আমনের চাষে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ, দুশ্চিন্তায় কৃষক
কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
🕐 ৪:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২২
চাহিদামতো বৃষ্টি না হাওয়ায় আমনের আবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক। সেচ সংকটের কারণে আমন আবাদ প্রায় একমাস পিছিয়ে গেছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে সার এবং ডিজেলের দাম। এতে করে আমন আবাদের ক্ষেত্রে কৃষকের খরচ বাড়ছে প্রায় দ্বিগুণ। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন কুষ্টিয়া অঞ্চলের কৃষকেরা।
এদিকে, দেশের বৃহত্তর গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের তিনটি প্রধান পাম্পের দুটিই বিকল হয়ে হয়ে পড়ে আছে। এতে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পাওয়া চাষিরা পড়েছেন চরম বিপাকে। ভরা আমন মৌসুমে কৃষকের জমিতে সেচের পানি নিশ্চিত করতে সরকার নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা করলেও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তর গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের তিনটি প্রধান পাম্পের মধ্যে দুটিই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন স্বল্প খরচে তিন মৌসুমে নির্বিঘ্নে সেচ সুবিধা পাওয়া এ অঞ্চলের চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, কুষ্টিয়া জেলায় এবার আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর। কিন্তু মৌসুমের মাঝামাঝি সময় পার হয়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৮৮ হাজার ৫হেক্টর। একদিকে অনাবৃষ্টিতে পানির জন্য কৃষকের হাহাকার সেই সঙ্গে ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বাড়ছে সেচ খরচ। তাই চলতি মৌসুমের ধান আবাদ নিয়ে চিন্তার ভাঁজ কৃষকের কপালে।
এই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমন মৌসুমে কৃষকের মূল ভরসা থাকে বৃষ্টির ওপর। কিন্তু ভরা মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় ধান লাগাতে বেশ কয়েক দিন দেরি হয়েছে। যার ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে ধান উঠবে। যার প্রভাব পড়বে ধানের বাজারের ওপর।
কুষ্টিয়া শহরতলির বাড়াদি খালপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ বাদশা শেখ বলেন, গত বছর এ সময়ে বাড়াদি এলাকার মাঠ পানিতে টুইটুম্বর ছিলো। বৃষ্টির ফলে আউশ ও আমন আবাদে স্যালো মেশিনের পানি প্রয়োজন পড়েনি। এবার চিত্র ভিন্ন। স্যালো মেশিনের পানি দিয়েও ধান বাঁচানো যাচ্ছে না। অনেকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ধানের ফলন অনেক কমে যাবে, পাশাপাশি লোকসানে পড়বে বেশির ভাগ কৃষক।
একই এলাকার কৃষক আনিসুল হক ও রবিউল ইসলাম বলেন, চাহিদামতো বৃষ্টির পানি না থাকায় ধানে থোড় হওয়ার পরও তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দানা হচ্ছে না ধানে। যারা স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে আবাদ করছেন তারা এক বিঘায় ১০মণ ধান পেতে পারেন। অথচ প্রায় ১৫মণ পর্যন্ত ধান হয় বিঘায়।
তারা বলেন, বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে মুলত কৃষকরা আউশ-আমন আবাদ করে থাকে। তবে এবার সেই চিত্র ভিন্ন। সেচ খরচ বাড়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে লাভের বদলে লোকসান হয়ে যাবে।
মিরপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক শরিফুল ইসলাম বলেন, যে সময় ধানের গোছা মোটা হয়ে যাওয়ার কথা এবার সেই সময় ধানের চারা লাগাচ্ছি। বৃষ্টির অভাবেই এমনটা হয়েছে। ধানের ভরা মৌসুমেও চাহিদামতো বৃষ্টির দেখা না মেলায় সেচের জন্য স্যালোম্যাশিনের ওপর নির্ভর হতে হচ্ছে। কিন্তু ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সেখানেও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। সঙ্গে বেড়েছে সারের দামসহ কীটনাশক এবং শ্রমিকের দাম। যার ফলে ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুন।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের যা দাম তাতে কৃষকেরা আর পুষিয়ে উঠতে পারছে না। যার ফলে বিপাকে আছে কৃষকেরা তার ধান আবাদে বিমুখ হয়ে পড়ছে তারা। এতে করে আমন আবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
একই উপজেলার মশান এলাকার কৃষক আছাদুল ইসলাম বলেন, এবার সময়মতো বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টির আশায় থাকতে গিয়ে প্রায় এক মাস ধান আবাদে পিছিয়ে পড়েছি। মাঝে কয়েক দিন বৃষ্টি হয়েছে, সেকারনে এখন ধান লাগাতে শুরু করেছি। কিন্তু কয়েক দিন পরেই আবার সেচ দেওয়া লাগবে। এর মধ্যে যদি বৃষ্টি নাহয় তাহলে বিকল্প পথে পানির ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হায়াত মাহামুদ বলেন, আমন ধান আবাদের মৌসুমে কৃষকেরা মূলত বৃষ্টির ওপরেই অনেকটা নির্ভরশীল থাকে। তাই অনাবৃষ্টি এবং একইসময় ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি কৃষকদের খরচ কিছুটা বাড়াবে। কিন্তু কৃষকদের লোকসান পোষাতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।