দেশের বৃহৎ কুষ্টিয়ার মধুপুর কলার হাট
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
🕐 ৪:০৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২২
দেশের অন্যতম বৃহৎ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার মধুপুর কলার হাট। এখানকার কলার প্রচুর চাহিদা থাকায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৫০ ট্রাক কলা সরবরাহ হয়। এতে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক। কষ্টার্জিত ফলের ভালো দাম পেয়ে খুশি কৃষক। এদিকে, প্রচুর লাভজনক এ কলা চাষে বিপ্লব ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছে জেলা কৃষি অধিদপ্তর।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত মধুপুর কলার হাট। মাসের প্রায় ৩০ দিনই বসে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই কলার হাট। খুব সকাল থেকে এ হাটে সবরি, চাপা সবরি, সাদা সবরি, জয়েন্ট কলা, চাপা কলাসহ বিভিন্ন নামের কলা নিয়ে আসতে থাকে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের ছয় জেলার কৃষক ও ফরিয়া ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশে প্রায় ৫০ ট্রাক কলা সরবরাহ হচ্ছে এ হাট থেকে। এতে লাভবান হচ্ছেন এ অঞ্চলের কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কুষ্টিয়া জেলায় প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে এবার কলার আবাদ হয়েছে। কুষ্টিয়ার উজানগ্রাম এলাকার কলাচাষি আনারুল ইসলাম জানান, প্রায় ২০ বছর যাবৎ কলার আবাদ করি। প্রতি বছরই বিশ থেকে বাইশ বিঘা জমিতে চাপা কলার আবাদ করা হয়। এই কলার খেতে সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ভালো। তাতে করে সব খরচ বাদে বছরে প্রায় ৮/১০ লাখ টাকা লাভ থাকে।
কুষ্টিয়ার লক্ষীপুর এলাকার চাষি মাহাবুল জানান, প্রায় ১৫ বছর ধরে কলার আবাদ করছি। একমাত্র কালবৈশাখী ঝড় ছাড়া কলা আবাদে ঝুঁকি কম। তা ছাড়াও কলা আবাদে পরিশ্রম এবং খরচ দুটোই কম। এমনিতেই এখন কলার চাহিদা বেশি। সেই কারণে বাজারে কলার ভালো দাম পাওয়া যায়। যে কলা কিছুদিন আগেও ৬ থেকে ৮ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে। সেই কলা এখন ১২ থেকে ১৫ চাকা হালি পাইকারি ভাবেই বিক্রি হচ্ছে। আর এই হাটে কৃষকেরা সরাসরি কলা বিক্রি করতে পারার কারণে তারা নিজেরাই লাভবান হয়।
তিনি আরও জানান, প্রতিদিন খুব সকালেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কলা কিনতে মধুপুর কলার হাটে আসেন ব্যাপারীরা। এখানকার কলা অনেক সুস্বাদু। দেশব্যাপী এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। এজন্য দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে কলা নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।
ঢাকা থেকে কলা কিনতে আসা শাহাদাৎ হোসেন নামের এক ব্যাপারী জানান, এখানকার মাটি কলা চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সেই সঙ্গে স্বাদেও খুব ভালো এবং এখানকার কলায় ক্যামিকেলের ব্যবহার না হওয়ায় এর চাহিদা ভালো। সেই কারণেই নিয়মিত ভাবে এখান থেকে কলা কিনে নিয়ে ঢাকা বিভিন্ন আড়তে নিয়ে বিক্রি করি।
মধুপুর হাটের ইজারাদার কাজী আব্দুস সাত্তার জানান, প্রায় দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে চলে আসছে মধুপুর কলার হাট। বর্তমানে এ হাট থেকে বছরে ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টাকা ইজারা পায় সরকার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে আসা ব্যাপারী ও কৃষকের নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর তারা। তবে বর্জ্য ফেলা, ব্যাপারীদের থাকার ব্যবস্থাসহ হাটের সংস্কারের দাবির কথাও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, এখানকার কলা অত্যন্ত সুস্বাদু ও সহজলভ্য একটি ফল। দেশব্যাপী কুষ্টিয়া জেলায় উৎপাদিত কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মধুপুর কলার হাট থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন প্রচুর কলা সরবরাহ হওয়ায় এখানকার কৃষক লাভবান হচ্ছেন। এ ফলের বিস্তার ঘটাতে কৃষি বিভাগ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।