কাঙ্খিত উৎপাদনশীলতার কাছাকাছি
জাফর আহমদ
🕐 ৫:০৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২১
গত শতকের আশির দশকে হাঁটি হাঁটি পা করে যাত্রা শুরু তৈরি পোশাক শিল্পের। নতুন শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে এ শিল্প রীতিমতো মহীরুহ, দেশের প্রধান শিল্পে পরিণত হয়েছে। ৮৫ ভাগ রপ্তানি আয় আসে এই শিল্প থেকে। চার দশক আগে যারা রঙিন স্বপ্ন নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তা হিসেবে এসেছিলেন, তারা অনেকেই উত্তরসূরির হাতে সে হাল ছেড়েছেন। শুরু হয়েছে দ্বিতীয় প্রজন্মের যুগ। তৈরি পোশাক শিল্প নিয়ে তারা কি ভাবছেন? এ নিয়ে খোলা কাগজের কথা হয় দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা তায়েফ আজমি ইরফানের সঙ্গে। তিনি তুলে ধরেছেন তার শিল্প ভাবনা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জাফর আহমদ
আপনি দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা। এ শিল্পের যে পরিবর্তন, আপনি যখন এসেছিলেন তখন কেমন দেখেছিলেন। প্রায় এক দশক পর কিভাবে দেখছেন?
আমি যখন তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ শুরু করলাম তখন ওয়ার্কার লেভেল, এইচআর, মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট- সব ক্ষেত্রেই ল্যাকিং ছিল, এডুকেশনাল ল্যাকিং ছিল, কম্প্যায়েন্সে ল্যাকিং ছিল। আমার মনে হয়েছিল একেকটি মেশিনে বেশি ওয়ার্ক ফোর্স ছিল। যেখানে অনেক কম লোক রাখা যেত সেখানে অনেক ওয়ার্কস ফোর্স রাখা হয়েছে। ১০ বছর পরের কথা যদি বলি আমাদের অনেক আধুনিক মেশিন আসছে। কম লেবার দিয়ে একই উৎপাদন হচ্ছে, আমাদের শ্রমিক নির্ভরতা অনেক কমেছে। একই সময়ে আমাদের মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট অনেক দক্ষ হয়েছে। শ্রমিকরাও অনেক দক্ষ হয়ে গেছে। আগে ঘণ্টায় একজন শ্রমিক ৭০ পিস কাজ করত, এখন তারা একশ’ থেকে একশ’ ১০ পিস পর্যন্ত কাজ করছে।
আমি যখন জয়েন্ড করেছিলাম তখন আমাদের যে সিএম ছিল এখন তার চেয়ে কম সিএম-এ আমরা অর্ডার নিচ্ছি। তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন আমরা সারভাইভ কিভাবে করি? আমাদের প্রডাক্টিভিটি বেড়েছে, শ্রম ঘনত্ব কমে গেছে। ফলে কম সিএম হলেও আমরা সারভাইভ করছি।
সর্বোপরি কাজের পরিবেশ পরিবর্তন হয়েছে। পরিবেশ বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলেন- এগুলো চিন্তা ভাবনা করেই উদ্যোক্তারা ফ্যাক্টরি লিড করছে।
একযুগ আগে যখন যুক্ত হয়েছিলেন তখন বলেছিলেন তৈরি পোশাক শিল্পে পরিবেশ হবে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। একযুগ আগের বিষয়টি নিয়ে যদি এখন মন্তব্য করতে বলা হয় তাহলে কি বলবেন?
