ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ | ৫ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েই সাফল্যে পৌঁছেছি

ড. কাজল রশীদ শাহীন
🕐 ১:৪৯ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৫, ২০১৯

দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে উজ্জ্বলতম নাম আজিম উদ্দিন আহমেদ। শিক্ষার প্রসার এবং সমাজসেবায় তার অবদান কিংবদন্তীতুল্য। নিজ গ্রামে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠার পিছনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ফেনীর গ্রামের বাড়িতে বসে তার সাফল্য আর স্বপ্ন নিয়ে কথা হয় ড. কাজল রশীদ শাহীনের সঙ্গে-

এ পর্যন্ত পাঁচশ শিল্পকারখানা তৈরি করতে পেরেছি। তার মধ্যে যে কয়েকটা বিফল হবে না, এটা কোনো যুক্তির কথা না। সর্বোপরি যদি আমরা দেখতে যাই- অর্থনৈতিক অবকাঠামো এবং আজকের যে রপ্তানি; এখানে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের বিরাট অবদান রয়েছে

কেমন আছেন?
জি, আলহামদুলিল্লাহ।

এই বয়সেও এত কষ্ট করে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন...
এটা নাড়ির টান। বলা হয়, মানুষ নাড়ির টানকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করতে পারে না। এটা আমার জন্মস্থান। এটাকে তো আমি কোনোভাবেই ভুলতে পারব না। সুতরাং আমি বারবার আসব।

অনেক কিছুই তো করলেন। জন্মস্থানের জন্য আর কী করতে চান?
এখানে একটা কিন্ডারগার্টেন করেছি। বাবা করেছিলেন প্রাইমারি স্কুল। হাইস্কুল করেছেন। আমার নামে নামকরণ করে মাদরাসাও করে দিয়েছেন। অথচ তিনি তার নিজের নামে কিছুই করেননি। সবই আমাদের নামে করেছেন। তিনি ছিলেন অনেক বড় সমাজসেবক।
ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, গ্রামের জন্য কিছু করব।
এই অঞ্চলটা খুবই অনুন্নত ছিল। এখানকার আরেকটা হাইস্কুলকে আমি প্রমোট করেছি, আমার সাহায্য-সহযোগিতার কারণেই সেই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা পেরেছে। তারপর আব্বা যখন প্রস্তাব করলেন এই স্কুলটি (বাথানিয়া দুলুমা আজিম উচ্চ বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করার জন্য তখন তার আদেশ হিসেবে এটাও করলাম।
শিক্ষার প্রতি বাবার এই অনুরাগের কারণ, তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রশাসক।

আপনার এই যে এত অর্জন-শিল্পব্যক্তিত্ব, উদ্যোক্তা, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক; এত সাফল্যের মূলমন্ত্র কী?
আমি মনে করি, এসবের পিছনে আছে একটা সৎ পরিকল্পনা। আমার সব সময় একটা পরিকল্পনা ছিল, শিক্ষা উন্নয়নে কিছু করব। শিল্প উন্নয়ন আমার ভাগ্যে হয়েছে। স্টিল মিল করেছি, জুট মিল করেছি। এখন বিশ্ববিখ্যাত দুই কোম্পানি-ইউনিলিভার এবং আরলা ফুডস আমার জয়েন্ট পার্টনার।
বাংলাদেশে দুইটা শিল্প স্থাপন করেছি। এরপরে আমার উদ্দেশ্য হলো, আমার গ্রামটাকে আলোকিত করা, উজ্জ্বল করা। সেই উদ্দেশ্য নিয়েই আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো করেছি। কিন্ডারগার্ডেন, স্কুল, হাইস্কুল, মাদ্রাসা-একটা জায়গায় এতগুলো প্রতিষ্ঠানের কমপ্লেক্স আমাদের এই অঞ্চলে বোধহয় কম আছে।

আপনি তো ব্যাংকখাতের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। সেখানে আপনার অবদান আছে। এই খাতটিতে এখন যে অস্থিরতা, তা নিয়ে আপনার মতামত জানতে চাই...
আমি ব্যাংকের উদ্যেক্তা। আমার স্ত্রীও উদ্যোক্তা। আমার পুরো পরিবারই সাউথইস্ট ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালক। আমি এবং আমার স্ত্রী এখন সেই ব্যাংকে আছি। আমি ডাইরেক্টর হিসেবে, আমার স্ত্রী ভাইস চেয়ারপার্সন হিসেবে নিয়োজিত আছেন। আমার মত হলো, দেশকে শিল্পায়িত করতে হবে। অর্থনৈতিক অবকাঠামোকে মজবুত করতে হলে ব্যাংকিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
সে জন্যই আমরা ব্যাংক করেছি। আমি মনে করি, এটা করাতে আমরা কয়েক হাজার শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পেরেছি। আমরা তা গর্ব করে বলতে পারব।

