চাঞ্চল্যকর পিতা-পুত্র হত্যা মামলা
ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৭ জনের যাবজ্জীবন
মো. জামাল হোসেন, খুলনা
🕐 ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
খুলনার তেরখাদা উপজেলার চাঞ্চল্যকর জোড়া হত্যা (পিতা-পুত্র) মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান এসএম দ্বীন ইসলামসহ ১৭ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নজরুল ইসলাম হাওলাদার এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- তেরখাদা উপজেলার ছাগলাদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এস এম দ্বীন ইসলাম (৫৪), মোঃ আব্দুর রহমান (৫৫), জমির শেখ (২৫), শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৫), খালিদ শেখ (৩২), এস্কেন্দার শেখ (৪২), জসিম শেখ (৩৫), হোসেন শেখ (৩০), জিয়ারুল শেখ (২৬), বাহারুল শেখ (২৪), আব্বাস শেখ (২৪), অহিদুল গাজী (৩৪), খাইরুল শেখ (৩৫), কেরামত মল্লিক (৩৫), মাহবুর শেখ (৪৯), বাবু শেখ (৩৫) ও নুর ইসলাম শেখ (৩৭)। এ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকসুর খালাস পেয়েছেন আবু সাঈদ বিশ্বাস (৩৫) ও আয়েব শেখ (৫০)।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১১ টায় প্রিজন ভ্যানে করে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। মামলার রায় শোনার জন্য তেরখাদা ছাগলাদাহ ইউনিয়ন থেকে কয়েক হাজার মানুষ আদালত চত্বরে ভিড় করেন। আদালতের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তাদের সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট রাতে তেরখাদা উপজেলার পহরডাঙ্গা গ্রামের পিরু শেখ ও তার পরিবার রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ২ টার দিকে মামলার আসামিরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত সিধ কেটে ভিকটিমের ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। এ সময় আসামির মধ্যে আব্দুর রহমান হুকুম দিয়ে বলে পিরুকে কুপিয়ে শেষ করে দে। ওর জন্য আমি চাকরি হারিয়েছি।
এ কথা বলার সাথে সাথে আসামি সাইফুল হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে পিরুর মাথায় কোপ দেয়। কোপে তার মাথার হাড় কেটে ঘিলু বের হয়ে যায়। পরে অন্যান্য আসামিরা পিরুকে এলোপাতাড়িভাবে কুপাতে থাকে। ভিকটিম ও তার স্ত্রী চিৎকার করতে থাকলে পাশের ঘর থেকে ছেলে নাইম বাবাকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে তাকে টেনে হেঁচড়ে উঠানে নিয়ে যায়।
আসামি খালিদ শেখ ফলাযুক্ত ফুলকুচি দিয়ে নাইমের মাথায় কোপ দেয়। এটি তার বুকে বিদ্ধ হয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকলে হাবিবুর ও জিয়ারুল চাপাতি দিয়ে নাইমের কনুই ও ঘাড়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই নাইমের মৃত্যু হয়। আসামিরা চলে যাওয়ার পর পিরু শেখকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়।
পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিরু মারা যায়। এ ঘটনায় নিহত পিরুর স্ত্রী মাহফুজা বেগম বাদী হয়ে ঘটনার দু’দিন পর তেরখাদা থানায় স্বামী ও সন্তান হত্যার অভিযোগে ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে রায়ের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আহাদুজ্জামান বলেন, এ রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ খুশি। তবে তিনি আশা করেছিলেন আদালত আসামিদের সর্বোচ্চ দণ্ড দিবেন। কিন্তু বিচারক যেটি ভালো মনে করেছেন সেটি করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। সেখানে তারা ন্যায় বিচার পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
তবে, নিহত পিরু শেখের স্ত্রী মাহফুজা বেগম এ রায়ে খুশি নন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তিনি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দাবি করেন।
তিনি বলেন, ওইদিন রাতে আমার স্বামী ও সন্তান বাঁচার জন্য আসামিদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে আকুতি জানিয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ে তাদের মন গলেনি।