আপনি দেখেন আগে আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানা ছিল না, গ্রিন ফ্যাক্টরি ছিল না। এখন বিশে^র মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রিন ফ্যাক্টরি হয়েছে বাংলাদেশে। এর জন্য অন্যতম প্রধান কারণ হলো আমাদের বায়াররা বলছে, তোমরা যদি পরিবেশ সম্মত কারখানা করো তাহলে তোমাদের কাছে থেকে তৈরি পোশাক বেশি কিনব, বেশি সিএম দেব। কারণ হলো ওরা যখন আমাদের গ্রিন ফ্যাক্টরি থেকে পোশাক ক্রয় করে তখন ওইখানে একটি হ্যান্ডটেক ব্যবহার করে। তারা গ্রাহকদের দেখায়, দেখো এটা গ্রিন ফ্যাক্টরির প্রডাক্ট। এটা তাদের চেইন সপিংয়ে ভালো ইম্প্যাক্ট ফেলে। এজন্য আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এবং আমাদের এই শিল্পে আগামীতে বায়াররা বলবে পরিবেশসম্মত কারখানার সার্টিফিকেট থাকতে হবে। পরিবেশবান্ধব শিল্পের দিকে যদি না ঝুঁকি তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে। এজন্য গ্রিন কারখানা হতে হবে।
দশ বছর আগে যখন কথা বলেছিলাম তখন এত গ্রিন ফ্যাক্টরি ছিল না। বিশে^ যত প্লাটিনাম ফ্যাক্টরি সবগুলোই প্রায় এখন বাংলাদেশে এসে পড়েছে।
এটা তো আপনি পুরো শিল্পের কথা বললেন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে নিজের কারখানাতে এটা কতটা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন?
ব্যক্তিগতভাবে আমি বলি, আমাদের ফ্যাক্টরিটা আছে ব্যাসিকেলি ওভেন ফ্যাক্টরি। ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বলেন, ঝুট ব্যবস্থাপনার কথা বলেন- সেগুলো আগে যেভাবে রাখা হতো। ফ্যাক্টরির মধ্যেই সব জ্যাম করে রাখা হতো। এখন সেটা আলাদাভাবে রাখা হয়েছে। এটা পরিবেশে ছড়াতে না পারে সেভাবে ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। আমাদের কারখানা যখন অডিটে আসে বা বায়াররা যখন আসে তখন এগুলো অনুভব করে যে, আমরা এগুলো পরিবেশ সম্মতভাবে করছি। এগুলো তারা এপ্রিসিয়েট করছে যে, সেইভাবে আমরা প্রডাক্টটটা তৈরি করছি। এটা আমাদের ব্যবসাতে ভালো ইম্প্যাক্ট ক্রিয়েট করছে।
উৎপাদনের ক্ষেত্রে আপনাদের কারখানাতে কোনো পরিবর্তন আনতে পেরেছেন কিনা? ধরুন শ্রমিক ইস্যু এবং আরও যে সব ইস্যু আছে, সেগুলোকে কতটা করতে পেরেছেন?
আমি যখন জয়েন্ড করেছিলাম তখন পুরো সিস্টেমটাই কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো। আমার বাবা ব্যবসাটি দেখতেন। বাবাকে কেন্দ্র করেই পুরো উৎপাদন ব্যবস্থা আবর্তিত হতো। সেন্ট্রালাইজের কারণে যেটা হতো কাউকে জবাবদিহি করতে হতো না। যে যখন তার কাজটি করছে তাকে দায়িত্ব দিয়ে দেবেন, তখন সেই কাজটি আরও ভালোভাবে করবে। এটা যদি বিকেন্দ্রীয়করণ করা যায় ব্যবসাটা ততটা গ্রো হয়। আমাদের ফ্যাক্টরিতে আমি যেটা করতে পেরেছি সেটা হলো কারখানার মিড লেভেল ম্যানেজমেন্ট আছে, নর্মালি স্টাফ আছে, যে যার জায়গাতে পুরোপুরি ইনডিপেন্ড। যাতে তাদের কাজটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে করে। এবং তারা দায়বদ্ধ থাকে।