কিন্তু ব্যাংকখাত নিয়ে তো মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। টাকা-পয়সা সেখান থেকে হাওয়া হয়ে যায়। প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা নিয়েও। সেসব জায়গায় আপনার কোনো সাজেশন আছে?
সব দেশেই ব্যাংকিং খাতে এমন একটু কিছু হয়। কারণ ল্যান্ডিং বিজনেসটা একটা এক্সপেক্টেশনের ওপর নির্ভর করে।
আমরা এখানে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে নতুন শিল্পোদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করেছি। এই পর্যন্ত প্রায় পাঁচশ শিল্পকারখানা তৈরি করতে পেরেছি আমরা। তার মধ্যে যে কয়েকটা বিফল হবে না, এটা কোনো যুক্তির কথা না। সর্বোপরি যদি আমরা দেখতে যাই-অর্থনৈতিক অবকাঠামো এবং আজকের যে রপ্তানি; এখানে আমাদের ব্যাংকিং সেক্টরের বিরাট অবদান রয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগের কথা বলা হয়, বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়। কিন্তু আমরা কি আসলে ব্যবসাবান্ধব অবস্থার দিকে এগুচ্ছি নাকি ব্যবসাবিবর্জিত পরিস্থিতির দিকে এগুচ্ছি?
আমি বলব, যেখানেই ব্যবসা করার সুযোগ থাকে, সেখানেই ব্যবসায়ীরা আসে। আমাদের এখানে যথেষ্ট সুযোগ আছে। সরকার শিল্পাঞ্চল গড়ে দিচ্ছে। সব অবকাঠামো নির্মাণ করে দিচ্ছে। এমন অবকাঠামো থাকলে একজন এন্টারপ্রেইনার অবশ্যই ভালো করবে। যদি বিদেশি কেউ হয় তাহলে আমাদের স্থানীয় কারও সাহায্য নিয়ে হোক বা নিজ উদ্যোগেই হোক, এখানে সে শিল্পানুকূল পরিবেশ পাবে। এই যে অবস্থা, এর পিছনে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকাটা অনেক বেশি।

আমাদের দেশি উদ্যোক্তারাও তো অভিযোগ করে থাকে, ব্যবসা করতে গেলে তারা নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। সে কারণে নতুন উদ্যেক্তারা উৎসাহটা হারিয়ে ফেলে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
আমরা এদেশে প্রথম জেনারেশনের ব্যবসায়ী। এটা ঠিক, ব্যবসা করতে গিয়ে আমরা তুলনামূলক কম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছি। আমরা শুরু করেছি শূন্য থেকে। জন্মগতভাবে কিছু পাইনি। হাঁটি হাঁটি পা পা করেই ইন্টারপ্রেইনার হয়েছি। সুতরাং সেখানে দু-একটা ভুল তো হবেই। আর ব্যাংকখাত নিয়ে আপনি একটু আগে যা বললেন, আমি তার সাথে কিছুটা একমত। ব্যাংকিং খাত কিছু ভুল হয়তো করেছে। তবে সার্বিকভাবে যদি খাতটা দেখেন, তা হলে খুব বেশি ভুল করেনি। তারা অনেক শিল্প-কারখানা তৈরি করতে পেরেছে।

একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হয়ে উঠার পেছনে আপনার কি কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে? যা শুনে অন্যরাও সতর্ক হবে, অনুপ্রেরণা পাবে, উৎসাহিত হবে...
সত্তর দশকে আমরা যখন শিল্পকারখানা করলাম, তখন এখানে দেদার জ্বালাও পোড়াও চলছে। এর মধ্যেই আমরা জুট মিল করলাম। সেভেন্টি এইটে অপারেশনে গেলাম, সেভেন্টি নাইনে করলাম স্টিল মিল। দুটো সময়ই ছিল লেবার নিয়ে সমস্যা হওয়ার সময়। সে সময় যে কী পরিমাণ লেবার প্রবলেম আমরা ফেস করেছি তা বলাই বাহুল্য। সেভেন্টি নাইন থেকে এইটি ওয়ান পর্যন্ত আমরা অনেক কষ্ট করেছি। এটা হয়েছে আমাদের কিছু সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য। আরেকটা বিষয় হলো, লেবার অরিয়েনটেশনটা আমাদের দেশে হয়নি। যার জন্য তারাও কিছু ভুল করেছে।

লেবারদের কি ভুল অরিয়েন্টেশন আছে?
সেই সময় মাঝে মাঝে তেমনটা ঘটেছে। এখন কিন্তু আবার হচ্ছে না বলেই মনে হয়। শিল্পবান্ধব পরিবেশ যদি সৃষ্টি করতে হয়, তাহলে আপনার লেবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ তাদের যে প্রয়োজন আছে, তা মিটিয়ে আমার শিল্পকারখানা চালাতে হবে। অন্যথায় আপনি সফল হতে পারবেন না।

