ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ | ৭ বৈশাখ ১৪৩১

Khola Kagoj BD
Khule Dey Apnar chokh

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন জটিল হয়ে পড়েছে

অধ্যাপক ড. মনোহর শঙ্কর

ইরফান রানা
🕐 ৯:৪১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০১৯

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘সামাজিক অস্থিরতা, শান্তি এবং উন্নয়ন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়া আটটি দেশের শতাধিক গবেষকের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক জোট (আইসিএসডি)-র সভাপতি ও অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টুয়ার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোহর শঙ্কর। খোলা কাগজের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন দেশে দেশে সামাজিক অস্থিরতা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ও কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইরফান রানা

দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান সামাজিক অশান্তির বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
সামাজিক অশান্তি, শান্তি ও উন্নয়ন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিয়ানমার, ভারত, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, ফিলিপাইনসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সামাজিক অশান্তি বিদ্যমান। অশান্তির পেছনে রয়েছে নানা কারণ তবে মোটাদাগে জাতিগত দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণে সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। যদিও ২০১৯ সালের পারিসংখ্যানে বাংলাদেশকে অশান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের ১৯৫০, ১৯৭০ সালের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলো শুধু কথা বলে যাচ্ছে। কীভাবে বাংলাদেশ এ সংকট সমাধান করবে?
১৭ লাখ রোহিঙ্গা অনেক বড় সংখ্যা। যার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত ছিল না। এটা একটা জটিল সমস্যা। কোনো পরিকল্পনা না থাকার কারণে বিষয়টা বাংলাদেশের জন্য এক ধরনের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। মানবিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিলেও দেখাশোনা করতে বাধ্য হয়েছে। একই সময়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জন্য আমেরিকা, ডিএফআইডিসহ বিভিন্ন বিদেশি সহযোগিতাও পেয়েছে। যদিও এ সহযোগিতা পর্যাপ্ত না হওয়ায় তৈরি হয়েছে মানবিক সংকট। এই সমস্যা বাংলাদেশের একার পক্ষে সমাধান করা অসম্ভব, সহযোগিতা প্রয়োজন অন্যান্য সব দেশের। জাতিসংঘের শরণার্থী বিভাগ, আন্তর্জাতিক সচেতন গোষ্ঠী, বিভিন্ন সংগঠন, দাতা গোষ্ঠীর উচিত, বিষয়টিতে গুরুত্ব প্রদান করে সমাধানের পথ বের করা।

সংক্ষিপ্ত সময়ে বিষয়টি সমাধানের আর কোনো সম্ভাব্য পথ...
রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হয়তো সহজ; কিন্তু এর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে গেলেই নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে জাতসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছ থেকে। যদি রোহিঙ্গারা মনে করে, দেশে ফিরে গেলে পুনরায় নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হবে বা সহিংসতার মাত্রা ক্ষতিকর পর্যায়ে যেতে পারে তাহলে প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তা ছাড়া যদি অন্য দেশ এই সমস্যা সমাধানের সক্রিয় ইচ্ছা পোষণ না করে তাহলেও সমস্যা সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়বে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী, বহুজাতিক সংস্থাকে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে অভিবাসীদের নিয়ে।

কিন্তু শক্তিশালী দেশগুলো তো এগিয়ে আসছে না...
আমরা সিরিয়া, আফগানস্তান, তুরস্ক ও কাশ্মীরের দিকে তাকাতে পারি। শুধু জার্মানিই অভিবাসীদের গ্রহণে উৎসাহ দেখিয়েছে। তাদের সহ্য করার মহান ক্ষমতা আছে। সারা বিশ্বেই বর্তমানে ৬৮ মিলিয়ন অভিবাসী ক্যাম্প রয়েছে এবং কোনো দেশই অস্ত্র নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে না।

সুতরাং এটা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যা। আমি নির্দিষ্ট কোনো দেশকে এ সংকটের জন্য দায়ী করব না। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু এই জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে বড় শক্তিগুলো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সাহায্যে অশান্তির বীজবপন করে যাচ্ছে...
এটা গভীর আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রশ্ন। হস্তক্ষেপ না করা নীতির বিষয়ে আমাদের ধারণা আছে। পররাষ্ট্র বিষয়ে ভারতের অন্যতম প্রধান নীতি হচ্ছে হস্তক্ষেপ না করার নীতি। তবে চীনের পররাষ্ট্রনীতির বিষয়ে আমার ভালোভাবে জানা নেই।

সামাজিক অস্থিরতা তৈরিতে বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কীভাবে এ মহামারী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
সামাজিক যোগাযোগ কারণে সবাই এক স্থানে দাঁড়িয়ে আছে। বিশ্বের কোথায় কি ঘটছে সারা বিশ্বের লোকজন এর মাধ্যমে সহজে জানতে পারছে। গণতান্ত্রিক সমাজে সবার তথ্য জানার অধিকার আছে। এজন্য আমাদের আধুনিক প্রযুক্তি সহায়তা করছে। ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়। এখানেই নীতি-নৈতিকতার প্রশ্ন ওঠে। এটা প্রতিরোধে সরকারকে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে। এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরিতে এটা কোনো প্রভাব ফেলবে কি?
এটা খুবই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি। ভারত সরকার কীভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সংবিধানের মাধ্যেমে এর সমাধান সম্ভব হবে। কিন্তু আইন এক জিনিস এবং সামাজিক বাস্তবতা ভিন্ন। আমাদের প্রয়োজন তথ্য ও আকৃতির দিকে তাকানো।

সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
ধন্যবাদ খোলা কাগজ পরিবারকেও।

 
Electronic Paper