হিসাবরক্ষক থেকে কোটিপতি
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
🕐 ৯:৩৯ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৯
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক প্রদীপ কুমার মণ্ডল। জেলা প্রাথমিক শিক্ষার বড় বাবু নামেই বেশি পরিচিত। নিয়োগ, বদলি, ডেপুটেশন, পিআরএলও পেনশন বাণিজ্যসহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল অবৈধ কাজের মূলহোতা এই বড় বাবু। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থেকে চালিয়ে যাচ্ছেন তার অবৈধ কাজ। উচ্চমান সহকারী হয়েও প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন সাতক্ষীরা শহরে বিলাশবহুল বাড়ি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বদলির শেষ মাসে সর্বমোট বেতন তুলেছিলেন ২৯ হাজার নয়শ ১৬ টাকা। এ বেতনে কিভাবে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাশবহুল বাড়ি নির্মাণ করা যায় সেটিই এখন মানুষের প্রশ্ন।
তবে এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী প্রদীপ কুমার বলেন, অফিসের কিছু কাজে সব সময় জেলা অফিসে থাকতে হয়।
তাই উপজেলা অফিসে গিয়ে আমাকে নাও পাওয়া জেতে পারে। উচ্চমান সহকারী হয়ে কিভাবে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে বিলাশবহুল বাড়ি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বিষয়টি হেসেই উড়িয়ে দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রদীপ কুমার মণ্ডল ২০০০ সালে উচ্চমান সকহারী কাম হিসাবরক্ষক হিসেবে সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় যোগদান করে চাকরি জীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন উপজেলা চাকরি করে ২০০৮ সালে সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক হিসেবে বদলি হয়ে আসেন। সাতক্ষীরায় যোগদানের পর থেকে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সকল প্রকার নিয়োগ, বদলি, ডেপুটেশন, পিআরএলও পনশনসহ বিভিন্ন প্রকার অবৈধ কাজ শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে চাকরি দেওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা গ্রহণ, নৈশপ্রহরী নিয়োগ, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেওয়ারসহ বেশকিছু লিখিত অভিযোগে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি।
অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তদন্ত কমিটি তাকে অন্যত্র বদলি করার জন্য সুপারিশ করলে প্রায় ১০ বছর পর ২০১৮ সালের মার্চ মাসে তাকে শ্যামনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে বদলি করা হয়। বদলির প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও তিনি কর্মস্থলে যোগদান না করায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার তাকে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নিদের্শ দেন। তবে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিনকে ম্যানেজ করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন।
প্রদীপ কুমার মণ্ডল গত কয়েক বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা শহরের পৌরসভায় দুই নম্বর ওয়ার্ডের রথখোলা বিলের মধ্যে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছে বিলাশবহুল চারতলা বাড়ি।
বাড়ির প্রতি তলায় রয়েছে চারটি করে উইনিট। বিলাশবহুল বাড়ি নির্মাণের জন্য তিনি অফিসে যেতে পারেন না। তাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করেই কর্মস্থলে অনুপস্থি থাকেন।
কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মির্জা মিজানুর রহমান বলেন, মাঝে মাঝে আসেন, মাঝে মাঝে আসেন না। এ বিষয়ে তাকে বলা হয়েছে। চলতি সপ্তাহ থেকে অফিস করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
তবে শ্যামনগর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে উচ্চমান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক প্রদীপ কুমার মণ্ডলের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানানো হলেও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন সে বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।