আমরা কারখানাতে একটি কেপিআই ক্রিয়েট করেছি। যখন যে তার কাজটি ভালোভাবে করছে তার জন্য সে একটা এপ্রেজাল পাচ্ছে। যদি ভালোভাবে না করে তাহলে তার উল্টোও আছে। এটা একটা ইস্যু, আমাদের কারখানাতে এটা করেছি।
তারপর প্রডাকশনের ক্ষেত্রে, কোয়ালিটির ক্ষেত্রে- ডিজিটাল যতগুলো সিস্টেম আছে বড় ধরনের বিনিয়োগ করে এই সফ্টওয়্যারগুলো কিনেছি। এগুলো থাকার কারণে আমার জন্য আমি এক জায়গায় বসে সব দেখতে পাচ্ছি। দেশের বাইরে থেকেও আমি ইচ্ছা করলে দেখতে পাচ্ছি- আমার প্রডাকশন কত হচ্ছে, ব্যাংকের কি অবস্থা। এগুলো আমরা আনতে পেরেছি।
আগে আমাদের ফ্যাক্টরিতে যেটা হতো একেবারে গতানুগতিক। আগে যে শার্টগুলো চলত সেখানে ওই একই শার্ট চলত। এখন যেটা করেছি মাল্টি স্কিল্ড অপারেটর নিয়ে মাল্টি প্রডাক্ট করছি। শার্টের পাশাপাশি লাইট ব্লেজার, বেটি টস, বটম- এ ধরনের মাল্টি প্রডাক্ট নিয়ে আসছি। এর ফলে হয়েছে কি শার্টের ক্ষেত্রে যদি একটু ডাউন থাকে, তাহলে অন্য ক্ষেত্রে অর্ডার আসছে। আগে অফ-সিজন সিচ্যুয়েশনে যে ঝুঁকি থাকত এখন মাল্টি স্কিল্ড প্রডাক্ট ও মাল্টি প্রডাক্ট থাকার কারণে সে ইস্যুটা আর থাকে না। এটা যে কারণে হয়েছে তা হলো প্রথমত, ডিজিটাল ব্যবস্থা গ্রহন করা। দ্বিতীয়টি হলো-মাল্টি প্রডাক্ট ও মাল্টি স্কিল্ড অপারেটর এবং তৃতীয়টি, ডিসেন্ট্রালাইজ্ড করা।
আপনি আপনার কারখানায় উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পেরেছেন। পুরো শিল্পের প্রেক্ষিতে যদি বলি আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে আছি। আপনি আপনার কারখানাতে যেটা করতে পেরেছেন সেটা কাক্সিক্ষত উৎপাদনশীলতার কতটা কাছাকাছি। পুরো শিল্পের উৎপাদনশীলতা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিতে আর কতটা সময় লাগতে পারে?
গত ১০ বছরের কথা যদি চিন্তা করি তাহলে বলব আমাদের অপারেটররা বেশ দক্ষতা দেখিয়েছে। আমাদের অপারেটরদের শেখার ইচ্ছা আছে। আপনি সঠিকভাবে দেখিয়ে দেন, সঠিকভাবে কাউন্সিলিং করেন, সঠিক ট্রেনিং দেন- সর্বোচ্চটা দেবে। অপারেটর গুরুত্বপূর্ণ। যে মানুষটি কাজ করছেন তার জন্য প্রয়োজন প্রপার ট্রেনিং, কাউন্সিলিং। চায়না বলেন, ভিয়েতনাম বলেন বা অন্য কোনো দেশের কথা বলেন, সেখানে যেটা হচ্ছে চীন মেশিন মেকার। তাদের কাছে থেকে যখন কোনো কারখানা মেশিন নিচ্ছে তখন তাদের টেকনিশিয়ানদের কারখানায় নিতে পারছে। ফল হচ্ছে তারা ওই কারখানাতে গিয়ে অপারেটরদের শিখিযে দিতে পারছে- তোমরা এভাবে কাজ করো তাহলে তোমাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। আমাদের এখানে সেটা হচ্ছে না। আমরা যখন কোনো নতুন মেশিন আমদানি করছি আমাদের সুপারভাইজাররা দেখতে দেখতে শিখছে। পুরোপুরি শিখতে হয়তো পাঁচ বছর লেগে যায়। ফলে আমাদের এখানে ট্রায়াল অ্যান্ড এ্যারোর হয়। চীন বা ভিয়েতনামের এ সুবিধাটা থাকার কারণে ওখানকার শ্রমিকদের ট্রেনিংটা ভালো হয়। আমাদের দেশের মেশিন আনার সঙ্গে সঙ্গে যদি তাদের টেকনিশিয়ানদের এনে অপারেটরদের টেনিং দিতে পারি তাহলে সেই অপচয়টা কম হবে। গত ১০ বছরে আমি যেটা দেখছি সেই অপচয়টা আস্তে আস্তে কমে আসছে।