আপনি তো মূলত ব্যবসায়ী, তারপর শিক্ষানুরাগী। তো শিক্ষার দিকে ঝোঁকটা এলো কীভাবে?
আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন, ভাই শিক্ষক ছিলেন। আমার পরিবার তো শিক্ষকের পরিবার।

তাহলে আপনারও তো শিক্ষক হওয়ার কথা ছিল। ব্যাবসায় এলেন কেন?
১৯৬৪ সালে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আমি সিএসএস পরীক্ষা দিই। তখন হঠাৎ একদিন আমাকে একজন বলল, ‘চাকরি কর না। তোমার পোস্টিং হলে করাচি হবে। বরং তুমি ব্যবসা করো। বাকিটা আল্লাহর রহমত।’ তিনি আমাকে সাহায্য করলেন, তার উদ্দীপনাই আমাকে বাসায় এনেছে।

তার আগে আপনার পরিবারে কোন ব্যবসায়ী ছিলেন না?
বাবার আড়ত ছিল এখানে। আমাদের বাড়ির পাশে সিলোনিয়া নদী। নদীঘেঁষা বাজারেই ছিল নৌবন্দর। এখান থেকে সরাসরি ঢাকায় যেত নৌকা। চট্টগ্রাম থেকে গরুর গাড়িতে ধুমঘাটে মাল আসতো। সেই মাল নৌকায় যেতো ঢাকায়। এগুলোকে বলা হতো বালাম নৌকা, দশ-বারো জন মাঝি থাকতেন।

নিজের এলাকায় স্কুল করার পেছনে সমাজ সেবাটা উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তার আগেই ঢাকায় আপনি একটা বিশ্ববিদ্যালয় (নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়) করলেন। সেটা করেছিলেন কেন?
আমার কাছে বিশ্বমানের একটা বিশ্ববিদ্যালয় করার প্রস্তাব এলো। তখন বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো অ্যাক্ট নেই, এ বিষয়ে সরকারের কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা তখন পরিকল্পনা করলাম। আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে কিছু টাকা জোগাড় করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম একটা বিশ্ববিদ্যালয় করার। নিজেদের চেষ্টার পর সরকারও আমাদের আবেদনে সাড়া দিল। বিশ^বিদ্যালয়ের অনুমতি পেয়ে গেলাম। শুরু করলাম ৫০০ শিক্ষার্থী নিয়ে। আজকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫ হাজার।

অনেকেই বলেন, আজিম সাহেবের হাতে জাদু আছে। উনি যেই জায়গায় হাত দেন, সেই জায়গায় সোনা ফলে যায়...
সবই আল্লাহর রহমত। আমার এই দুইটা যৌথ উদ্যোগই দেখেন-হরলিক্স এবং ডানো। অনেক জরপ্রিয় এবং জনহিতৈষী জিনিস। এর সাথে আল্লাহ আমাকে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। আজকে আপনার সামনেই তো এখানে বিদেশিরা স্বীকার করে গেল, আজিম ইজ আওয়ার রিয়েল পার্টনার ইন বাংলাদেশ।

এটার সঙ্গে যোগসূত্রটা কীভাবে হয়েছিল?
আমার ছাত্রজীবন কেটেছে চট্টগ্রামে। সেখানে দেখলাম, আমাদের ফেনীর লোকরা ইমপোর্ট-এক্সপোর্টের ব্যবসা করে। তখন তাদের কিছু সাহায্য করতে গিয়ে পরিচয় শুরু। তারা আমার হোস্টেলে যেতো। এই ফাঁকে আমি তখন একটু শিখে ফেললাম। শিখে আমিও আমার পরিবারের নামে কয়েকটা লাইসেন্স করলাম। এরপর আমি ঢাকা চলে যাই। হঠাৎ করেই পরিচয় হলো এক ব্যাংকারের সঙ্গে। তখন আমি জানতে পারলাম, আমার এই লাইসেন্সের অনেক মূল্য আছে। খুব বেশি না ভেবে আমার যে কার্যক্রম তা গ্রহণ করলাম। মূলধনও জোগাড় হয়ে গেল।

মুক্তিযুদ্ধের আগেই আপনি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন?
আমি ১৯৬২ সাল থেকে ব্যবসা করি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছি ৬৮-তে এসে।

মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয়েছিল আপনার?
১৯৬১ সালেই বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় তার ৩২ নম্বরের বাড়িতে। আমি তখন ছাত্রলীগ করতাম। পড়তাম চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তখনো হয়নি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্ডারে সেটা ছিল কলেজ হিসেবে। আমার এক বড় ভাই, পরবর্তীতে আমার বিজনেস পার্টনার হয়েছিল। তার সাথেই গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে। তবে একাত্তরে আমার মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার সুযোগ হয়নি। আমার ছোট ছেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়াতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলো।

ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন?
হ্যাঁ, সক্রিয় ছিলাম। আমি, মান্নান, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী-আমরা একসঙ্গে চট্টগ্রামে রাজনীতি করেছি।

পরিবারের উত্তর প্রজন্মের মধ্যে আপনার গুণাবলি কেমন সঞ্চারিত হয়েছে?
আমার মেয়ের কথা তো আজ শুনলেন, ছেলেকে শুনলে আরো ভালো হতো। তারা ব্যবসা করার কথা বলে বটে কিন্তু সেভাবে এখনো সম্পৃক্ত হয়নি। তারা কিছু করছে না তা কিন্তু নয়। আমার মেয়ের আলাদা ব্যবসা আছে, ছেলেরও আলাদা ব্যবসা আছে। কিন্তু বাবার যে ব্যবসা, সেখানে তাদের তেমন কোনো ভূমিকা নেই।

তাহলে এত উদ্যোগের কী হবে? নিশ্চয়ই অটো রান করবে না?
অটো রান করবে না। করপোরেট পার্টনাররা ভেরি সেন্সিটিভ। আমাকে যে রেসপেক্ট তারা করে, আমার মনে হয়, আমার পরবর্তী জেনারেশনকে তারা সেই রেসপেক্ট করবে না। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে এর সমাধান কী? আমি বলি, যতদিন এভাবে চলে। আমার ফ্যাক্টরি আছে, ইনফ্রাসটাকচার আছে, লজিস্টিক সাপোর্ট আছে।

আপনার ছেলেমেয়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই যে এতো ছেলেমেয়ে আপনার, তাদের উদ্দেশে যদি কোনো উপদেশ দিতে হয়...
কর্মঠ হও। সে যেন তার প্রফেশনটা চুজ না করে বরং যা করছে তার উপর ভালোভাবে নজর দেয়। আশা করা যায়, তাহলেই সে ভালো করবে।

ব্যবসায়ীদের দাম্পত্য জীবন কেমন হয়?
পারসন টু পারসন এই প্রশ্নের উত্তর ভিন্ন। ব্যবসায়ীরা একটু বেশি ব্যস্ত থাকে, পরিবারে নিশ্চয়ই এ নিয়ে প্রশ্ন থাকে। সেভেন্টি টু থেকে নাইনটি ওয়ান পর্যন্ত আমি বছরের ছয় মাস বিদেশে থাকতাম। আমার পরিবার নিশ্চয়ই আমার অনুপস্থিতি কিছুটা হলেও ফিল করেছে। সে জন্য ব্যবসায়ীদের পরিবারকে একটু সেক্রিফাইস করতে হয়।

ব্যবসার জন্য আমাদের সমাজ, পরিবার, রাষ্ট্র কতটা ইতিবাচক?
আমাদের নীতি সব সময় ইতিবাচক। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে কোনো কোনো সময় আমাদের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়। সব প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়েই আমাকে সাফল্যে সোপানে পৌঁছতে হয়েছে।

আপনার আর কোনো স্বপ্ন আছে?
না, ওরকম কোনো স্বপ্ন আমার নেই। যেহেতু বয়স হয়েছে তাই চলমান প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও সুন্দরভাবে চালু রাখাই আমার চ্যালেঞ্জ। এরপর আমার পরের প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে এগুলো তাদের হাতে তুলে দিতে চাই।

আপনার নিজে থেকে কিছু বলার থাকলে...
আমার একটা অত্যন্ত সহজ উপদেশ থাকবে, জীবনে কোনো প্রতিবন্ধকতাকে প্রতিবন্ধকতা না মনে করে সেটাকে উপরে ওঠার সিঁড়ি মনে করে কেউ যদি অগ্রসর হয়, তাহলে সে সাফল্য অর্জন করতে পারবে।

আপনি কি নিয়মিত লাইব্রেরি ওয়ার্ক করেন? পড়াশোনার মধ্যে থাকেন?
না, আমি অত লাইব্রেরি ওয়ার্ক করি না। যেহেতু আমাকে সারা দিনই কাজ করতে হয়, তাই সে সুযোগও নেই। তবে মাসে আমাকে আট-দশটা বক্তৃতা দিতে হয়, তার জন্য একটু চর্চা করি। আলহামদুলিল্লাহ, আপনাদের দোয়ায় আমি ছাত্র থাকা অবস্থায় বিতর্কে কোনো দিন সেকেন্ড হতাম না। তাই হয়তো এখনো একটু গুছিয়ে কথা বলতে পারি।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
খোলা কাগজ পরিবারের জন্য শুভকামনা।

 
Electronic Paper