া সকালের অধিবাসে পায়েশ ও মুড়ির বাল্যসেবা নেন। দুপুরে তারা মরা কালীগঙ্গায় গোসল সেরে ইলিশ মাছ-ভাত ও ত্রিব্যঞ্জন দিয়ে (তিন ধরনের সবজির তরকারি) দুপুরের খাবার পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় লালন একাডেমির প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। ভেতরে লাইন দিয়ে কলাপাতা সামনে নিয়ে হাজার হাজার সাধু ফকিরের অপেক্ষা। সবাই খাবার পাওয়ার পর বিশেষ আওয়াজ দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় বিতরণ শেষ। এবার খাওয়া শুরু হলো একযোগে। ইলিশ মাছ, ভাত ও সবজি দিয়ে প্রায় ৫ হাজার বাউল, সাধু ফকির পুণ্যসেবা গ্রহণ করেন। এ ছাড়াও দই-মিষ্টি খাওয়ানো হয়। দাওয়াত ছাড়াই মানুষ ছুটে আসে দলে দলে, হাজারে হাজারে। কোনো উদাসী ডাকে কেউ জানে না!
মূল গেট থেকে ভেতরে ঢুকে অডিটোরিয়ামের নিচে বসেন প্রবীণ বাউল নহির শাহ। তার বয়স প্রায় ৭৮ বছর। শিষ্যদের নিয়ে গানে মজেছিলেন। এখনো আঁটা স্বাস্থ্য। দেখে বোঝা যায় না বয়স। গান থামালে কথা হয় এ বাউলের সঙ্গে। গান দিয়েই শুরু হয় আলাপ। খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়। এই দেশেতে এই সুখ হলো আবার কোথায় যায় না জানি। গানের মর্ম কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বুঝে নিতে হবে।
তিরোধান দিবসে প্রতিবছরের মতো এবারও সাধক লালনের আধ্যাত্মিক দর্শন লাভের আশায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ প্রাণের টানে ছুটে আসেন। একতারা, দোতারা, ঢোল ও বাঁশির সুরে মুখরিত হয়ে উঠেছে লালনভূমি ছেঁউড়িয়া। একই সঙ্গে চলছে দীক্ষা পর্ব। নব্য শিষ্যরা গুরুদের সেবা করতে উদগ্রীব। যেন কোনো কষ্ট না হয় সেদিকে তাদের অটুট লক্ষ্য। ঝিনাইদহ থেকে আসা নব্য বাউল ফকির করিম বলেন, এ পথে আসার দুই মাস হয়েছে। এখনো কিছুই শিখতে পারিনি। গুরুর সঙ্গেই থাকি দিনরাত। তার খেদমত করাই আমার কাজ। গুরু বলেছেন, সময় হলে গুরুবাক্য দেওয়া হবে।
বাউল সাধক ফকির লালন শাহের জীবন-কর্ম, জাতহীন মানবদর্শন, মরমি সংগীত ও চিন্তা-চেতনা এখন আর এ ছেঁউড়িয়ার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশের সীমানা পেরিয়ে তা এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বে। লালনের গান ও ধর্ম-দর্শন গবেষণার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে অনেক আগেই।