এখন আমরা যখন কোনো মেশিন ক্রয় করছি তখন ওদের বলে দিচ্ছি আমরা মেশিন কিনব, মেশিন কিভাবে চালাব আমাদের সুপারভাইজার, টেকনিশিয়ানকে ট্রেনিং দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ভালো মেশিনের জন্য প্রপার ট্রেনিং ও কাউন্সিলিং প্রয়োজন। এ জন্য অবশ্যই শ্রমিকের শিক্ষারও দরকার। আগে সে সমস্যা ছিল, এখন সেটা প্রায় কমে আসছে।
তারা শিক্ষিত হওয়ার কারণে ট্রেনিং দেওয়ার কারণে দ্রুত শিখছে। শিক্ষা, মেশিন এবং ট্রেনিং যদি আমরা সঠিকভাবে দিতে পারি তাহলে আমাদের উৎপাদনশীলতা আন্তর্জাতিক মানের দ্রুতই হবে ইনশাআল্লাহ।
এই যে পথ, পদ্ধতি ও অগ্রসরতার কথা বলছেন কিছু ফ্যাক্টরি তো ইতোমধ্যে করেছে। আপনার ফ্যাক্টরিতে যেমন করেছেন বলছেন?
আমাদের অনেক কারখানা এগুলো ফোকাস করছে। এজন্য তারা বড় ধরনের বিনিয়োগ করেছে। বলতে পারেন ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদের ঋণ নিয়ে তারা এই কাজগুলো করছে। আগে এমন কারখানা একটা, দুটো ছিল। এখন শতাধিক কারখানা এমন হয়ে গেছে। আধুনিক কারখানা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এ ধরনের হাজারো কারখানা হয়ে যাবে। আমাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের যে লক্ষ্য-অভীষ্ট আছে সেখানে পৌঁছাতে হলে এটা করতেই হবে।
তৈরি পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ কি দেখছেন?
উত্তর : আমাদের আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ হলো পোর্ট, এটা এক নম্বর। এই পোর্ট আমাদের আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন ধরুন, আগে প্রডাকশনে একশ’ বিশ থেকে একশ’ ত্রিশ দিন, একশ’ চল্লিশ দিন পর্যন্ত সময় পেতাম। এখন বায়াররা ৯০ দিনের বেশি সময় দিতে চায় না। পোর্ট যদি ইফিসিয়েন্ট না হয় তাহলে খুবই সমস্যা হবে। একটি উদহারণ দিই, একটি ফেবরিক ২০ দিন পোর্টে এসে পড়ে আছে, ছাড়াতে পারিনি। বিজিএমইএ-তে ফোন করে, এটা করে ওটা করে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। বায়ার তো এগুলো বুঝতে চাইবে না। পোর্ট এভাবে সার্ভিস দিলে এটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। পোর্টকে খুবই অর্গানাইজড হতে হবে, অটোমেটেড হতে হবে। যাতে তাড়াতাড়ি রিলিজড করা যায়, এটা ফোকাস থাকতে হবে।
দ্বিতীয়ত, কাস্টম রিলেটেড যে ইস্যুগুলো আছে নতুন নতুন এইচএস কোড, ফেবরিক আনার ক্ষেত্রে জটিলতাগুলো দূর করতে হবে; যদিও কাস্টম খুবই সহযোগিতা করে। তারপর এয়ারপোর্টে সমস্যা আছে। এত বড় বিলিয়ন ডলারের শিল্প কিন্তু পোর্টে আমাদের শেল্টার নেই। বৃষ্টি হচ্ছে, ভিজে যাচ্ছে, লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হচ্ছে এগুলো কারও ভ্রুক্ষেপই নেই। আমরা সময়মতো শিপমেন্ট দিতে পারছি না, ক্ষতি গুনছি। অনেক সময় বায়ারও চলে যাচ্ছে। এতে কারও যেন মাথাব্যথা নেই।
বিলিয়ন ডলারে শিল্প এটা। এটাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিশেষায়িত ব্যাংকের দরকার আছে।
পুরো ব্যাংকিং খাতই বলা যায় তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসা পেতে চায়। একটি বিশেষায়িত ব্যাংক করলে তো এই যে ৫০/৬০টা ব্যাংক আছে, পুরো ব্যাংক খাতই তো বসে যাবে?
