ঢাকা, বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩ | ১৫ চৈত্র ১৪২৯

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

আমিরুল মোমেনীন মানিক জানালেন

শুভবোধকে উস্কে দিতে চাই

আবিদ আজম
🕐 ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২২

শুভবোধকে উস্কে দিতে চাই

জীবনমুখী গানের আলোচিত কন্ঠশিল্পী আমিরুল মোমেনীন মানিক। সৃজনশীলতার অলরাউন্ডার বলা হয় তাঁকে। সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক, সাংবাদিক ও ইউটিউবার হিসেবে এই কীর্তিমানের রয়েছে তুমুল পরিচিতি। তার কিছু না বলা কথা জেনেছেন আবিদ আজম...

প্রশ্ন: সঙ্গীত, সাহিত্য ও সাংবাদিকতা তিন মাধ্যমেই সমান্তরালে প্রতিষ্ঠিত আপনি। কীভাবে সম্ভব হলো?
- নিরন্তর লেগে থাকা। তিনটিই আমার সন্তানতুল্য। কাকে রেখে কাকে ছাড়ি ।

প্রশ্ন: সঙ্গীতে গতানুগতিক ধারণার বাইরে জীবনমুখী গান করার চিন্তা কিভাবে এলো?
-সমাজ পরিবর্তনের চিন্তা থেকেই জীবনমুখী গানের ধারা আঁকড়ে ধরে আছি। মানুষের মনে সুবোধকে উস্কে দিতে চাই গান, কবিতা, গদ্যে। আর এসবের মধ্য দিয়ে তৈরি করতে চাই শুদ্ধ আত্মা। সমাজে পরিশুদ্ধ মানুষ যত বাড়বে, বিপ্লব তত নিকটে দৃশ্যমান হবে।

প্রশ্ন: দেশীয় সাস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধ রক্ষায় আপনাকে সোচ্চার ভূমিকায় দেখা যায়। এই প্রেরণা কোথা থেকে পেলেন?
-আমার বাবা একজন সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা । সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে তাঁর কয়েকজন সতীর্থ যোদ্ধা শহীদও হয়েছেন। দেশের প্রতি অবিচল ও অনঢ় ভালোবাসার এটিকে আমি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং প্রেরণার আঁকর বলে মনে করি। একটি জাতি তখনই ঘুরে দাঁড়ায়, যখন তার ঐতিহ্য-ইতিহাস ও বীরত্বের পটভূমি তরুণ প্রজন্মের সামনে থাকে।

প্রশ্ন: বিদেশী সাংস্কৃতিক আগ্রসন ও বলিউডের কিছু শিল্পীর বাংলাদেশ সফরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন আপনি। কেন?
-সানি লিওন তার পর্ণ ভিডিও’র মাধ্যমে মানুষকে ধর্ষণে উৎসাহিত করতেন। তাকে তো হাজার বছরে সংস্কৃতি এই বাংলা ভূভাগে স্বাগত জানাতে পারিনা। বরং তাকে নিন্দা করা দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এছাড়া বলিউডের এ আর রহমান বা পাকিস্তানের রাহাত ফতেহ আলী খান তাদের আগমনেও আমি প্রতিবাদ করেছি। তাদের গান আমার পছন্দ। কিন্তু তাই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যেমন ধরুন: স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান বা ১৬ই ডিসেম্বরের অনুষ্ঠানে তারা তো আমন্ত্রিত হতে পারেন না। কারণ এই দিনগুলো তো আমাদের একেবারেই নিজস্ব, চেতনাকে শাণিত করবার দিন। তার দু’জনেই ভিনদেশি ভাষার শিল্পী, বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে কোনোভাবেই তাদেরকে সমন্বয় করা যায়না। হ্যাঁ, তারা যদি অনুষ্ঠানে এসে বাংলা গান গাইতেন তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি ছিলনা। কিন্তু তারা কি করলেন বিজয় দিবসে বা স্বাধীনতার অনুষ্ঠানে তারা গাইলেন হিন্দী আর উর্দুতে। সুতরাং এটা মেনে নিলে আমরা জাতি হিসেবে মেরুদণ্ডহীন হয়ে যাই। যদি বাংলা ভাষার ভিনদেশি কোনো শিল্পী ধরুন নচিকেতা বা কবীর সুমনকে আমন্ত্রণ জানাতেন তাহলেও আমরা স্বাগত জানাতাম।