এর মধ্যে থেকেও ১০টি ব্যাংকে বেছে নেওয়া যেতে পারে। যারা কর্মীদের তৈরি পোশাক শিল্পের উপযোগী করে প্রস্তুত করবে। একটি বিশেষায়িত ব্যাংক যদি হয় তাহলে তৈরি পোশাক শিল্পের চাহিদার নিরিখে সেবার ধরন নির্ধারণ করবে।
এরকম একটি প্রস্তাব বিজিএমইএ থেকে এসেছিলও। যে ব্যাংকটির পুরো সেটাপই তৈরি করবে তৈরি পোশাক শিল্পের উপযোগী সেবা দেওয়ার জন্য। সেটা ব্রাঞ্চ পর্যায়ের সেবার কথা বলি, মিড লেভেল ম্যানেজমেন্টর কথা বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার কথাই বলি তা তৈরি হবে তৈরি পোশাক শিল্পের উপযোগী করে। নতুন প্রজন্ম চায় আধুনিক ব্যাংকিং সেবা। উপযোগি সেবা আমরা প্রচলিত ব্যাংককিং ধারাতে পাচ্ছি না।
বেতন ইস্যু ছাড়াও শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে অনেকগুলো ইস্যু কাজ করে। করোনার মধ্যে তো একটি অ্যাবনর্মাল পরিস্থিতি রয়েছে। ছুটি নিয়ে আবারও তৈরি পোশাক শিল্প আলোচনায় এসেছে। তৈরি পোশাক শিল্পে ট্রেড ইউনিয়নের প্রশ্নে পক্ষে বিপক্ষে কথা আছে, এ ব্যাপারে কি বলবেন?
কোভিডের মধ্যে শ্রমিকদের বাড়ি যাওয়া বা আসার ব্যাপারে আমি কথা বলব। দুটি ঈদে শ্রমিকরা ছুটি পায়। তারা যে কোনোভাবেই হোক বাড়ি যাবে। আমরা যতই বলি তারা যাবে না, যতই বলি তোমরা যেও না। তারা যাবেই। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ করতে গ্রামে যাবেই। তাহলে বলতে পারেন ওরা এভাবে গেল, এভাবে এলো- আপনারা কি করলেন। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা বলার দরকার ছিল সরকারকে আমরা বলেছি। সরকারের বাইরে তো আমরা কাজ করতে পারব না! কখন লকডাউন হবে, কখন হবে না- এটা কিন্তু বলা যাবে না। করোনা মহামারীর মধ্যে এটা থাকবেই কারণ এটা আমরা জানি না এবং আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কিন্তু যেটা হতে পারত ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলে দেওয়া হলো, তার আগের দিন গণপরিবহনও খুলে দেওয়ার ঘোষণা করা যেত। তাহলে শ্রমিকরা ঠিকভাবে কর্মস্থলে সুন্দরভাবে আসতে পারত। গণপরিবহন না থাকার কারণে তারা যেভাবে আসছে- ওটাও কাম্য নয়। এটা আমাদেরও ভালো লাগেনি।
ট্রেড ইউনিয়নের যে বিষয়টির কথা বললেন এটা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে আধুনিক ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম হতে হবে। সেটা আমাদের এখানে নেই। এ কারণে ট্রেড ইউনিয়ন নিয়ে উদ্যোক্তাদের নেতিবাচক মনোভাব আছে। যেমন ধরুন প্রতিবেশি পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতাতে অনেক শিল্প কারখানা ছিল। কিন্তু যেখানে অবাধে ট্রেড ইউনিয়ন শুরু করল, এখন কিন্তু সেখানে আগের সেই শিল্প কারখানা নেই। উপমহাদেশে ট্রেড ইউনিয়নের যে ধারণা সেই ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমের সঙ্গে যারা থাকে তারা পেশাগত অধিকারের বাইরে অন্য কিছু পাওয়ার জন্য দাবি করে বলেই কনফ্লিট তৈরি হয়।
শ্রমিক তো চাকরি হারাইই। আর শ্রমিক না থাকলে মালিক কিভাবে শিল্প চালাবে। সর্বোপরি বলব আমাদের দেশে ওই পরিস্থিতি আসেনি ট্রেড ইউনিয়ন করার। এখন পর্যন্ত ট্রেড ইউয়িন করতে দেওয়ার সময় হয়নি। কারণ ট্রেড ইউনিয়ন করতে দিলে অনেক বাজে পরিস্থিতি হয়। যা আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা আছে। কারণ ট্রেড ইউনিয়নের যারা লিডার থাকে তারা স্বার্থসিদ্ধির জন্য পুরো শিল্পটাকে বিপদের মধ্যে ফেলে দেয়।
তাহলে নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারা কর্মী ব্যবস্থা কিভাবে করছে ?
আমাদের কারখানাতে ওয়ার্কার্স পার্টিসিপেটারি কমিটি আছে। তাদের সঙ্গে আমাদের একটি মাসিক বৈঠক হয়। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে ওই বৈঠকে তারা বলে, স্যার আমাদের এই সমস্যা হচ্ছে। এটা কিন্তু হচ্ছে। এটা একটি কন্টিনিউ প্রসেস। প্রত্যেকটা কারখানাতে মাইক্রো আকারে এই পার্টিসিপেটারি কমিটি আছে। শ্রমিকদের অধিকারের প্রশ্নে পার্টিসিপেশন কমিটিই কিন্তু অ্যানাফ।
তৈরি পোশাক শিল্প এখন আমাদের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। এই খাতের নেতারা এখন রাজনীতিতে সক্রিয়। সরকার পরিচালনাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। বিজিএমইএ-এর গত নির্বাচনে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছিল। নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তা হিসাবে আপনি বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
একজন উদ্যোক্তা যখন রাজনীতিতে যাচ্ছে, এটাকে আমি একটি ভালো দিক বলব, সাধুবাদ জানাই। দেখেন, আমাদের আনিসুল হক একজন আপাতমস্তক ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি মেয়র হয়েছিলেন। মেয়র হয়ে তিনি ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ বলেন, বিএনপি বলেন- সবার কাছে পছন্দের মেয়র ছিলেন। একজন ব্যবসায়ী ম্যানপাওয়ার হ্যান্ডেল করে আসছেন। সে জানে মানুষকে কিভাবে হ্যান্ডেল করতে হয়।
একজন সফল শিল্প উদ্যোক্তা হিসাবে সে জানে কিভাবে ব্যাংকিং সেক্টর চালাতে হয়, সে মানুষকে মোটিভেড করে সফলতা পেয়েছে। সে একইভাবে রাজনীতিতে সফলতা পেয়েছে। ব্যবসাতে যে মাইক্রো আকারে করেছে, রাজনীতিতে এসেছে আরও বড় পরিসরে করার সুযোগ পাচ্ছে, ভালো করছে, জনগণের জন্য কাজ করছে।
সব শেষে কি বলবেন?
আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প এখনো সম্ভাবনাময়। এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যখন যে সহযোগিতা দেওয়ার প্রয়োজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই শিল্পকে সাপোর্ট দিচ্ছে। আমি চাই এই সাপোর্ট অব্যাহত থাকুক, আমরা ইনশাআল্লাহ কাক্সিক্ষত জায়গায় পৌঁছে যাব।