প্রশ্ন: প্রতিবাদ, বিপ্লব ও নতুন দিনের স্বপ্ন দেখাতে প্রতিজ্ঞ আপনি। বাম-বৈপ্লবিক চিন্তা দর্শন আপনাকে প্রাণীত করে?
-বিপ্লব বা পরিবর্তনের চিন্তাকে নানারকম আদর্শ দিয়ে বিভাজিত করতে চাইনা। কেউ সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের চিন্তা করছেন, কেউ ইসলামিক বিপ্লবের ভাবনায় কাজ করছেন। কিন্তু মূল বিষয় হলো সত্যিকারের পরিবর্তন বা মানুষের প্রকৃত মুক্তি। আমার মনে হয়, মাধ্যম না দেখে দেখা উচিৎ লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং প্রায়োগিক বিষয়। আমি চে গুয়েভারার কাছ থেকে যেমন প্রেরণা পাই, তেমনি তিতুমীরও আমার অনুপ্রেরণার বাতি ।

প্রশ্ন: সামাজিক কুৎসা, হিংসা ও পরশ্রীকাতরা কিভাবে মোকাবেলা করেন?
-পরশ্রীকাতরতা এক ধরনের রোগ । এইসব রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অটল থাকুন। মনে রাখবেন, পরশ্রীকাতররা কখনোই আপনার শুভাকাঙ্খি নয়। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ করলে, তার সুষ্পষ্ট ও অকাট্য জবাব দেওয়া দায়িত্বের পর্যায়ে পড়ে।

প্রশ্ন: নিজের উদ্দেশ্যে প্রশংসা, বিতরীতে নিন্দা-আপনার সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করে?
-প্রশংসা হলে অনুপ্রেরণা পাই। না হলেও ভাবি, সাময়িক প্রশংসা দরকার নেই, কাজ করে যাই, কাজ হৃদয়গ্রাহী হলে মূল্যায়ন হবেই। আর নিন্দা যদি সংশোধনের লক্ষ্যে হয়, তাহলে তাকে সবসময়ই স্বাগত জানাই।

প্রশ্ন: নিজের যাবতীয় কর্মযজ্ঞ'র উদ্দেশ্য কী? কেন এই সৃজন যাত্রা?
-সকল কাজের ধ্যান হচ্ছে মানুষের মঙ্গল করা, সভ্যতার ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং প্রাণ প্রকৃতিকে জাগিয়ে তোলা।

প্রশ্ন: শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বা জীবযাপনে ঈদকে ঘিরে আমাদের নিজস্ব জাতীয় সংস্কৃতি কী নির্বাসিত হতে চলছে বলে মনে করেন?
- ঈদের উদ্দেশ্য কী, সেটা যদি জানা থাকে তাহলে তরুণ প্রজন্ম বিভ্রান্ত হবেনা। এটা পরিস্কার করার দায়িত্ব সচেতন সংস্কৃতিকর্মীদের। আপাতত নির্বাসিত মনে হলেও আমার বিশ্বাস প্রান্তরে এ কালের আব্বাস উদ্দিন, আবদুল আলীমরা জেগে উঠবেই, তারা মায়াবী সন্তুরে ভোরের সুর উঠিয়ে সকাল আনবেই, এটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ।

প্রশ্ন: গান নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
-বাংলা গানের সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতির কোলাবোরেশন এর মাধ্যমে বাংলাদেশের গান ও বাংলা ভাষাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া ।

প্রশ্ন: আপনার প্রতিষ্ঠিত উইটিউব জার্নালিজমের অগ্রদূত চেঞ্জ টিভি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?
-চেঞ্জটিভি যে স্বপ্ন নিয়ে করেছিলাম,তা এখন দিনের মতো বাস্তবতা। কতিপয় গণমাধ্যমে আধিপত্য ও মনোপলি কাঁচের দেয়ালের মতো ভেঙে গেছে ইউটিউব জার্নালিজমের কারণে। গণমাধ্যমে সমতা ও ন্যায্যতা তৈরি হওয়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র। ইতিহাসে নাম লেখা থাকুক বা না থাকুক, আমরা যে এটা শুরু করেছিলাম তা অনস্বীকার্য এবং বিপ্লবের মতো সত্য।

প্রশ্ন: নিজের জনপ্রিয়তা, অর্জন ও সাফল্য কিভাবে উপভোগ-উদযাপন করেন?
- নিজের সফলতা বলে কিছু নেই । কারণ নিজে যে চিন্তা লালন করি সেটা হলো একটা কনসেপ্ট বা আইডিয়া। কনসেপ্ট মানেই হলো ইনস্টিটিউশন। সুতরাং এই সফলতা একার নয়, একই ধরনের চিন্তা করে এমন সবার। আর পৃথিবীতে উপভোগের কিছু নেই, সবই হলো বিসর্জন।

 

 
Electronic Paper